কোভিড হাসপাতাল কমালে ঝুঁকিই বাড়বে: জি এম কাদের

আভা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য নিবেদিত হাসপাতালের সংখ্যা কমানো হলে জনগণকে ‘মৃত্যুর মুখে ঠেলে ফেলা হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

বৃহস্পতিবার সংসদে অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি সরকারকে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

জিএম কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও দেশে বিদ্যামান। কবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, সে নিশ্চিয়তা দিতে পারছে না কেউ।

“এটাই বাস্তবতা। কোভিড হাসপাতালকে… নন কোভিডে রূপান্তর করার এই সিদ্ধান্ত রোগী, বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে।”

সরকারি হিসাবে দেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪ হাজার ৫৯৩ জনে।

বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৭৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৮২৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

জি এম কাদের বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা, এমনকি মৃতের সংখ্যাও আরও বেশি হতে পারে বলে ‘বিশেষজ্ঞ মহল’ মনে করেন। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমেছে বা কমতে শুরু করেছে- এমন বলার মত কোনো লক্ষণ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না।

“এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। এরই মাঝে হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে কিছু হাসতপাতাল, যেগুলো কোভিড রোগী চিকিৎসা করত, সেগুলো নন কোভিড চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।”

এর ফলে বেসরকারি হাসপাতলে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে ‘রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে সেখানেও অনেকে চিকিৎসা পাচ্ছে না। সিটের জন্য অনেকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুঁটে বেড়াচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ছাড়া গত্যান্তর থাকছে না।”

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সরকার। সেজন্য কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এক পর্যায়ে ঢাকায় মোট ২১টি হাসপাতালে কোভিড-আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়, যার মধ্যে ৯টি বেসরকারি হাসপাতাল। চুক্তি অনুযায়ী, এসব বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার খরচ সরকার দেয়।

কিন্তু ‘অনেক শয্যা খালি পড়ে থাকায়’ করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা গত মাসে সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত ‘সংবিধান ক্ষুণ্ন করছে’ মন্তব্য করে বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, “আমরা চাই সরকারি সকল হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যেখানে নেই, সেখানে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হোক। জানি না করোনা কতদিন থাকবে।”

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সরকারে অর্জন ‘ম্লান করে দিচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতির কথা প্রতিদিন খবরে আসছে, আলোচিত হচ্ছে। কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কী না জনগণ জানছে না। দুর্নীতির জন্য সরকারে অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন।”

বিচার বহির্ভূত হত্যা

মহামারী নিয়ে বলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগ নিয়েও সমাপনী বক্তব্যে কথা বলেন জি এম কাদের।

তিনি বলেন, “বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটা বন্ধ করা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্য়ায়ে পৌঁছেছে যে প্রায়ই কোথাও না কোথাও গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পরও লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ভূক্তভোগী পরিবার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যের মধ্যে গরমিল দেখা যাচ্ছে।”

বাংলাদেশে আইনের লোকের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়ানোর ইতিহাস তুলে ধরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “যখন শুরু হয়েছিল তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একটি বাহিনী ‘যৌথ বাহিনী… বিএনপি আমলে সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরে আইন করে র‌্যাব গঠন করা হয়েছিল। তারা এই কাজ করত।

“যেসব ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডে শিকার হত, তারা সমাজবিরোধী ও আইনবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হতেন। মামলা জট, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দোষী ব্যক্তিরা বিচার এড়িয়ে যেতে পারত। সে কারণে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে দ্রুততার সাথে বিচার হচ্ছে- এমন ধারণা গ্রহণযোগ্য হত। সাধারণ মানুষ ততটা খারাপ মনে করতেন না।”

কিন্তু পরেও সেই ধারা বজায় থাকার বিষয়টি তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “ক্রমান্বয়ে অনেক সরকারি বাহিনী দ্বারা নির্দোষ লোককে হত্যা করা হচ্ছে। ব্যক্তি স্বার্থে ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আসছে, মামলায় প্রমাণ হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান, চরমপন্থিদের দমন, সন্ত্রাসী দমন, ধর্মীয় উগ্রপন্থি দমনের নামে পরিচালিত কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যা সংঘঠিত হয়। এখন রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রোষের শিকার হয়ে বন্দুকযুদ্ধ, গুমের ভিকটিম হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয় যাচ্ছে।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের তরফ থেকে অনেক সময় বলা হয়, কোনো বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যায় ‘জড়িত নয়’।

“তারা দায় এড়াতে পারে না। অপরাধীকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তাদের। বেআইনি কাজ বন্ধ করতে প্রয়োজন আইনি ব্যবস্থা। বেআইনি কাজ বেআইনিভাবে প্রতিরোধ ন্যায়বিচারে পরিপন্থি। এ ধরনের ব্যবস্থা সম্বলিত সমাজ সভ্য সমাজ কিনা সেটা বিবেচনা করা দরকার।”

 

Next Post

মেয়র লিটনের সাথে আরএমপি‘র নতুন পুলিশ কমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

বৃহস্পতি সেপ্টে. ১০ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের  মেয়র  এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) নতুন পুলিশ কমিশনার জনাব মো. আবু কালাম সিদ্দিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর ভবনে সাক্ষাৎকালে মেয়র মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ সময় রাসিক মেয়র মহোদয়ও নতুন পুলিশ কমিশনারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links