আজাদুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানা ফকির নিটওয়্যারে অসন্তোষের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সিভিল সার্জন ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
এ সময়ে শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে দুই কর্মকর্তার গাড়ি চালদের মাথা ফেটে গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ওই ঘটনা ঘটে। এসময় শ্রমিকদের রোষানলে পড়ে নিজের গাড়ি রেখেই কোন রকম প্রাণ বাঁচিয়ে চলে আসেন জেলা করোনা সমন্বয় কমিটির ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সদর উপজেলার ফতুল্লার কায়েমপুরে ফকির নিটওয়্যারে গত কয়েকদিন ধরেই শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। শ্রমিকদের দাবী, গত কয়েক মাসের বকেয়া বেতন আটকে আছে তাদের। পাশাপাশি বোনাস নিয়েও কারখানা কর্তৃপক্ষ তালবাহনা করছে।
শ্রমিকরা বলেন, গত ২ মাস ধরে লকডাউনের মধেও কাজ করার পর আমাদের হাফ বোনাস দিতে চায়। আমরা এটা প্রত্যাখান করেছি। কারণ আমরাতো হাফ কাজ করিনি।
শ্রমিকেরা পুরো সময় ধরেই কাজ করেছে। মালিক পুরো বোনাস দিতে চাইলেও জিএম ও এডমিন মূলত তালবাহনা করছেন বলে জানা গেছে। এসব অভিযোগে সকাল ১০টা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করতে থাকে।
এরই মধ্যে বেলা ১১টায় ওই কারখানায় ১০ জন করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকের বিষয়ে কথা বলতে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এবং জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা গাড়ি ২টি মালিক পক্ষের মনে করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কারখানায় নির্মাণকাজে ব্যবহৃত লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।
হামলায় সিভিল সার্জনের গাড়ির চালক সুরজ্জামানের মাথা ফেটে যায় এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়ির চালক জালাল মিয়া আহত হন।
শ্রমিকেরা জাহিদুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সিভিল সার্জন তার গাড়ি নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও ডা.জাহিদের গাড়ি আটকে রাখে শ্রমিকরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের হাজীগঞ্জ- কায়েমপুর সড়ক প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, ফকির নিটওয়্যারে ১০ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই কারখানায় কেন করোনা রোগী বাড়ছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানা হচ্ছে কিনা সেটি দেখার জন্য তারা পরিদর্শনে যান।
কিন্তু হঠাৎ করে পোশাক শ্রমিকেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তার ও জাহিদুল ইসলামের গাড়ি ভাঙচুর করেন। তিনি কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও জাহিদুল ইসলাম আটকা পড়েন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি মাজিস্ট্রেট ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় গাড়িটি উদ্ধার করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল ইসলাম বলেন, কারখানায় মূলত বেতন ও বোনাসের দাবিতে ওই কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এ ব্যপারে ফকির নিটের মালিক বা প্রশাসনিক কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।