আমাদের এই পৃথিবীতে অসংখ্য প্রানী বাস।

আমাদের এই পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী বসবাস করছে। এদের কেউ বাস করে পানিতে, আবার কেউ বাস করে ডাঙ্গায়। এদের মধ্যে বেশ কিছু প্রাণীকে মানুষ পোষ মানিয়েছে। ব্যবহার করছে নিজ প্রয়োজনে। তবে এদের বেশিরভাগই থেকে গেছে বন-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে, ঘন অরণ্যে, মরু ও মেরু অঞ্চলে। এসব প্রাণীর মাঝে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর প্রাণীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। এ প্রাণীরা নানাভাবে আমাদের মাঝে বিস্ময়ের জন্ম দিতে পারে। সাধারণত এসব প্রাণীর দৈহিক গঠন, বর্ণ, জীবনমান, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে থাকে।

প্রাণীজগতে দৈহিক গঠনহেতু বিস্ময় সৃষ্টিকারী কিছু সৃষ্টি হচ্ছে হাতুড়িমাথা প্রাণীগুলো। সচরাচর হাতুড়িমাথা প্রাণীর নাম শুনলেই হাতুড়িমাথা হাঙ্গরের প্রতিচ্ছবিই চোখের সামনে ভেসে আসে। কিন্তু আজকের লেখায় হাতুড়িমাথা হাঙ্গর ছাড়াও আরও যে সকল পশুপাখির মাথা হাতুড়ির ন্যায় দেখতে সেসব নিয়ে জানাবো।
হাতুড়িমাথা হাঙ্গর

মানবমন প্রতিনিয়ত নানা রকম বিষয়ের প্রতি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকে। তেমনই হাঙ্গরদের সম্পর্কে অধিকতর জানার আগ্রহ প্রকাশ পায় হাতুড়িমাথা হাঙ্গর বা হাতুড়ি হাঙ্গর সম্পর্কে।

হাতুড়িমাথা হাঙ্গরের নয়টি শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। এর মধ্যে চারটি অতি সাধারণ এবং প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে বড় হাতুড়িমাথা, স্ক্যালেপড হাতুড়িমাথা, মসৃণ হাতুড়িমাথা এবং বোনডহেড বা বোনড মাথা হাঙ্গর। বোনডহেড হাঙ্গর ব্যতীত বাকিগুলো মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক হয় না।
হাতুড়ির দু’পাশে চোখ থাকায় দ্বিনেত্র দৃষ্টিপ্রাপ্ত হয় হাতুড়িমাথা হাঙ্গর

হাঙ্গরের আক্রমণের বিষয়ে তেমন ভয়ের কিছু নেই। কারণ হাঙ্গরের খাদ্য তালিকায় মানুষ নেই। এরা সাধারণত মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ, তিমি, সী লায়ন, সীল ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। অপরদিকে হাতুড়িমাথা হাঙ্গর লম্বায় ৩-১৮ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বিশাল শরীর ও পেশীর জন্য প্রচুর চর্বির প্রয়োজন হয়, যা এরা মানবদেহ থেকে পায় না। এক জরিপে জানা যায়, ১৫৮০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩৮ জন ব্যক্তি হাঙ্গর কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ১৬টি আক্রমণ ছিল অনর্থক। অর্থাৎ আক্রমণের কোনো কারণ ছিল না।

হাঙ্গর যদিও মানুষের রক্ত, মাংস খাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখায় না, তবুও কেন তারা মানুষকে আক্রমণ করে তা কিন্তু ভাবার বিষয়। মানুষকে আক্রমণের অধিকাংশ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এরা কামড়ে ধরে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য মানব শিকারের সাথে ঝুলে থাকে। তবে এই ঝুলে থাকার বিষয়টি টেনে হিচ্‌ড়ে পানির নিচে যাওয়ার জন্য হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অতঃপর হাঙ্গর মানব শিকারকে ছেড়ে চলে যায়। পুনরায় সেই মানব শিকারকে আক্রমণ ও খেয়ে ফেলার ঘটনা খুবই বিরল। এমন করে আক্রমণ করার পর ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, হয়তো মানুষের মাংসের স্বাদ হাঙ্গরের স্বাভাবিক খাদ্য তালিকার খাবারের মতো নয়। তাই স্বাদ বুঝতে পারলে ছেড়ে চলে যায়। আর আক্রমণ করার কারণ হচ্ছে নতুন কোনোকিছু দেখা, মানুষকে সীল ও সী লায়নের মতো মনে করা। তাছাড়াও হাঙ্গরের এলাকায় নতুন নতুন অতিথির আগমন ও সেই অতিথিকে বিপজ্জনক মনে করাও আক্রমণের কারণ হতে পারে।
এভাবেই মাছের ঝাঁকে প্রবেশ করে শিকার ধরে, কিন্তু মানুষকে আক্রমণ করতে চায় না

যা-ই হোক, আজকের হাতুড়িমাথা হাঙ্গরের আদিপুরুষ কিন্তু পৃথিবীর মহাসাগরে ২০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এসেছিল। প্রাণীদের মধ্যে খুবই শক্তিশালী মাথাযুক্ত হচ্ছে হাতুড়ি হাঙ্গরের মাথা। হাতুড়িমাথা হাঙ্গরের স্ফীত হাতুড়িকে বলা হয় ‘সেফালোফয়েল’। এই হাতুড়ি থাকার সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নানা তর্ক-বিতর্ক ছিল। অনেকেই মনে করতেন এটি ভালমানে ধাতব সনাক্তকারক। যার ফলে সমুদ্রের তলদেশ ঘেষে সাঁতার কেটে বেড়াতে সুবিধা হয়। অনেকের মতে এটি স্পয়লারের মতো হাঙ্গরকে দীর্ঘ সময় ভাসতে সহায়তা করে। এই ধারণাগুলো সত্য হতেও পারে। তবে ফ্লোরিডা আটলান্টিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিশেল ম্যাককম্ব বলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তিনি প্রমাণ করতেও সক্ষম হন যে হাতুড়িমাথা থাকায় এরা চমৎকার দ্বিনেত্র দৃষ্টি (Binocular vision) পায়। মুগুরের মতো গঠিত হাতুড়ির দু’পাশে থাকা চোখের সাহায্যে খাদ্যের সন্ধানে এরা অধিকতর দূরত্ব পর্যন্ত খুবই স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হয়। হাতুড়ি হাঙ্গর সাধারণত পাঁচশত থেকে এক হাজার পাউন্ড ওজন বিশিষ্ট হয়। এরা স্বাভাবিকভাবে ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
হাতুড়িমাথা হাঙ্গর শিকার

সাধারণত এদের উষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী এলাকায় পাওয়া যায়। এরা ১-৩০০ মিটার গভীরে বিচরণ করে। কলম্বিয়া, কোস্টারিকার কোকো দ্বীপ এবং হাওয়াইতে প্রচুর পরিমাণে হাতুড়ি হাঙ্গর বাস করছে। তবে মৎস্য শিকারীদের জালে অনাকাঙ্খিতভাবে আটক হওয়া এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পাখনা বিক্রির জন্য শিকার করার কারণে এদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
হাতুড়িমাথা পাখি

হ্যামারহেড বা হাতুড়িমাথা পাখিকে হ্যামারকপ, হ্যামার-হেডেড সারস, অ্যানভিল হেড বা নেহাই মাথা (নেহাই হচ্ছে যে লৌহখণ্ডের উপর রেখে কামার কিছু পেটায়), অ্যাম্বার বার্ড ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। সাধারণত এই পাখির ঝুঁটি এবং মাথা মিলিতভাবে হাতুড়ির মতো গঠন দেয়ায় একে হাতুড়িমাথা পাখি বলা হয়।
দেখুন তো হাতুড়ির সাথে মাথার মিল খুঁজে পান কি না?

হাতুড়িমাথা সারসকে আফ্রিকার দক্ষিণ সাহারা, মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আরব দেশগুলোতে দেখা যায়। এরা প্রায় ২ ফুট লম্বা ও সমগ্র শরীর গিরিমাটি বা ভূ-বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। হুকের ন্যায় বাঁকানো প্রান্তযুক্ত ঠোঁট এবং ছোট আকারের পা দুটি কালো বর্ণের হয়। এদের দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের বকের মতোই মনে হতে পারে। এরা শামুক জাতীয় প্রাণী, ব্যাঙ, ছোট মাছ এবং জলজ পতঙ্গ খেয়ে জীবনধারণ করে।

প্রজনন চক্রের উপর হাতুড়িমাথা পাখি তাদের বাসা তৈরি করে। এরা বছরে ৩-৫ বার বাসা নির্মাণ করে। তবে একই বাসা বছরের পর বছরও ব্যবহার করতে পারে। এদের বাসার আকার অস্বাভাবিকভাবে বড় ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। এদের ৪.১ ফুট পর্যন্ত লম্বা বাসারও খোঁজ মেলে। এই বাসাগুলো এতটাই শক্তিশালী হয় যে, এগুলো একেকটি আস্ত মানুষের ওজন ধারণ করতে পারবে।
শক্তিশালী এই বাসা মানুষের ভার বহন করতে সক্ষম

বাসাগুলো শক্তিশালী করে তৈরির জন্য ৮-১০ হাজার পর্যন্ত গাছের কাঠির ন্যায় ডালপালা ও কাদামাটি ব্যবহার করে। পাখিগুলোর একটি আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে এমন শক্তিশালী বাসা নির্মাণের কারণ প্রমাণিত হয়। এরা ডিম, ছানা ইত্যাদিকে রেখে দীর্ঘক্ষণ বাইরে ঘুরে বেড়ায়। ফলে শিকারী পশুপাখি থেকে রক্ষার জন্য এরা এমন শক্তিশালী বাসা নির্মাণ করে থাকে।

হাতুড়িমাথা পাখি এখনও বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েনি। এদের সংখ্যা কমে না যাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো নিহিত রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার, কাহিনী এবং কিংবদন্তি। অনেক আফ্রিকার অধিবাসীর মুখে শোনা যায়, মানুষের খারাপ ভাগ্য ডেকে আনার জন্য এই পাখিগুলোর জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। এরা জলের ছায়ায় কোনো ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি দেখে তার মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। আবার যখন এই পাখি মন্দ ভাগ্যের লোককে দেখে, তখন সেই লোকের বাসার উপর তিনটি সতর্ক ধ্বনি উৎপন্ন করে। অতঃপর সেই লোকের মৃত্যু হয়। এছাড়াও অন্য একটি কাহিনী হচ্ছে, যদি এই পাখি কারও মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়, তবে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে পারে। এছাড়াও এরা নাকি কারও বসতবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে বজ্রপাত ডেকে আনে! ‘শকুনের দোয়ায় গরু মরে না’ বলে একটি প্রবাদ আমরা মানলেও আফ্রিকার অধিবাসীরা হয়তো তা মানবে না। তারা মনে করে, এই পাখি চাইলে কারও কারও গরুকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। তাছাড়াও গর্ভবতী মহিলা যদি এই পাখির শব্দ অনুকরণ করে, তবে তার জন্ম দেয়া বাচ্চাও অনুরূপ শব্দ করে কান্না করবে। কথাগুলো অবিশ্বাস্য হোক বা হাস্যকরই হোক, তাতে কী? এই বিশ্বাসগুলো থাকার জন্যই কিন্তু সেখানকার অদিবাসীরা এই পাখিগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। আর এভাবেই এই পাখির সংখ্যা আজও তেমন কমেনি।
হাতুড়িমাথা কীট

হাতুড়িমাথা কীট দেখতে হাতুড়িমাথা হাঙ্গরের ন্যায়। যদিও চেপ্টা কৃমির মতো দেখতে এই অদ্ভুত প্রাণী হাঙ্গরের তুলনায় আকারে অনেক ছোট। এরা আকারে এক ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদেরকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ মহাদেশসহ প্রায় সারাবিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
দেখতে ভয়ঙ্কর মনে হলেও সরাসরি মানুষের ক্ষতি করে না

হাতুড়িমাথা কীট কেঁচো খেয়ে জীবনধারণ করে। কেঁচোকে খাদ্যবস্তুতে পরিণত করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। এদের পাচনক্রিয়া শরীরের বাইরেই সংগঠিত হয়। এরা প্রথমে ফ্যারিঙ্ক্স বা গলবিল মুখের বাইরে বের করে আনে। অতঃপর শিকার কেঁচোকে ঘিরে ফেলে। ঘিরে ফেলার পর নিউরো-টক্সিন নির্গত করে কেঁচোকে অসাড় করে ফেলে। এরপর বিশেষ ধরনের এনজাইমের মাধ্যমে তা গলিয়ে তরল করে অন্ত্রে শোষণ করে নেয়।

কেঁচোর জন্য ভয়ঙ্কর হলেও এরা সরাসরি মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। হতে পারে কেঁচো খেয়ে মাটির পরিবেশ বিনষ্ট করে। তথাপিও অনেকেই মনে করেন এই কীট না থাকলে স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে কেঁচোর সংখ্যা হয়তো অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে ও পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।
হাতুড়িমাথা সরীসৃপের জীবাশ্ম
হাতুড়িমাথা সরীসৃপের জীবাশ্ম

আজ থেকে ২৪২ মিলিয়ন বছর পূর্বে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে অদ্ভুত সামুদ্রিক সরীসৃপের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। সামুদ্রিক এই সরীসৃপের চোঁয়াল ছিল হাতুড়িমাথার ন্যায়। এরা সমুদ্রের তলদেশের উদ্ভিদ খেয়ে জীবনধারণ করতো। হাতুড়িমাথা এই সরীসৃপের জীবাশ্ম ২০১৪ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

Next Post

নওগাঁয় ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে।

রবি জুন ১০ , ২০১৮
মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব খুশীর ঈদের আর মাত্র কদিন বাকি আছে। নওগাঁয় ইতোমধ্যে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে বহুতল শপিং কমপ্লেক্স সব জায়গাতেই শিশু ও নারী-পুরুষের পদচারণায় সরগম এবং উপচেপড়া ভির বিপণিবিতানগুলো। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদবাজার উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিপণিবিতানগুলো আলোকসজ্জা করেছেন। সকাল থেকে অনেক রাত […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links