জেলা প্রশাসকদের প্রধানমন্ত্রীর ২৩ নির্দেশনা, ‘নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে যদি কেউ বাধা দেয়, সরাসরি আমাকে জানাবেন ।

ava desk : চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ নির্দেশ ছাড়া আরও ২২টি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে যদি কেউ বাধা দেয়, আপনারা সরাসরি আমার সঙ্গে বা আমার অফিসে যোগাযোগ করবেন। এ ক্ষেত্রে কে কোন দল করে, কে কী করে সেগুলো দেখার কোনো দরকার নেই। আমরা সমাজ থেকে অশুভ তৎপরতা নির্মূল করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হল- ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপমুক্ত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক, জ্ঞাননির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের অতীতের ধ্যান-ধারণা পরিহার করে সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করে আপনাদের সেবার মনোভাব নিয়ে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’ দেশের উন্নয়নে গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকা এবং সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটানা দুই মেয়াদে প্রায় সাড়ে ৯ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। ফলে অনেক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। আর্থ-সামাজিক খাতে আজ বাংলাদেশের যে অভাবনীয় অগ্রগতি, তা সম্ভব হয়েছে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকার জন্য।’
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে আমরা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকায়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। শিক্ষার হার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের ৪৫ থেকে ৭৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২৮ লাখ ৪০ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীকে ‘মিড-ডে মিল’ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন ধরনের উপবৃত্তি এবং বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ স্থাপন করা হয়েছে।’ শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। এজন্য সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সফিউল আলম। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পক্ষে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক বেগম শায়লা ফারজানা এবং রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর-উর-রহমান বক্তৃতা করেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই সম্মেলন। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যাগুলো এবং সেগুলোর সমাধানের পথ ও কৌশল নির্ধারণে এ সম্মেলন কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ২৩ নির্দেশনা : সম্মেলন উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসকদের ২৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হল- (১) সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।
(২) যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।
(৩) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
(৪) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে।
(৫) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
(৬) তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।
(৭) শিক্ষার সব স্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
(৮) ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
(৯) কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
(১০) ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
(১১) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
(১২) পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
(১৩) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলী অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(১৪) সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে।
(১৫) জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে।
(১৬) দফতরগুলোর বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্যমেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
(১৭) শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘœ করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(১৮) বাজার ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
(১৯) নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে।
(২০) নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
(২১) নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
(২২) প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(২৩) পার্বত্য জেলাগুলোর ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া পর্যটন শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে।
jugantor

Next Post

কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে নতুন প্রজন্ম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না।

বুধ জুলাই ২৫ , ২০১৮
ava desk : কৃষিতে মুনাফা কম হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কাছে ‘কৃষি পেশা’ গুরুত্ব হারাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতের ক্ষতিপূরণে কেউ এগিয়ে আসে না। দায়িত্বও কেউ নেয় না। এ খাতে বিনিয়োগেও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এ সব কারণে কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে নতুন প্রজন্ম স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। এছাড়া এ পেশায় সন্তানদের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links