রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার। অপরাধীরা আদৌ শাস্তির আওতায় আসবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন তারা।
এদিকে, ফারুক হত্যার বিচার দাবি ও তার স্মরণে শোক র্যালি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় দলীয় টেন্ট থেকে শোক র্যালি নিয়ে শাহ্ মখদুম হলের সামনে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় ফারুকের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পরে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন, নিহত ফারুকের বোন আসমা বেগম, রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, প্রমুখ।
ফারুক হত্যার বিচার দাবি ও তার স্মরণে শোক র্যালি করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ
বক্তারা বলেন, ২০১০ সালের এই দিনে ফারুককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আজ হত্যার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সুষ্ঠু বিচার পায়নি তার পরিবার। আমরা দ্রুত আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। এ সময় ফারুক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের অতি দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা এবং তার বোনের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান তারা।
এ সময় রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশারসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারের বিষয়ে নিহত ফারুকের বোন আসমা আক্তার জানান, আমার ভাই হত্যার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোন বিচারের অগ্রগতি দেখছিনা। প্রতিবছরই এসে বিচার চাই, কিন্তু বিচার পাইনা। এ নিয়ে আমরা খুবই হতাশ। হত্যাকারীদের বিচার হলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানাই।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের রাতে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাহ মখদুম হলে তাকে খুন করে লাশ ম্যানহলে ফেলে রাখা হয়।
শাহ্ মখদুম হলের সামনে ফারুকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা
হত্যাকান্ডের পরদিন ৯ ফ্রেবুয়ারি নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তৎকালিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু। পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা এবং আরও একটি মামলা করে বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে। ৫ তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন শেষে ২ বছর পর ২০১২ সালের জুলাইয়ের ৮ তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সর্বশেষ তদন্ত কর্মকতা রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান। অভিযোগপত্রে ১১০ জনকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
গত বছরের ২৫ জুলাই ফারুক হত্যা মামলায় জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত মহানগর ও দায়রা জজ আদালত। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক এনায়েত কবির সরকার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ জারি করেন। ১১০ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬ জন মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ছাত্রশিবির কর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এসএম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুককে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ এসএম হল ও সৈয়দ আমীর আলী হলের মাঝখানের ম্যানহোলে ফেলে দেয়। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীর নামসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।