নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ রাজশাহীতে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার সর্বত্র। এইজন্য সিলিন্ডার নিয়ে দুর্ঘটনার আতঙ্কও রয়েছে মানুষের মধ্যে। তবে এবিষয়ে সচেতনতাও নেই বললেই চলে। শুধু তাই নয়, রাজশাহীতে নেই গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষার ব্যবস্থাও।
সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এলপি গ্যাস বা সিএনজি গ্যাস কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নিয়মের তোয়াক্কা করে না। আবার ক্রেতারাও বিষয়টি নিয়ে অসচেতন। তাই সতর্কের জায়গা প্রসারিত করা না গেলে ভবিষ্যতে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। ব্যবসায়ী ও ক্রেতার নিয়ম মানতে সরকারি সংস্থার পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।
গ্যাস নগরজীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গ্যাস দিয়ে হয় রান্না, চলে কল-কারখানা। আবার একস্থান থেকে আরেকস্থানে যেতেও গাড়িতে ব্যবহার করা হয় গ্যাস। ফলে বলা যায়, সর্বত্রই গ্যাসের ব্যবহার। অথচ রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার নিয়ে অসচেতনতা রয়েছে দুই পক্ষেরই। ব্যবসায়ীরা যেমন মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার গ্রাহকদের কাছে দেদারসে বিক্রি করছেন। গ্রাহকরাও কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিনছেন। ফলে মাঝেমাঝেই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। তার একটাই কারণ অসচেতনতা। আর পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রেও নেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও যন্ত্রপাতি।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের রাজশাহী এরিয়া সেল্স ম্যানেজার জিয়াউল হক বলেন, মংলা প্লান্টে তাদের গ্যাসের সিল্ডিন্ডারগুলো পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া তৈরির পরে একটি সিলিন্ডার প্রায় ৩৫ বছর চলে। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের রঙ নষ্ট বা অন্য সমস্যা হলে প্লান্টে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঠিক করা হয়।’
অন্যদিকে, রাজশাহীর পরিবহনে সিএনজি গ্যাস সরবরাহ প্রতিষ্ঠান মেসার্স এনবি ফিলিং সিএনজি স্টেশনের দেওয়ালে কয়েকটি উপদেশ লিখেই দায় সেরেছেন তারা। গণপরিবহনের সিএনজি সিলিন্ডারগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
পরিবহন চালকরা বলছেন, গাড়ি কেনার পরে সিলিন্ডার লাগানো হয়েছে। তখন তারাই গাড়িতে সিলিন্ডার পরীক্ষানিরীক্ষা করে লাগিয়ে দেন। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রুটি দেখা দেয়নি। তবে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তারা ওয়ার্কশপে মেরামত করে নেন।
মেসার্স এনবি ফিলিং সিএনজি স্টেশনের ইঞ্জিনিয়ার ইমাম বলেন, সিএনজি গাড়ির সিলিন্ডার চেক করার কোনো দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই। তাদের কাজ শুধু গ্যাস বিক্রি করা। চালকরা আসে, এসে গ্যাস নিয়ে চলে যায়। সিলিন্ডারে ত্রুটি আছে কি না তার দেখা হয়না।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, এটা পুলিশের কাজ। পুলিশ রাস্তায় যেভাবে গাড়ি ধরে কাগজ দেখে, সেইভাবেই সিলিন্ডারেরও কাগজ দেখা উচিত।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন দোকানগুলোতেও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে করতে দেখা যায়।
অনেকে গ্যাস বেচাকেনার কাজও করেন। তারাও সিলিন্ডার ত্রুটিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করতে পারেন না। ফলে বলা যায়, সবমিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
নগরীর কাজিহাটা এলাকার মেসার্স মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর রিয়াজুর রহমান বলেন, রঙ নষ্ট বা কোনো ধরনের ত্রুটি থাকলে তিনি সিলিন্ডার নেন না। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে তিনি অনেকটাই সচেতন থাকেন বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
এবিষয়ে রাজশাহী বিস্ফোরক অধিদফতর পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী জেলায় ৪০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সিলিন্ডার কেনাবেচার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ২২টি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো প্রতিষ্ঠান রাজশাহী জেলায় নেই। তাই পরীক্ষার প্রতিবেদন বগুড়া থেকে নিয়ে আসতে হয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার ও বিক্রয়ের সকল ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে।
গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনার মধ্যে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বেলুন ফোলাতে গ্যাস ব্যবহারের সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৪ জন আহত হন।
আহত হোন, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সিভিল প্রশাসনের ইলেকট্রিশিয়ান ওয়াহেদুজ্জামান ও মঞ্জুর রহমান এবং নগরীর সিরোইল কলোনি এলাকার সেলিম ও রবিউল ইসলাম।
২০১৫ সালের ২২ মে নগরীর মোল্লাপাড়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে মাইক্রোবাস (চট্টমেট্টো-ট-১১-১১৩০) সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়। তবে মুহূর্তে মাইক্রো থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে রক্ষা করেন চালক রুবেল হোসেন।
২০১৬ সালে ২১ ডিসেম্বর নগরীর হেতম খাঁ ছোট মসজিদ এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়সাল আলী নামে একজন আহত হয়। পরে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
একই বছরের ৮ মে নগরীর কাজীহাটা এলাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ইমদাদ হোসেন (৪০) নামে দমকল বাহিনীর এক কর্মী গুরুতর আহত হন।
২০১৩ সালের ১৪ জুলাই নগরীর চন্ডিপুর এলাকার একটি বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৯ জন আহত হয়।
আহতরা হলেন, বিনা মূর্মু (২৮), রোকেয়া (৩৫), জোবেদা (৩৩), ছন্দা (২০), পপি (৩৮), আবদুস সালাম চাঁদ (৪২), মাসুদ (৩২), হায়দার আলী (৬০) ও রাতুল (২৪)। আহতদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে