আভা ডেস্কঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সেই সময়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রভাব বিস্তার করেছিল। এর নানা প্রমাণ ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়। ৯ ফেব্রুয়ারি দিনটি মোটেও ঘটনাহীন ছিল না।
পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রের বদৌলতে প্রতিদিনই ছোট-বড় নানা ঘটনা একুশের উনানে জ্বালানির যোগ করছিল। এছাড়া সরকারপন্থী সংবাদপত্রগুলোর ভূমিকা গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। একুশের দিনলিপি গ্রন্থে দিনটি সম্পর্কে এভাবেই বলা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলন ছাত্রদের আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও এর প্রেক্ষাপট ছিল রাজনৈতিক দুঃশাসনের সামাজিক অস্থিরতার প্রকাশ। একই সঙ্গে এর পেছনে সহায়ক অনুঘটক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বহু ঘটনা ও সংগঠনের তৎপরতা।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সম্ভাব্য বিস্ফোরণের পটভূমি তৈরি করে। অর্থনৈতিক সংকট তো ছিলই, একই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক বড় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া সেই সময় আলোচনার আরও দুটি বিষয় ছিল চোরাচালান ও মজুদদারি। এসব ঘটনা রাজনীতিমনস্ক ছাত্রদের চেতনায় আঘাত করে, তাদের অধিকতর রাজনীতিমুখী ও লড়াইমুখী করে তোলে। এমন এক স্পর্শকাতর প্রেক্ষাপটে ভাষার ওপর আঘাত ছাত্র সামজকে উদ্বেল করে। এছাড়া সরকারপন্থী সংবাদপত্রগুলোর ভূমিকা গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
ডন পত্রিকার বাংলাবিরোধী ভূমিকার প্রতিবাদ জানাতে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানাতে সভায় মিলিত হন। শুধু ছাত্র সমাজই নয়, এ বিষয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার স্বভাবসুলভ ধারায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে প্রাদেশিকতার ভুল ব্যাখ্যা দিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের কতিপয় সংবাদপত্র পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এক রেষারেষির ভাব সৃষ্টি করিবার কুমতলবে মাতিয়াছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি অতি যুক্তিপূর্ণ।’
দীর্ঘ বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী প্রাদেশিকতা, রাষ্ট্রভাষা ইত্যাদি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সংবাদপত্রগুলোর অভিমত খণ্ডন করেন এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে তার অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘উর্দুর মতো একটি নূতন ভাষা পূর্ববাংলার জনগণের ওপর জোর করিয়া চাপাইয়া দিতে চাহিলে নিশ্চয়ই এই আশঙ্কা জনগণের মধ্যে উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক- চাকুরী ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাহাদিগকে কোণঠাসা করিবার জন্যই ইহা করা হইতেছে।
একতার বুলি আওড়াইয়া যারা পাকিস্তানে একটিমাত্র রাষ্ট্রভাষার পক্ষে ওকালতি করিতেছেন আমি তাহাদিগকে দুনিয়ার প্রগতিশীল রাষ্ট্র রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও কানাডার দিকে তাকাইতে বলিতেছি।’
যুগান্তর