রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নীতিমালা ভেঙে হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ ।

আভা ডেস্কঃ  মেয়াদপূর্তির পরও বিপুল অংকের আমানত ফেরত দিতে গড়িমসি করছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। উল্টো উচ্চ সুদে একের পর এক নবায়ন করে চলেছে এসব আমানত। এতে তহবিল খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চরম তারল্য সংকটে এখন আমানত সংগ্রহে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে ব্যাংকটি।

সূত্রমতে, গত বছরের জুলাই শেষে ঢাকা কর্পোরেট শাখার শীর্ষ ১০ গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির দায় মোট ১ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। এ টাকা ফেরত দিতে না পেরে কয়েক দফা নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদহারে এ নবায়ন করতে হয়েছে তাদের। এসব গ্রাহকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৩০০ কোটি, ইইএফ ফান্ডের ১৫৮ কোটি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১১০ কোটি, জীবন বীমা কর্পোরেশনের ৯১ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ১০০ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১০০ কোটি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেডের ৬০ কোটি, গৃহায়ন তহবিলের ৫৬ কোটি, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৫০ কোটি এবং পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির (গ্র্যাচুয়িটি তহবিল) কাছে ৪৩ কোটি টাকা দায় রয়েছে রাকাবের।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, অগ্রণীর কিছু আমানত রাকাবে আছে। তারা সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করলে কোনো অসুবিধা নেই। তবে উল্লিখিত হার কার্যকর করতে না পারলে সুবিধাটি বন্ধ করে দেব। তাদের প্রতি সহানুভূতি আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই।

রূপালী ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) শওকত জাহান যুগান্তরকে জানান, রাকাবে ১০০ কোটি টাকার আমানত রেখেছে রূপালী ব্যাংক। তারা ৯ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করছে। এরইমধ্যে তিনবার নবায়ন করেছি। সব ধরনের আমানত ৬ শতাংশ সুদে দেয়া-নেয়া সংক্রান্ত সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এটা আমানত নয়, বিনিয়োগ। আমরা ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করে ৯ শতাংশ সুদে রাকাবের কাছে বিনিয়োগ করেছি। যদি রাকাব ৯ শতাংশ সুদ দিতে না পারে? জবাবে তিনি বলেন, তাহলে আমাদের পক্ষেও সুবিধাটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।

রাকাব চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ৯ শতাংশ সুদহারে নবায়নের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তবে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি আমানতের সুদ ৬ শতাংশ পরিশোধ করতে চাই। কিন্তু তারা জোর করে বেশি নেয়।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে পরিচালিত বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে রাকাব। কিন্তু এ সময়ে ঋণ বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা, যা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ১০০ টাকা আমানতের মধ্যে ৮৫ টাকা বিতরণ করতে পারবে তফসিলি ব্যাংকগুলো। রাকাব এ নীতি ভঙ্গ করে শতকরা ১১৯ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও বা এডিআর নীতিমালা ভঙ্গ করে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বেশি বিতরণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাকাব চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে এডি রেশিও বেড়ে যায়। গ্রামের মানুষ আমানত রাখে কম, ঋণ নেয় বেশি। সে কারণেই এমনটি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম এবং ঋণখেলাপির কারণে চরম তারল্য সংকটে ভুগছে রাকাব। তাই তহবিলের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ব্যাংকটি। তারল্য সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বর্তমানে দারুণ তারল্য সংকটে ভুগছি। কারণ বিদায়ী বছরে রাকাবকে কোনো ভর্তুকি দেয়নি সরকার। তবে তিনি এও দাবি করেন, তারল্য সংকটে ভুগলেও কাউকে টাকা ফেরত না দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।

সূত্র জানায়, পর্যাপ্ত আমানতের অভাবে ঠিকমতো ঋণ বিতরণ করতে পারছে না রাকাব। আমানত চেয়ে সরকারের ২০ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে রয়েছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশের সার্বিক কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং কৃষিঋণের চাহিদা পূরণে আপনাদের মন্ত্রণালয়ের আমানত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে সংরক্ষণ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাকাব ৪২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। এমতাবস্থায় দেশের সার্বিক কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে আমানত হিসেবে প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হল।’ এ বিষয়ে রাকাব চেয়ারম্যান বলেন, এখনও কোনো প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২০ শতাংশের উপরে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৭০১ কোটি টাকা।

যুগান্তর

 

Next Post

রাজশাহীতে স্কুল ছাত্রীর ছবিসহ ফেইসবুকে অশ্লীল পোস্ট, আটক-২ ।।

সোম জানু. ৬ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীতে স্কুলছাত্রীর (১৪) ছবি দিয়ে ফেসবুকে অশ্লীল কথাবার্তা লেখার অভিযোগে নারীসহ ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে লাভলী(৩০) নামের এক নারীকে আটক করে পুলিশ। আটক লাভলী শিরোইল কলোনী এলাকার রকি্র স্ত্রী । পরে লাভলীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার সারোয়ারের ছেলে  সানি (২৫) […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links