রাজধানীর গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই

Ava Desk : রাজধানীর গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই। বাস মিনিবাসগুলো নিয়ম মেনে চলছে না। অনেক বাস ও চালকের কাগজপত্র ঠিক নেই। একইভাবে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। এসব বন্ধে কোনো পদক্ষেপই তেমন কাজে আসছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশের চলমান অভিযানগুলোতে যানবাহনের ফিটনেস, রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার দিকেই যত মনোযোগ। অথচ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। রাজধানী ও আশপাশের রুটে চলাচলকারী বাসে সিটিং সার্ভিসের নামে লাগামহীনভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাসের ভাড়া আরও বাড়িয়েছে। যাত্রীর পকেট কেটে ভাড়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার নতুন হাতিয়ারের নাম ‘স্পেশাল’ সার্ভিস। দিনে দিনে প্রতারণামূলক এই সার্ভিসের রুট ও বাসের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বাস লোকাল স্টাইলে চললেও আদায় করা হচ্ছে সিটিংয়ের নামে গলাকাটা ভাড়া। একই রুটে একেক গাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বড় বাসে সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকার ভাড়ার নিয়ম কেউ মানছে না। শুধু তাই নয়, সিটিং সার্ভিসের নামে পৃথক বাসের রুট পারমিট ও ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টিও ঝুলে আছে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বদনাম ঘোচানোর জন্য সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযানে নেমেছিলেন পরিবহন মালিকরা। ওই অভিযানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) অংশ নেয়।
এর পরই রাজধানীজুড়ে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে তারা। ওই সংকট সৃষ্টির ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে বিআরটিএ ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ে এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়। এর পর থেকে সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিআরটিএ’র সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী যুগান্তরকে বলেন, আইনে সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিল নামে ভাড়া আদায়ের কোনো বিধান নেই। এসব কথা বলে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও কোনো সুযোগ নেই।
বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা ও প্রতি কিলোমিটার ১.৭০ টাকা এবং মিনিবাসে সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা ও কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১.৬০ টাকা। এর বেশি ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে, জুলুম করে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ আমরাও পাই। মোবাইল কোর্টের অভিযানে এসব অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অপর দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল করীম যুগান্তরকে বলেন, বেশি ভাড়ার বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়টিকে আমার বেশি গুরুত্ব না দিয়ে লাইসেন্স ও ফিটনেস পরীক্ষা এবং সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর দিকে বেশি মনোযোগী। তবে পর্যায়ক্রমে আমরা ভাড়ার বিষয়গুলোও দেখব।
সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফারুক হোসাইন জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে ওয়েবিলের নামে সর্বনিু ভাড়া ১০ টাকা আদায় করছে। আগে মোহাম্মদপুর থেকে কাটাবন বা শাহবাগ ১৫ টাকা ভাড়া নিত, এখন তা বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।
এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটিও হচ্ছে। মানসম্মান হারানোর ভয়ে অনেক যাত্রী প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করেন। বনানীতে একটি বেসরকারি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, আজিমপুর বা নিউমার্কেট থেকে ভিআইপি ২৭ নামের গাড়িতে উঠে ফার্মগেট, বনানী বা উত্তরা যেখানেই নামি না কেন ৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এটা কিসের নিয়ম? নিউমার্কেট থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ৫০ টাকা হয় কোন যুক্তিতে? আমি বনানী নামলে কেন উত্তরার ভাড়া দেব।
সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অনেক বাসে বেশি ভাড়া নেয় সত্য।
তবে এই মুহূর্তে আমরা চুক্তির চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন, রুটপারমিটবিহীন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। একসঙ্গে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে সব ধরব।
জানা গেছে, আরটিসিভুক্ত রুটের সংখ্যা ৩৫৯টি। এর মধ্যে কয়েকটি রুটে যাত্রী কম থাকায় সেসব রুটে তেমন একটা গাড়ি চলে না। বাস মালিকদের হিসাবে, এসব এলাকায় পাঁচ হাজারের কিছু বেশি বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। আর শ্রমিক সংগঠনের মতে, চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা কমবেশি চার হাজার ৭০০টি। তবে বিআরটিএ’র তথ্যমতে এসব এলাকায় বাস পাঁচ হাজার ২৪৭টি ও মিনিবাস দুই হাজার ৬৯২টি।
সব মিলিয়ে বাস-মিনিবাসের সংখ্যা সাত হাজার ৯৩৯টি। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বেশির ভাগ বাসই সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এসব বাসের বেশির ভাগই রংচটা, পুরনো এমনকি যাত্রীদের বসার ভালো সিটও নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করছে। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে চালক ও হেলপারের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতিও হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর প্রেস ক্লাব, ফার্মগেট, বনানীসহ কয়েকটি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রায় সব রুটের বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কোনো তালিকা নেই। আইন অনুযায়ী, দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার তালিকা রাখার বিধান রয়েছে। তবে এসব বাসে মালিক নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হয়। ‘ওয়েবিল’ অনুযায়ী এসব ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিলোমিটার বা সর্বনিু কোনটাই মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বাসগুলোতে সিটিং সার্ভিসের কথা বলা হলেও তা মানতে দেখা যায়নি।
সোমবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটের নিউ দীপন (গাড়ি নম্বর ব-১১-৯১৮৩) ও যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের খাজাবাবা (গাড়ি নম্বর ব-১৪-৫৭৩৭) নামের গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে।
নিউ দীপন গাড়িতে যাত্রীরা শুধু দাঁড়িয়ে নয়, গেটেও ঝুলতে দেখা গেছে। একইভাবে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় নিউ ভিশন, তানজিল, বিহঙ্গ, ওয়েলকামসহ আরও কয়েকটি বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। অথচ এসব বাসে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়াও যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রেস ক্লাবের সামনে একই স্থানে অবস্থান করছিলেন ১৮টি বাস কোম্পানির সুপারভাইজাররা। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিটি গাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থান পর পর ওয়েবিলে স্বাক্ষর করা হয়। যাত্রীকে ওয়েবিল অনুযায়ী ভাড়া দেয়ার নিয়ম করে দিয়েছেন মালিকরা। আমরা শুধু কতজন যাত্রী আছেন তা লিখে দেই। ওই সংখ্যা অনুযায়ী কন্ডাক্টর থেকে ভাড়া বুঝে নেন বাস মালিক বা কোম্পানি।
আরও জানা গেছে, ফার্মগেট থেকে ওয়েলকাম, তানজিল, স্বজন, নিউভিশন, বিকল্প, বিহঙ্গ, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এয়ারপোর্ট পরিবহনের বাসে শাহবাগ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা হারে। বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী, ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্ব।
এ হিসাবে বাসের ভাড়া চার টাকা ও মিনিবাসের ভাড়া চার টাকার কম হওয়ার কথা। সর্বনিু ভাড়া হিসেবে এ দূরত্বে বাসে সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকা। কিন্তু বাস মালিকরা এ ভাড়া মানেন না। তারা ১০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। একই বাসে প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান ও মতিঝিল পর্যন্তও ১০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
অপর দিকে আজমেরী গ্লোরি, স্কাইলাইন, প্রভাতী-বনশ্রী, বলাকা বাসে বনানী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ নাবিস্কো, সাতরাস্তা বা মহাখালী থেকে উঠলেও নেয়া হচ্ছে ওই ভাড়া। বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী, গুলিস্তান থেকে বনানী পর্যন্ত ভাড়া সর্বোচ্চ ১৯ টাকা ও নাবিস্কো থেকে ১৪ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা। কিন্তু বাসগুলো এ নিয়ম মানছে না। উত্তরা থেকে আজিমপুর রুটে চলা বিকাশ পরিবহনেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। উত্তরা থেকে শাহীন কলেজ পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ১৫ টাকা।
অথচ শাহীন কলেজ থেকে আজিমপুর পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা আদায় করছে এ পরিবহনটি। মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরা চলাচল করছে ভূঁইয়া পরিবহনের বাস। এ বাসটিতে আগারগাঁও থেকে উঠে যেখানেই নামুক ভাড়া গুনতে হয় ২০ টাকা। মোহাম্মদপুর থেকে উঠলেই দিতে হয় ১০ টাকা। সদরঘাট থেকে গাজীপুর চলাচলকারী সুপ্রভাত নামের গাড়ি গত কয়েক মাস আগে স্পেশাল শব্দ যুক্ত করে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে। এ গাড়িতেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। Jugantor

Next Post

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

বুধ আগস্ট ১৫ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলেও তাদের ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। নূর চৌধুরী কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, শরিফুল হক ডালিম স্পেনে এবং মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে আছেন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links