আ’লীগের তৃণমূল-কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব, বিরোধ মেটানোর দায়িত্বে থাকারাই বিরোধে জড়িত।

Ava desk : তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিরোধ নিরসনের দায়িত্বশীলরাই বিরোধে জড়িত। নিজ এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের হামলা-মামলায় জড়িয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। দাপট দেখাতে গিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছেন ত্যাগীদের। অথচ তারাই এখন নিজ নিজ এলাকার কোন্দল নিরসনের দায়িত্বে।

দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে থাকা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এ বিরোধ মিটমাটে একাধিকবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন শীর্ষ নেতারা। তাতেও কাজ হয়নি। নির্বাচনকে ঘিরে এই দ্বন্দ্ব-কোন্দল এখন ডালপালা ছড়িয়েছে। আর কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা মানছেন না তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এ অবস্থায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত মাসে সিলেট সফর করেছেন। আগামীকাল উত্তরাঞ্চল সফরে যাচ্ছেন।

বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ভাষ্য- বোঝানো শেষ, এবার ব্যবস্থা নেয়ার পালা। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রভাবশালী, এমপি, মন্ত্রী কিংবা নেতা যেই হোক, দলের কোন্দল সৃষ্টি করে কেউ রক্ষা পাবে না। সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী নির্বাচনে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী এমন নেতাদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন ওবায়দুল কাদের।

তৃণমূল আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৫টি টিমের মাধ্যমে সাংগঠনিক সফর শুরু করে আওয়ামী লীগ। আর এসব টিমের মোট সদস্য সংখ্যা ৭৭। সবাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এই ৭৭ জনের মধ্যে কমপক্ষে ২১ জন নেতা আছেন, যাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বিরোধ আছে। এসব নেতার এলাকায় বিরোধ নিরসনকারী দলগুলো সংকটের সমাধান করতে না পেরে ফিরে এসেছে। এদের পক্ষে বিদ্যমান বিরোধ নিরসন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আওয়ামী লীগের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধে জড়িত এমন নেতাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে। দ্বন্দ্বে জড়ানো কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্মশুদ্ধির জন্য একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। কিন্তু এরপরও কিছুতেই কিছু হয়নি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজ এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সামছুল আলম দুদুর দ্বন্দ্ব আছে। সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের। আবার বাহাউদ্দিন নাছিমের নির্বাচনী আসন মাদারীপুর-৩ নিয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপেরও দ্বন্দ্ব চলছে। সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর। সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে চট্টগ্রামের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আজম নাসিরের। সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে নেত্রকোনা-৫ আসনের এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় কোন্দল প্রকাশ্যে। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেটের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আধিপত্য ও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির সঙ্গে কোন্দল দলটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদারের বিরোধদলীয় মনোনয়ন নিয়ে। অর্থ সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমানের সঙ্গে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের বিরোধ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের সঙ্গে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া ও তার ছেলে তারিকুজ্জামান মনির দ্বন্দ্ব দলীয় মনোনয়ন ও এলাকার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে। সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঙ্গে নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর দ্বন্দ্ব পুরনো। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেনের। প্রেসিডিয়াসম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর সঙ্গে এমপি নিক্সন চৌধুরীর দলীয় মনোনয়নকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের দ্বন্দ্ব প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে। কার্যকরী সংসদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেটের মধ্যে বিরোধ অনেক পুরনো। এখানেই শেষ নয়, কমপক্ষে আরও এক ডজন কেন্দ্রীয় ও প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে নিজ নিজ এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি ও তা লালনে নানা অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের। এদের বিরোধসহ অন্যান্য বিরোধ ও কোন্দল নিরসনের জন্যই ১৫টি দল মাঠে কাজ করছে। এ দলের বড় একটি অংশ নিয়ে কাল শনিবার থেকে উত্তরাঞ্চলে সফর শুরু করছেন ওবায়দুল কাদের। শনিবার ও রোববার উত্তরের ৮ জেলায় পথসভা করবেন। এর আগে ৩০ ও ৩১ আগস্ট এই দলই সিলেট সফর করে। সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কাজ করেন ওবায়দুল কাদের।

তৃণমূল নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন ও মনোমালিন্য দূর করাই সফররত টিমের মূল উদ্দেশ্য বলে যুগান্তরকে জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, তৃণমূলে অনেক স্থানেই সমস্যা আছে; সেগুলো চিহ্নিত করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে ১৫টি টিম। কোন্দল সৃষ্টিকারী, বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, দলের সুনাম ক্ষুণ্ণকারী এমন কাউকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও এই দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্বপনের বিরুদ্ধে। তিনি নিজ জেলা জয়পুরহাটসহ ১৫টি জেলার সফররত সাংগঠনিক টিমে কাজ করছেন। এই জেলায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল হলে কঠোর হুমকি দিয়ে প্রাথমিক মিটমাটের কাজটি করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল হক দুদু যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করলেও তিনি (স্বপন) নিজ এলাকায় হটকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তও অমান্য করছেন তিনি। দলের মধ্যে এসব করে ওনার (স্বপন) লাভ কি?

অভিযোগ অস্বীকার করে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, বিরোধ আগের মতো নেই, তবে ঐক্যবদ্ধভাবেও কাজ হচ্ছে না। এলাকায় যে যার মতো চলছেন। এর জন্য তিনি দায়ী নন জানিয়ে বলেন, এখন আমি নির্বাচনী গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেনের সঙ্গে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া ও তার ছেলে পটুয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুজ্জমান মনির দ্বন্দ্ব আধিপত্য ও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে। নিজ এলাকা পটুয়াখালী ছাড়াও বরিশাল, ভোলায় দ্বন্দ্ব নিরসন টিমের সদস্য আফজাল হোসেন।

এ বিষয়ে আফজাল হোসেন বলেন, পটুয়াখালীতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই তবে কিছু ব্যক্তির মধ্যে নোংরামি আছে। তারা এলাকার আধিপত্য ধরে রাখতে এসব নোংরামি করেন। অনেক চেষ্টা করেও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

আর সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার ছেলে তারিকুজ্জমান মনি বলেন, নিজ এলাকায় যাদের ভিত্তি নেই তারাই আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, লোক নেই, এলাকায় অস্তিত্ব নেই, কর্মী নেই সেই কিনা নির্বাচন করতে চায়।

আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বলয় সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত আসায় একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন কেন্দ্রীয় নেতারা। এইচএন আশিকুর রহমান বিরোধ নিরসন টিমের নিজ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন রংপুর-৫ আসনের এমপি ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমান। নিজেকে জানান দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে।

আর মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, মিঠাপুকুরের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে পকেট কমিটি গঠন করেছেন আশিকুর রহমান। কেন্দ্র আগের কমিটি বলবৎ করলেও বাতিলকৃত কমিটি দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম শুরু থেকেই বরিশাল, বরিশাল মহানগর, ভোলা, মাদারীপুর, পটুয়াখালীসহ ১২টি জেলা টিমের সঙ্গে কাজ করছেন। নিজ এলাকা মাদারীপুরে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোন্দল তার। কোন্দলের জের ধরে বাহাউদ্দিন নাছিমকে ঠেকাতে তৎপর একটি গ্রুপ। মাদারীপুরের কালকিনিতে (মাদারীপুর-৩) বাহাউদ্দিন নাছিম গ্রুপের বিরুদ্ধে একাট্টা শাজাহান খানও। এ আসনে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের বাড়ি। তিনিও ভেতরে ভেতরে মনোনয়নের জন্য একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে বলেন, মাদারীপুরের অবস্থা খুব খারাপ। শাজাহান খান সবকিছু ‘ফ্রি স্টাইলে’ চালাচ্ছেন। তার হাত থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচান।

দ্বন্দ্ব নয়, মতভেদ আছে যা উদ্যোগ নিলে নিরসন সম্ভব বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার ঐক্য গড়ে তোলা হবে।

তবে আধিপত্য বিস্তারের তথ্য মিথ্যা উল্লেখ করে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান যুগান্তরকে বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ করছেন তারাই বলতে পারবেন কেন তারা এমন করছেন। এ নিয়ে আমার আর কোনো বক্তব্য নেই।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পেছনে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাড. ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অভ্যন্তরীণ এই কোন্দল নিরসন করতে ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিলেট সফর করে বিরোধকারী নেতাদের হুশিয়ারি দিয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ যুগান্তরকে বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হারার পেছনে তার ব্যক্তি ইমেজ দায়ী। সিলেটে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। হেরে গিয়ে নানা অজুহাত তৈরি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি। একই আসনে এমপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় এই দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে বলে স্থানীয়রা বলছেন।

এলাকায় কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, মনোনয়ন পেতে জনগণের সমর্থন লাগে, জনগণ চাইলে দল মনোনয়ন দেবে। এক্ষেত্রে আমার তরফ থেকে কোনো বাধা নেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই দুই নেতাই নিজ জেলা শরীয়তপুর সফররত টিমের সদস্য।

সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নিজ এলাকা চট্টগ্রাম। তিনি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকাসহ ২৫টি সাংগঠনিক জেলা সফররত টিমের সঙ্গে আছেন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসিরের অনুসারীদের অভিযোগ, তিনি তার প্রয়াত বাবার (মহিউদ্দিন আহমেদ) অনুসারীদের নিয়ে রাজনীতির খেলা শুরু করেছেন। কিছু হলেই এই দুই গ্রুপের সঙ্গে মারামারি লেগেই থাকে। কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার বসে এই দ্বন্দ্ব সুরাহা করতে পারেননি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুগান্তরকে বলেন, এক সময় চট্টগ্রামে দলের অভ্যন্তরে মেরুকরণ হতো; ‘ফেকশন’ ছিল; এখন নেই। চট্টগ্রামে এখন সবাই মিলেমিশে কাজ করছে।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীকের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই দুই নেতাকে ঘিরে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। শুধু তাই নয়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোয় এমপি ওয়ারেসাত ও আহমদ হোসেনের পৃথক কমিটি বিদ্যমান।

আহমদ হোসেন নিজ নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনা ছাড়াও ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলা সফরকারী টিমের অন্যতম সদস্য। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনায় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে সম্প্রতি দলের এক সম্পাদকীয় বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের কাছে উপমন্ত্রীকে দানব আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন আহমদ হোসেন। তবে এ বিষয়ে জানতে আহমদ হোসেনের মোবাইলে পরপর তিন দিন যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল যুগান্তরকে বলেন, যত বড় নেতাই হোক, মনোনয়ন চাইলেই পাওয়া যায় না। জনগণেরও চাওয়া-পাওয়া থাকে। দ্বন্দ্বকারীরা জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

এমপি মনোনয়ন ও দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে দুটি বলয় (অসীম কুমার উকিল ও এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু) সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে অসীম কুমার উকিল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল নিজ জেলা নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা সফরে থাকা সাংগঠনিক টিমের অন্যতম সদস্য।

নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটের মাঠ গরম করতেই আমার বিরুদ্ধে কথা বলে- মন্তব্য করেছেন নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এলাকায় অনেক প্রার্থী আছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী, তারাও মনোনয়ন চান। এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও করছেন। তবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চাই না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনের এমপি। নিজ জেলা ফরিদপুরসহ ২৫টি সাংগঠনিক জেলা সফরকারী টিমের অন্যতম সদস্য তিনি। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের সঙ্গে তার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, এই দুই প্রভাবশালী নেতাকে নিয়ে এলাকায় দুটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরি হয়েছে।

নির্বাচনে যে কেউই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতে পারে এবং আমার তরফ থেকে কোনো বাধা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, শুনছি একজন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচন করতে চান। চাইতেই পারেন। তবে চূড়ান্ত পর্বে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানাই।

সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী লিয়াকত শিকদার বলেন, এলাকায় নৌকার জন্য কাজ করছি। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। এসবই আওয়ামী লীগের জন্য। দলীয় সভানেত্রীর (শেখ হাসিনা) জন্য। তিনি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই নৌকা হয়ে কাজ করব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদ সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরোধ পুরনো। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী লিটনের পক্ষে কাজ না করার অভিযোগ উঠেছে ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীর থেকে আমিই বেশি প্রচার-প্রচারণা করেছি। তবে খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহানগর আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ লিটনকে পরাজিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পর্যবেক্ষণে উঠে আসায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে টনক নড়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বিরোধে জড়িত রাজশাহী জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। দ্বন্দ্বে জড়িত নেতাদের হাত মিলিয়ে দিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
jugantor

Next Post

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ বলে অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন

শুক্র সেপ্টে. ৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ বলে অর্থমন্ত্রী ভুল করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। নির্বাচনের তারিখ বলা তার (অর্থমন্ত্রীর) একেবারেই ঠিক হয়নি। আমি মিডিয়ার সামনে বলছি, এটা বলা তার ঠিক হয়নি। হোটেল রেডিসনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের নির্বাচন কমিশনের সংগঠন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links