এক এমপির হাত ধরে উত্থান, আরেকজনের প্রশ্রয়ে পাপের জগতের রানী পাপিয়া ।

আভা ডেস্কঃ নরসিংদী জেলার এক এমপির হাত ধরেই যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছে। আর তার অপরাধ জগতে বিস্তার ঘটেছে জেলার আরেক এমপির প্রশ্রয়ে।

যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তারা বলেন, নরসিংদীর সাবেক এক এমপির সুপারিশে পাপিয়া ২০১৪ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। ওই এমপি গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কয়েক বছর ধরে পাপিয়া নরসিংদীর বর্তমান এক এমপির সমর্থন পাচ্ছিলেন।

তার প্রভাব খাটিয়ে সংগঠনে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন বলে যুব মহিলা লীগের এই নেত্রীরা অভিযোগ করেন। তারা জানান, এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী এবং ঢাকার সংরক্ষিত নারী আসনের এক এমপির আস্থাভাজন ছিলেন তিনি।

এদিকে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সেখানে চলছিল নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।

সম্প্রতি যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-পুলিশের তদন্তের ঠিকানা হয়ে উঠেছে ওয়েস্টিন হোটেল। দেশি-বিদেশি তরুণীদের এনে রুম ও স্যুট ভাড়া করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জমজমাট বাণিজ্যতেও বাধা নেই হোটেলটিতে।

নিয়ম-নীতিরও বালাই ছিল না সেখানে। অথচ তারকা এই হোটেলে বোর্ডারদের প্রতিদিনকার তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশেষ করে সুইমিংপুলে ডুলুডুলু চোখে ৬ নারীর জলকেলির ভাইরাল হওয়া ভিডিওর পর প্রশ্ন উঠেছে হোটেল ওয়েস্টিনে আসলে হচ্ছেটা কী? তবে এসব নিয়ে ওয়েস্টিনের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পাপিয়ার মোবাইল ফোন থেকে র‌্যাব সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ ব্যক্তিদের ভিডিও উদ্ধার করেছেন। অনেকের সঙ্গে পাপিয়ার ছবি ও ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে।

এমন এক ভিডিওতে ওয়েস্টিনের মূল মালিক নূর আলীকেও হোটেলের একটি স্যুটে পাপিয়াসহ বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গেছে।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, পাপিয়ার সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচনসহ নূর আলী নানা বিষয়ে কথা বলছেন। হোটেলটির মালিকের সাঙ্গে পাপিয়ার পাশের সোফায় হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা যায় অল্পবয়সী বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণীকে। ইতিমধ্যেই ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

২২ ফেব্রুয়ারি আটকের পরই র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেছিলেন, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে আসছিলেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা কারও পক্ষেই সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

গুলশানের ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটটি ভাড়া নিয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী মাসের পর মাস কী করছিলেন, তা ওই পাঁচতারা হোটেলের মালিক ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষের শীর্ষ ব্যক্তিরা ভালোভাবেই জানতেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা সেদিন জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই র‌্যাব পাঁচ তারকা ওই হোটেলটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রবেশদ্বারে স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

পাপিয়া ও তার স্বামীসহ সহযোগীদের গ্রেফতারের পর র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘পাপিয়া হোটেলের ভেতরে তার কক্ষে এসব অপকর্ম করেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার অবৈধ কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা বা তার কার্যক্রমকে বেগবান করতে অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি বলেন, যদি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতারের মামলাটি তদন্তের জন্য রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে গ্রেফতার ও রিমান্ডের পর থেকে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে র‌্যাব। ইতিমধ্যেই র‌্যাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্তের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রথম থেকেই পাপিয়ার এসব অপকর্মের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে র‌্যাবের একটি টিম কাজ করছিল। র‌্যাব সদস্যরাই স্বামী ও সহযোগীসহ পাপিয়াকে আটক করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে। তদন্তের দায়িত্বও র‌্যাব পাবে বলে ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।

বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সরাইখানা আইনে আছে, আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন কারা অবস্থান করবে তাদের তালিকা নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে। দেশি-বিদেশি যারাই থাক না কেন, তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা জমা দিতে হবে।

তবে এত বেশিসংখ্যক আবাসিক হোটেল যে প্রতিনিয়ত সেটি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রতিনিয়ত করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয় এবং পুলিশেরও তদারকিতে অসুবিধা হয়। তাই খুব বেশি তদারকি করা হয় না বলে তিনি স্বীকার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোটেলটির দিনের চিত্র এক রকম। সন্ধ্যা হতেই বদলে যায় এর ভেতরকার দৃশ্যপট।

পাঁচতলায় সুইমিংপুল ও বারের পাশে অনুমোদনহীন সিসা বারে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। তবে পাপিয়াকাণ্ডের পর সেখানে চলছে রাখঢাক। সিসা বার বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত আসতেন ধনাঢ্য পরিবারের এমন সন্তানদের আনাগোনা কমে গেছে বলে জানা গেছে। ভবন নির্দেশিকা মতে, টপফ্লোরে রেস্টুরেন্ট, বার ও বেলকুনিতে কফি শপ।

নিচতলায় স্ন্যাকস বার-মদের বার। দোতলায় একই ব্যবস্থা। পাঁচতলায় স্পা, মেসেজ পার্লার ও সুইমিংপুল। ২১ ও ২২ তলায় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। সেখানকার একটি স্যুটে গত বছরের ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২০ দিন ছিলেন পাপিয়া। এ ছাড়া গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তিনি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে আটকের সময়ও তার নামে ওই স্যুটটি বুকিং ছিল।

যুগান্তর

Next Post

আসুন জেনে নিই যেসব খেলনা শিশুদের জন্য বিপজ্জনক-

শুক্র ফেব্রু. ২৮ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ শিশুরা সাধারণত খেলতে ভালোবাসে। তবে সব খেলনা দিয়ে খেলা শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। কিছু খেলনা রয়েছে শিশুর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। কিছু খেলনা রয়েছে যা শিশুর জন্য নিরাপদ ও জ্ঞান উদ্দীপিত করে। ঝুমঝুমি ও বিভিন্ন আকার ও রঙবেরঙের খেলনা তাদের দৃষ্টির বিকাশ করে। তবে কিছু খেলনা বা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links