যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইটের বদলে পাটকেল নিক্ষেপের মতো পরস্পরবিরোধী শুল্কারোপ আভাস দিচ্ছে

আভা ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইটের বদলে পাটকেল নিক্ষেপের মতো পরস্পরবিরোধী শুল্কারোপ আভাস দিচ্ছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশ বাণিজ্য যুদ্ধে নেমে পড়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত যদি তারা নিজেদের বাজার, বিশেষত চীনের বাজার উন্মুক্ত করার জন্য পর্দার অন্তরালে নীরবে আলোচনা চালিয়ে যেত।

চীনের রফতানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট পরিমাণে শুল্কারোপ বা চীন থেকে আমদানি পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের করারোপের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নেয়া অনেকগুলো উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ। যা হোক, জবাবে চীনও আমদানি করা মার্কিন পণ্যে শুল্কারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে আমেরিকায় চীনের বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করে রাখা।

পূর্বানুমান সাপেক্ষে, যদি এমনটি ঘটে তবে চীনও এক ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। অন্য কথায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মাঝের উত্তেজনা শুল্ক ছাপিয়ে যেতে পারে, এমনকি যেভাবে বিনিয়োগকে টার্গেট করা হয়েছে, সেভাবে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনকে এটি সরাসরি ব্যাহত করতে পারে।

বিশ্ব বাণিজ্যের বণ্টন ও সরবরাহ চেইনে যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘদেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে হয়তো তাদের কারখানা বা বণ্টন কেন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে হতে পারে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো চাকরি ও কর্মসংস্থানকে প্রভাবান্বিত করে, ট্যাক্স বাড়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের চেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অথচ এই শুল্ক সংরক্ষণ কিন্তু আরও সহজভাবেও করা যায়।

শুল্ক নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই উত্তেজনা দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ অ্যাপলের মতো বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো দেশ দুটিতেই বিনিয়োগ করে থাকে। এটি যে শুধু মার্কিন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদেরও ভোগাবে এ বাণিজ্য যুদ্ধ। ওয়ালমার্টের মতো খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলো চীন থেকে তাদের পণ্য আমদানি করে থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং জীবনযাত্রার মান নেমে যেতে পারে।

অন্যদিকে যেহেতু মার্কিন পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রয় হয়ে থাকে, সেহেতু মার্কিন কোম্পানিগুলো যদি চীন থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে, তবে ইউরোপসহ বিশ্বের সব দেশের ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একই পরিস্থিতি চীনা ভোক্তা এবং উৎপাদকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, বিশেষত চীনা রফতানির প্রায় অর্ধেকেরই বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রকল্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মেড ইন চায়না-২০২৫ পরিকল্পনা ও চীনা পতাকাবাহী শিল্প কৌশলের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের হাই-টেক উৎপাদকদের লক্ষ্যবস্তু করতে চাচ্ছে। চীনের নতুন শিল্প কৌশল ও মেড ইন চায়না-২০২৫-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আরও বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় উৎপাদনশীলতা কাজে লাগিয়ে চীনের উৎপাদিত পণ্যকে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগী করে তোলা।

চীনের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর জন্য ধনী অর্থনীতিগুলোর নাগাল ধরা নির্ভর করছে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ওপর। সমস্যার মূলে রয়েছে এটিই। যুক্তরাষ্ট্র এসব বাণিজ্য পদক্ষেপ শুরু করেছে বুদ্ধিভিত্তিক পেটেন্ট (স্বত্বাধিকার) সুরক্ষার ক্ষেত্রে চীনের দুর্বল অবস্থানের কারণে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর চীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের প্রযুক্তি পরিবর্তনের শর্ত এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সুতরাং এতে দুই দেশের কোম্পানিগুলোর জন্যই অনেক ঝুঁকির বিষয় রয়েছে। কিন্তু একটি বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রযুক্তি বা দেশটির কোম্পানিগুলোকে ভালো সুরক্ষা দেবে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনকেও এটি কোনো সহায়তা করবে না। চীনের সব সময়ের একটি অভিযোগ হল এর কোম্পানিগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, বিশেষত প্রযুক্তি খাতের।

অথচ নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই খাত তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম খাতের ওপর প্রাথমিক শুল্কারোপের পর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আরও বড় আকারে বাজার উন্মুক্ত করা এবং আরও বেশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। চীনের বাজার খুলে দিলে মার্কিন বাণিজ্যিক অবস্থান উন্নত হতে পারে। সর্বোপরি, ওয়াশিংটনের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি কমতে পারে আমদানি কমানো বা আরও ভালো বিকল্প- রফতানি বাড়ানোর মাধ্যমে।

চীন সম্ভবত নিজের তুলনামূলক বন্ধ বাজার বিদেশি প্রতিযোগিতার জন্য খুলে দিতে অনীহ হতে পারে। বেইজিংয়ের দৃঢ় বিশ্বাস, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রভাব বিস্তারের বিপরীতে নিজেদের শিল্পের সুরক্ষা দরকার। কিন্তু আলীবাবা, হুয়াওয়ে এবং টেনসেন্টের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিছু কোম্পানি চীনের রয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি, বিশেষত যেসব সেক্টরে কম দক্ষতাসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও বেশি প্রতিযোগিতা চীনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তবে যতদূর দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা এবং বাণিজ্য উন্মুক্ত করে দেয়ার চুক্তিতে আসার আগ পর্যন্ত আরও অনেক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা ঘোষিত হতে পারে। এতে করে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও বাড়বে এবং কোনো ফল দৃশ্যমান হবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দেখাশোনাকারী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এরই মধ্যে একে ডিজাস্টার বা বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এমনকি সংস্থাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করেও নিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে করে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ব্যবস্থাই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ যে কোনো মূল্যে এড়াতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর : সাইফুল ইসলাম

লিন্ডা ইউয়েহ : অর্থনীতিবিদ, উপস্থাপক ও লেখক
যুগান্তর

Next Post

চারঘাটের সেই মাদক ব্যাবসায়ী,গুলিবিদ্ধ মালেক রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বৃহস্পতি জুলাই ১২ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চারঘাটে পুলিশের গুলিতে আহত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত আব্দুল মালেক উপজেলার মুক্তারপুর দফাদারপাড়া এলাকার মিনসাদ আলীর ছেলে। গতকাল বিকালে রামেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ স্বজনদের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links