সুন্দরবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদন দেওয়া হলো শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান।

আভা ডেস্ক ; ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদন দেওয়া হলো শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান। সোয়া ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন অঞ্চলে ঘসিয়াখালী চ্যানেলসহ অন্যান্য চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং করার পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায়। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) থেকে তৈরি করা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রথম ধাপে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে দেড় শতাংশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম শতবর্ষী কোনো পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার আওতায় যেসব প্রকল্প বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে, তাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় গতকালের বৈঠকে। নেদারল্যান্ডসের আদলে বাস্তবায়ন করা হবে বদ্বীপ পরিকল্পনা।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ডেল্টা তহবিল। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, জলবায়ু তহবিল, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিকে (পিপিপি) খাত বিবেচনা করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে নেওয়া সহজ হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনাসচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব মফিজুল ইসলামসহ অন্যরা।

বদ্বীপ পরিকল্পনায় দেশে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এই খাতে বিশেষ নজর দিয়ে ‘পূর্ব সতর্কীকরণ’-এর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এনইসি সভায় উত্থাপিত পরিকল্পনায় জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, পদ্মা ও মেঘনা নদীর মাথাভাঙ্গা থেকে জলঙ্গী পর্যন্ত নদীর ডান তীরে বহুমাত্রিক বন্যা বাঁধ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। সরকার চাইলে এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্র থেকে নদী পুনরুদ্ধারে নোয়াখালীর উরিরচর এলাকায় ক্রস ড্যাম নির্মাণ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি। পরিকল্পনায় উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে বন্যামুক্ত রাখতে এবং ঘূর্ণিঝড় সহিষ্ণু রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জিইডি বলছে, তিন ধাপে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। প্রথম ধাপ ২০৩০ সাল, দ্বিতীয় ধাপ ২০৫০ এবং তৃতীয় ধাপে ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে খরচ হবে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা একটি দীর্ঘমেয়াদি দলিল। ২১০০ সাল নাগাদ আমরা দেশকে পানি ব্যবস্থাপনায় কিভাবে দেখতে চাই, এটি তারই পরিকল্পনা। এত দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা বাংলাদেশে এটিই প্রথম।’ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি পেয়েছে। তাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পানিকে আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে কৃষিতে আমরা পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারব।’

ঝুঁকি বিবেচনায় সারা দেশে ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে বদ্বীপ পরিকল্পনায়। সেই সঙ্গে এসব হটস্পটে ৩৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বদ্বীপ পরিকল্পনায় হটস্পটগুলোর সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বন্যার ঝুঁকি কমাতে নদী ও পানিপ্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রাখা; পানিপ্রবাহের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীগুলোকে স্থিতিশীল রাখা। পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ও মানসম্মত স্বাদু পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। নদীগুলোর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা; নদীগুলোতে নিরাপদ নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকায় পানির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে টেকসই জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সুযোগ পেলে নেদারল্যান্ডস ঘুরে আসিয়ো। কারণ আমাদের মতোই নদীর দেশ নেদারল্যান্ডস।’ পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার নেদারল্যান্ডস ঘুরেছেন। সেখানকার পানি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা তাঁকে আকৃষ্ট করেছে। তাঁরই নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে।” মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে এত বিস্তৃত ও দীর্ঘ পরিকল্পনা এটিই প্রথম। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ পানিসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেসকই করা হবে।
কালেরকণ্ঠ

Next Post

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতি, বাড়ছে ব্যয়

বুধ সেপ্টে. ৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : চীনের দেয়া ঋণে বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ব্যয় বাড়ছে এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, যথাসময়ে এ প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। মেয়াদ বাড়ছে আড়াই বছর। এজন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ১০ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links