বিএনপি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

Ava Desk: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন * চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না * আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই * নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে
সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে- এমন অভিযোগ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনও আর হবে না। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। অবিলম্বে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে বলেও জানান ফখরুল।
রোববার উত্তরায় নিজ বাসায় যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারা অন্তরীণ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকার পরও সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় এবং উজ্জীবিত করতে রাখছেন বিশেষ ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, দল পরিচালনায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। চেয়ারপারসনের পরামর্শ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় সিনিয়র নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই দল পরিচালিত হচ্ছে। আমরা এখন আগের থেকে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচেন যাবেন কি না- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, চেয়ারপারসনকে ছাড়া নির্বাচনে যাব, সেরকম সিদ্ধান্ত আমরা এখনও নিইনি। নির্বাচনে আমরা তখনই যাব, যখন একটি পরিবেশ তৈরি হবে, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ হবে। নির্বাচনে যাওয়ার পূর্বশর্তই হচ্ছে- চেয়ারপারসনের মুক্তি। নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করতে হবে, যারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। যারা বন্দি আছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন কোনো মামলা দেয়া যাবে না। বলতে পারেন, এগুলো আমাদের শর্তও। এসব না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সদিচ্ছা ও লক্ষণ এখন পর্যন্ত সরকারের দেখা যাচ্ছে না। উল্টো তারা এটাই চাচ্ছে বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে। তারা ভিন্ন মতকে দমন করে, স্টিমরোলার চালিয়ে এককভাবে নির্বাচন করতে চায়। সেটাই হচ্ছে তাদের লক্ষ্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারা আশা করেন যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এটাই একমাত্র পথ।
ফখরুল বলেন, ২০১৪’র জানুয়ারিতে প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন করে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা আবারও একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, এ সরকারের অধীনে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের এসব দাবি বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে হবে। অন্য কোনো পথে যাওয়ার মতো দল আমরা নই। দাবি আদায়ে বিএনপিকে রাজপথে দেখা যেতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা আন্দোলনের মধ্যে আছি। কখনও রাজপথে থাকি, কখনও থাকব না- এটাই আন্দোলন।
সংকট নিরসনে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের কোনো আহ্বান জানাবেন কি না- জানতে চাইলে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আপাতত আমাদের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে- সরকারি দলের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, এটা সরকারের ধারণা। বিএনপি ছাড়া দেশে এমন কোনো দল নেই যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। বিএনপি ছাড়া কোনো নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না, সোজা কথা।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ বা সমঝোতার সুযোগ নেই- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) কী বললেন, না বললেন, তাতে সবসময় বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে না। তিনি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, যারা এরই মধ্যে জনগণের ঘৃণার পাত্র হয়েছেন। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের হাত থেকে জনগণ নিস্তার চায়, মুক্তি চায়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নৈতিকভাবে কোনো ভিত্তি নেই। তাদের নৈতিক কোনো বৈধতাও নেই। তারা গণবিচ্ছিন্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয়ে তারা টিকে আছে। রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। এটা দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবির সহায়তায় দেশ চালাতে হয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে নেয়া হবে না- সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার চাচ্ছি। যারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে।
সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে ফখরুল বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি। ওইসব দলের নিজস্ব চিন্তাভাবনাও রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কয়েকটি ইস্যুতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা যায় কি না। এ ব্যাপারে কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছি। বলা যায়, এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়া সফল হবে কি হবে না, তা বলার সময় এখনও আসেনি।
বিএনপি নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। ২০০৮ সালে মাত্র ১২ দিনের নোটিশে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।
রাজপথে আন্দোলনে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে, সামনের আন্দোলনে সাংগঠনিকভাবে কতটা প্রস্তুত- এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, বিএনপি বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে অতীতের চেয়ে অনেকটা শক্তিশালী। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ আছেন। গত কয়েক বছরে রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি দল পুনর্গঠনের নজর দেয়া হয়েছে। অনেকটাই গুছিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলন সবসময় কমিটির ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশের কোন আন্দোলন কমিটির ওপর নির্ভর করে হয়েছে। আন্দোলনের দাবিদাওয়া যদি জনসম্পৃক্ত হয়, জনগণ যদি সমর্থন করে, তবে আন্দোলন সফল হবেই। আমাদের দেশে সব আন্দোলনেই মূল ভূমিকা পালন করেছে জনগণ।
আরপিওতে ইভিএম অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ইভিএম নিয়ে শুধু আমরা নই, অনেক দলই আপত্তি জানিয়ে আসছে। তারপরও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হবে না। হঠাৎ করে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এ কমিশনই শপথ নেয়ার পর বলেছিল, জাতীয় নির্বাচনে তারা ইভিএম ব্যবহার করবে না। সেই অবস্থান থেকে সরে নির্বাচনের তিন-চার মাস আগে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলছে। এতে সবার সন্দেহ বাড়ছে। ইভিএমের যেসব দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে একতরফা নির্বাচনে সরকারকে সাহায্য করতেই এটা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের আবারও ‘ওয়ান ইলেভেনের’ আশঙ্কা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন’ তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। তারা এটার ফল ভোগ করছে। এখন আবার কেন তারা আরেকটি ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ আশঙ্কা করছেন, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনোমতেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। ভবিষ্যতেও কোনো দিন থাকবে না। বিএনপিকে একটা সংকটে ফেলানোই হচ্ছে এ মামলার মূল উদ্দেশ্য। এ মামলায় তিনবার আইও পরিবর্তন হয়েছে। ৬১ জনের সাক্ষীকে জেরা করার পর নতুন করে পুনঃতদন্ত করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে- তারেক রহমান ও বিএনপিকে এর মধ্যে জড়িত করা। এখন চেয়ারপারসনকে নিয়ে নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। যার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই।
জামায়াত ছেড়ে দিতে কোনো চাপ আছে কি না- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো চাপ নেই। তাছাড়া জামায়াতের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত কোনো জোট হয়নি। তারা আলাদা দল, আমরা আলাদা দল। এটা নির্বাচন ও আন্দোলনের জোট। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগও একসময় জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে। আমাদের জামায়াত ছেড়ে দিতে বলছে, তাহলে সরকার কেন জামায়াত নিষিদ্ধ করছে না।
ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে- এমন বার্তা নিয়েই ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে- এটাই এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের মূল বার্তা। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা বিভাগীয় শহরে সফরে যাওয়ারও চিন্তাভাবনা করছি। online

Next Post

বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন বন্ধ থাকবে না : ওবায়দুল কাদের

সোম আগস্ট ২৭ , ২০১৮
Ava Desk: অক্টোবরে মন্ত্রিসভার আকার ছোট হচ্ছে, থাকছে না বিএনপি * খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন কী থাকবেন না, তা আদালতের সিদ্ধান্ত * বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সুযোগ ও সময় নেই * নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না বলে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links