আভা ডেস্কঃ রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। গত শনিবার (২৭ মে) তাদের হলফনামা প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) যাচাই-বাছাই শেষে চার মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১৭ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৈধ চার মেয়র প্রার্থী হলেন—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন, জাকের পার্টির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলনের মহানগরের সহ-সভাপতি মুরশিদ আলম।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীরা হলফনামায় নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য ও বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছেন।
খায়রুজ্জামান লিটন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি মেয়র হন খায়রুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজশাহী মহানগর যুবদলের তৎকালীন সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে পরাজিত হন। তবে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে আবারও মেয়র হন তিনি। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। তার স্ত্রী শাহীন আকতার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খায়রুজ্জামান লিটনের বার্ষিক আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে। ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনের সময় তার স্ত্রী শাহীন আকতারের কোনও আয় না থাকলেও বর্তমানে ব্যবসা থেকে বছরে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করছেন।
এবার খায়রুজ্জামান লিটনের আয় বেড়েছে তিনগুণের বেশি। গত নির্বাচনের সময় বছরে আয় ছিল ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। এবার আয় বেড়ে হয়েছে দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে চার কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকার। গত মেয়াদে এই সম্পদের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৭০ টাকা। গত মেয়াদের তুলনায় এই সম্পদ দ্বিগুণের বেশি। এরমধ্যে এবার নগদ সাত লাখ দুই হাজার ২৩৭ টাকা রয়েছে। গতবার ছিল ৩০ হাজার টাকা। এবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা। গতবার ছিল এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা। এবার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। গতবার এই খাতে কোনও বিনিয়োগ ছিল না। এবার জিপ ও কারের মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গতবার ছিল ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার ৫৩ হাজার ৮৬২ টাকা, গতবার একই ছিল। বৈদ্যুতিক সামগ্রী এবার ২৫ লাখ, আসবাবপত্র সাত লাখ এবং একটি শটগান ও পিস্তল মিলে ছয় লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।
বর্তমানে দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজারের মধ্যে কৃষি খাতে আয় দুই লাখ ৩০ হাজার, বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খাতে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, মাছ চাষ থেকে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা ও সম্মানি ভাতা ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত মেয়াদে মৎস্য খাতে আয় দেখানো হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। হিসাবে এই খাতে আয় বেড়েছে ১২ গুণের বেশি।
২০১৮ সালে নির্বাচনি হলফনামায় খায়রুজ্জামানের আয় ছিল ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। এরমধ্যে কৃষি খাত থেকে এক লাখ ৬০ হাজার, বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৫০০, ব্যবসা থেকে ৩২ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংকে আমানত ২০ লাখ ১০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় ১৯ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা।
ব্যাংক ঋণ আছে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা
আওয়ামী লীগের এই নেতার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে ৪.৬৩ একর কৃষি জমি, উপশহরে তিনতলা বাড়ি এবং ঢাকার বনানীতে অ্যাপার্টমেন্ট। এ ছাড়া ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকা মূল্যের চা-বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামার রয়েছে। স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় তিন কোটি ১৯ লাখ টাকার।
হলফনামা অনুযায়ী, বিএ অনার্স (এলএলবি) পাস করেছেন খায়রুজ্জামান। পেশায় আইনজীবী ও রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
আয় ও সম্পদ বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। এটুকু তো থাকবেই। যা বৈধ আছে, তাই দেখানো হয়েছে।’
সাইফুল ইসলাম
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপনের হলফনামায় দেখা গেছে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। কোনও মামলা নেই। ব্যবসা থেকে বছরে আয় তিন লাখ টাকা। কিন্তু কী ব্যবসা করেন, তা উল্লেখ করেননি। ব্যাংকে নগদ টাকা আছে তিন লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার। এ ছাড়া ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। কৃষিজমি ৪.৫০ বিঘা ও অকৃষি জমি ১২ শতক আছে।
লতিফ আনোয়ার
জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার পেশায় আইনজীবী। হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন এলএলএম। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ আছে দুই হাজার টাকা। ইলেকট্রনিকস ও আসবাবপত্র মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা। তার পেশাগত বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা।
মুরশিদ আলম
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলমের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া আছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার চন্দনপাট গ্রামে। বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর দাশপুকুর এলাকার বাসিন্দা। হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল (মাস্টার্স) পাস দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা নেই। বছরে আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে কোন পেশা থেকে আয় করেন, তা দেখাননি। সম্পদের বিবরণে বলা হয়েছে, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও একটি মোটরসাইকেল আছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাদে বাকিরা এবার মেয়র পদে নতুন।
আগামী ২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৫৭। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন, আর নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এবার ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। ২ জুন থেকে প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন