স্বজনপ্রীতিতে রাকাবের ঋণ, কাগজপাতিতেও আছে নানা জটিলতা

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে চাকুরী করলেই অসম্পূর্ণ কাগজপত্রসহ নানা জটিলতা থাকলেও মেলে কোটি কোটি টাকা ঋণ। কাগজপত্রে জটিলতা নিয়েও সম্প্রতি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত রায়হানুল হক ওরফে রাসেল প্রায় অর্ধ কোটি টাকার উপরে ঋণ পেয়েছেন। ২০১৫ সালে রাকাবে তিনি ঐ পদে চাকরি পান। রাসেল রাজশাহী নগরীর খোঁজাপুর এলাকার শাহজাহান আলী ওরফে শাহজান মিস্ত্রির ছেলে। চাকুরী সুবাদে ব্যাংক সুবিধা নিতে বাপের মামলায় জড়ানো জমি নিজ নামে রেজিস্টার করেন। জমি বাবদ প্রথম কিস্তি ঋণ পান রাসেল। এরপরের ধাপে ঋণ নিতে রাজশাহী উন্নয়ন কতৃপক্ষের নিকট থেকে প্লান পাশ করান। প্লান পাশের পর দ্বিতীয় কিস্তি পেয়ে যান তিনি। এর মধ্যেই আরডিএ কতৃপক্ষ প্লানের বাহিরে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বাড়ি নির্মাণ করায় তা বন্ধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০১৯ সালে উক্ত জমিটির সীমানা নির্ধারন নিয়ে রাসেলের পিতা শাহজাহান আলীসহ তিন জন বাদী হয়ে প্রতিবেশি আলী নেওয়াজ বাচ্চু ও আলতাফ আলীর বিরুদ্ধে জেলা রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে মামলা করেন। যার মোকাদ্দমা নং ৭১/২০১৯। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন যে, আরএস ৩৬৬ হাল দাগের জমিতে পরিমানের সমস্যা রয়েছে। কারন, খতিয়ানে জমির পরিমান উল্লেখ রয়েছে .৪২ একর কিন্তু নকশায় আছে .৪৫ একর। বাদীর দাবি, বিবাদীরা তাদের জমির কিছু অংশ জবরদখল করিয়াছে। অর্থাৎ জমিটির মুল সমস্যা হচ্ছে সীমানা নির্ধারন। শুধু তাই নয়, তার জমির সংলগ্ন আলী নেওয়াজ বাচ্চুর জমি নিতে নানা কুটকৌশলে মেতে উঠেন শাজাহান ও ছেলে রাসেল। আর সকল ষড়যন্ত্রের পরিচালকের ভুমিকা নেন আলী আকবর ছেলে আব্দুল মতিন। এই মতিনের ষড়যন্ত্রে বাচ্চুর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিতে থাকেন তারা। অবশেষে বাচ্চুকে ধরাসায়ী করতে প্রায় ২৫ বছর আগের করা বাড়ির বিরুদ্ধে আরডিএ’র নিকট অভিযোগ করেন শাহজাহান। এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি। হয়রানি করাতে বাচ্চুর আরেক ভাই আবু হেনা’র বাড়ির বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি অথচ আবু হেনা’র জমির সাথে তার কোন সংযোগই নেই। ঐ জমিটি বিরোধ সম্পন্ন জমি হতে বেশ অনেক খানি দূরে। হিংসার বশবর্তী হয়ে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও পারিবারিক ভাবে চাপে রাখতে ৮বছর আগে নিয়ম মেনে করা বাড়িতেই তিনি এই ধরনের অভিযোগ করেছেন বলে জানান সয়ং আবু হেনা। এত নাটকের কারন একটাই, সংলগ্নের জমিটি পেতে হবে।
উল্লেখ্য এই যে, সংলগ্ন বাচ্চুর জমির খাজনা খারিজ সকল কিছুর আপডেট তার নামে রয়েছে।
এখানে প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে মামলা নিষ্পত্তি না করে এবং জায়গার কাগজ প্রদর্শন না করে কিভাবে আরডিএ প্লান পাশ দিলেন। প্লান পাশের আগে সীমানা নির্ধারণ করা অবশ্যক ছিলো। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে চলছে দীর্ঘদিনের মামলা জটিলতা। এদিকে মামলা কৃত জমিতেও রাকাব দিয়েছেন ঋণ।
আরডিএ বলছে, আমাদের প্লানের বাহিরে গিয়ে তাঁরা কাজ করছেন তাই কাজ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।নোটিশের এক কপি সংশ্লিষ্ট রাকাব কতৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।প্লানের আগে আমাদের দেওয়া কাগজপত্র সব ঠিক ছিলো। তাদের কাগজ অনুযায়ী জমি’র উপর প্লান দেওয়া হয়। সীমানা নির্ধারণ করে তাদের অংশের প্লান পাশ করা হয়।

এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে মতিহার থানার খোঁজাপুর এলাকায় গেলে দেখা যায়, বাড়িটিতে নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাসেলের পিতা শাজাহান আলী জানান, আমি এই সম্পর্কে কিছু জানিনা। যা কিছু জানে, সব ছেলেই জানে। ছেলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে চাকরি করে। পরে ছেলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলে জানা যায় সকল ঘটনা। পরে সাংবাদিকরা রাইহানুল হক রাসেলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এগুলো আরডিএ ও আমার পারিবারিক বিষয়, আপনারা মাথা গলাবেন না। এরপর বাড়ি নির্মান বন্ধের নির্দেশ নোটিশ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি দ্রুত উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং সাংবাদিকের সাথে অসদাচরণ করে ফোন কেটে দেন।
পরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) যোগাযোগ করলে তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসেন। জানতে চাওয়া হয়, রাসেলের ঋণের ব্যাপারে। কবে ঋণ পেয়েছেন, কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এপর্যন্ত কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং এই ঋণের জন্য কি ধরনের কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে? কিন্তু তাদের ভাষ্য, কারো ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া নির্দেশণা নাই।
এসময় রাকবের প্রধান কার্যালয়ের এজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, এগুলো কনফিডেনসিয়াল তথ্য, আপনি চাইলে দেওয়া যাবেনা। মামলাকৃত জমিতে ঋণ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান আমরা সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ঋণ দিয়েছি। তবে আরডিএ’র একটি নোটিশ পেয়েছি। এরপর রাকাব কর্তৃপক্ষ রাসেলের সেই ঋণটি স্থগিত করে দিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলছেন, কমিশন না হলে, রাকাবে ঋণ মিলেনা। কমিশন দিলে কাগজ ভুল থাকলেও মিলে ঋণ রাসেলের মত এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে এই রাকাবে। যার অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে রাকাবের ঋণের তেলেশমাতি।

Next Post

পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ বানিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট 

বুধ অক্টো. ১১ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার একের পর এক ঘুষ ভিডিও ভাইরালের খবর এখন মুখে মুখে , দেখা যায় সরকারি খাস জলমহাল ভূয়া হোল্ডিং খুলে খাজনা আদায় , অতিরিক্ত ঘুষ আদায় নামজারীতে , অতিরিক্ত খাজনার টাকা আদায় করছে জনসাধারনের নিকট থেকে , । এত কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরও সবাই […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links