নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ। তিনি গত ১৭ জুলাই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে। আগের দিন ১৬ জুলাই তাঁর ছিল গায়ে হলুদ। ছাত্রলীগের এই নেতার গায়ে হলুদ ও বিয়ের শত ছবি গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকের পাতায়। তাঁর বিয়েতে গিয়ে দোয়া করে এসেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেই ছবিও ফেসবুকে ঘুরছে গত দুদিন ধরে। এরই মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ সরকার। তাঁর বিয়ের ছবিও এসেছে ফেসবুকে। দুটি বিয়েই হয়েছে ধুমধাম করে। কিন্তু ছাত্রলীগের এই দুই নেতা পদে থেকে কেন এখনই বিয়ের পীঁড়িতে বসলেন-এমন প্রশ্ন খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো নতুন তথ্য। সেটি হলো বিয়ে করে ছাত্রলীগ ছাড়তে চান এ নেতারা। তাই প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই এতো আয়োজন। কোনো লুকোচুরিও নয়।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ভিতরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শুধু এই দুই নেতাই যে বিয়ের পীঁড়িতে বসেছেন তাও নয়। তাঁদের মতো আরো অন্তত ২০ জন নেতা আছে দুটি সংগঠনে যাঁরা গোপনে বিয়ে করে রেখেছেন, কিন্তু পদ হারানোর ভয়ে মুখ খোলেননি। তবে তারাও এখন আর বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখছেন না। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ করে এখন নতুন করে কেউ যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হতে চাইছেন। এ কারণে ছাত্রলীগের পদ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে ওইদিকেই ঝুঁকছেন। যদিও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে কোনো বিয়েধারী নেতা ছাত্রলীগ করতে পারবেন না বলে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে। তবে এতোদিন যারা বিয়ে করেও বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তাদের নৈতিকতা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকেই পরিস্কার হয় সহসায় ছাত্রলীগ ছাড়ছেন তিনি। সেই পোস্টেই তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন তাঁর পরবর্তী গন্তব্য হলো রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া।
গত ১৭ জুলাই বিয়ের পিঁড়িতে বসা রকি কুমার ঘোষের পরবর্তী গন্তব্য মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলেই নিশ্চিত করেছেন তাঁর ঘোনিষ্টজনরা। যদিও বিয়ের ব্যস্ততায় থাকার কারণে রকি কুমার ঘোষ ফোন রিসিভ করতে পারেননি বলে জানান তাঁর ঘোনিষ্টজনরা।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব বলেন, ‘সভাপতি বিয়ে করেছেন তাঁর জন্য শুভ কামনা রইলো। তাঁর ভবিষ্যৎ মঙ্গল হোক এই কামনা থাকবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগঠনে আরো বেশ কয়েকজন বিয়েধারী আছেন। তাঁরাও হয়তো ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণে বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে রেখেছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন রুবেল, মোরসালিন হক রাবু ও আমিক হোসেন দ্বিপু, যুগ্ম-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দ্বীপন, ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ঝিলিকও বিয়ে করে ফেলেছেন এরই মধ্যে।
এদিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ সরকার বলেন, ‘বিয়ের কথা প্রায় আগেই পাকা ছিল। কিন্তু ১৭ তারিখে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে পোক্ত চাই। সাধারণ মানুষের পাশেই রাজনীতির মাধ্যমে থাকতে চাই।’
জেলার আরেকজন শীর্ষ নেতাও এরই মধ্যে গোপনে বিয়ে করেছেন বলে কথিত রয়েছে। এর বাইরে জেলার ১২১ সদস্যের মধ্যে আরো অন্তত ১৫ নেতা বিয়ে করে বসে আছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন একাধিক নেতাকর্মী।
এভি-১