ইলেম শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কিত আলোচনা।

কেই সকল কিছুর উর্দ্ধজ্ঞানে বিশ্বাস করেন অনেকেই। আমরা যেহেতু ইসলামিক মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষ তাই সবার্গ্রে কুরআন ও হাদীস এর বাণী তারপর অন্য কিছু বলেই বিশ্বাস স্থাপন করি। তাহলে পূর্বোক্ত ব্যক্তিদের কি হবে? তারা হয়তো চাপে পরে মেনে নেবেন, কিন্তু মনের গভীরে ক্ষত থেকেই যাবে। কেউ কেউ হয়ত তাদের নাস্তিক বলে বসবেন। এমতাবস্থায় ইসলাম কি বলে বা আমাদের কি করা উচিত? এ কারণেই এ লেখার অবতারণা। প্রথমে আমরা জানার চেষ্টা করব শিক্ষা কি? বিভিন্ন মনিষীদের বক্তব্যও এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। এর পর পবিত্র কুরআন ও হাদীস এর আলোকে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।
শিক্ষাঃ
শিক্ষার সঙ্গা অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে,
বিশিষ্ট দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “নিজেকে জানার নামই শিক্ষা”।
মার্কিন শিক্ষাবিদ ডেউযে বলেছেন, “প্রকৃতি ও মানষের প্রতি বুদ্ধিবৃত্তি, আবেগ ও মৌলিক প্রবণতা বিন্যাস করার প্রক্রিয়াই শিক্ষা”।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার মানব ধর্ম গ্রন্থে লিখেছেন, “মানুষের অভ্যন্তরিন সত্তার পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানো প্রচেষ্টাই হল শিক্ষা”।
হারম্যান হর্ন লিখেছেন, “শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক ও মানষিক দিক দিয়ে মুক্ত সচেতন মানবসত্তাকে সৃষ্টিকর্তার সাথে উন্নত যোগসূত্র রচনা করার একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া, যেমনটি প্রমাণিত রয়েছে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগগত ইচ্ছাশক্তি সম্বন্ধীয় পরিবেশ”।
বিভিন্ন ইসলামী ব্যক্তিত্বও বিভিন্ন সময় শিক্ষার সঙ্গা প্রদান করেছেন যেমনঃ
কবি ও দার্শনিক আল্লামা ইকবাল বলেছেন, “মানুষের খুশির বা রূহের উন্নয়নই আসল শিক্ষা”।
আবদুর রহমান নিহলাওয়ী বলেন, “ইসলামী শিক্ষা হলো ব্যক্তিক ও সামষ্টিক ব্যবস্থা যা ইসলামকে গ্রহণ এবং তা ব্যক্তি ও গোষ্ঠি জীবন পর্যায়ে প্রয়োগের দিকে নিয়ে যায়। অন্য কথায়, তা হলো, ব্যক্ত ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মানুষের চেতনার উন্নয়ন এবং তার আবেগ ও আচরণকে দীনে ইসলামের ভিত্তির ওমর নির্মাণ করা।” (উসুলুত তারবিয়্যাতিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা ২৭)
শায়খ আমীন মুহাম্মদ আউয বলেন, “তা হলো ইসলামী ব্যক্তিত্বের চৈন্তিক, শারীরিক ও সামাজিক সকল দিকের উন্নয়ন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষা অনুযায়ী তার আচরণকে সুন্দর করা।” (আসালিবুত তারবিয়া ওয়াত তালীম ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩৪)।
জগলূল নাজ্জার বলেন, “ইসলামী শিক্ষা হলো ইসলামের ব্যাপকতর অর্থে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা। আল্লাহ যেমন ইসলামের ব্যাপকার্থ প্রকাশে বলেন, আল্লাহর কাছে মনোনীত দীন একমাত্র ইসলাম।” (জগলূল নাজ্জার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৭৯)

এ কথা সর্বজন বিদিত যে ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন ছিলেন তখন প্রথম কুরআন শরীফের প্রথম আয়াত নাযিল হয়, “পড়ো, তোমার পালন কর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক, আয়াত-১) অর্থাৎ বলা যায় যে, ইসলামের শুরুই হয়েছে জ্ঞান আহরণ ও চর্চা করার জন্য। আর জ্ঞানার্জন করার পাশাপাশি মানুষের অন্যতম স্বভাব হচ্ছে চর্চা না করা অর্থাৎ ভুলে যাওয়া, এ সম্পর্কে হাদীস পাকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, “তাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে বলে অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি। বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা কুরআন স্মরণ রেখ। কারণ উট যেমন তার রশি থেকে পালিয়ে যায় কুরআন তার চেয়েও দ্রুত চলে যায় মানুষের বক্ষ থেকে।” (বুখারী: ৫০৩২; মুসলিম: ১৮৭৭)। এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি ইসলামে জ্ঞানার্জন এবং তা চর্চার মাধ্যমে ধরে রাখার প্রতি অসীম গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
প্রসিদ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ঈমাম গাজ্জালী( রঃ) ইসলামের আলোকে জাগতিক শিক্ষাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য এবং দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা মানুষের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমনঃ চিকিৎসা বিদ্যা। কেননা, স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তদ্রুপ গণিত। কেননা লেনদেন, মিরাছ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। একটি জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে তবে সবাই কষ্টে পতিত হবে, একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক জ্ঞানও অপরিহার্য।- ইহইয়াউ উলূমিদ দ্বীন ১/২৯-৩০।
অন্যদিকে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায় তা চর্চা করা হারাম। যেমনঃ ইসলাম বিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরী সাহিত্য ইত্যাদি। অনুরূপভাবে অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ।

পবিত্র কুরআন শরীফ বিশ্লেষণ করলে প্রায় ৭৫০টি আয়াত পাওয়া যায়, যেখানে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয়েছে। তখনকার দিনে মুসলমানরা এই আয়াতগুলোকে বিশ্লেষণের জন্য বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং অবদান রেখেছেন জ্যোর্তি বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ সহ বিজ্ঞানের সকল শাখায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের মাঝে বিজ্ঞানের এত প্রসার ঘটে ছিল যে তা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সে সময় ইউরোপীয়রা আরব দেশের মাদ্রাসাগুলো আসত শিক্ষা গ্রহণ করতে। এখান থেকেই শিক্ষাগ্রহণ শেষে ইউরোপে রেঁনেসা হয়েছিল অর্থাৎ তারা অন্ধকার থেকে আলোর পথে বা জ্ঞানার্জন ও চর্চার পথে ফিরে এসেছিল, যা সর্বজন বিদিত। অথচ আজ আমরা সেখান থেকে অনেক দূরে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে বলছেন, “তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।” আজ আমাদের এমন অবস্থা শক্তি অর্জনের জন্যও সেই পশ্চিমাদেও দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। কারণ শক্তি অর্জনের জ্ঞানও আমাদেও নেই। তাছাড়াও আজ আমরা শক্তি অর্জন বা জ্ঞান চর্চা না করে নিজেদের মাঝে হানাহানী নিয়ে ব্যস্ত। আসুন এক নজরে দেখা যাক কবে থেকে এর সূচনা?
মূলত খোলাফায়ে রাশেদীন এর যুগ থেকেই শুরু এই হানাহানীর যা প্রকট আকার ধারণ করে ইসলামের ৪র্থ খলিফাা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) এর সময় কালে। তার শাসনামলে বেশির ভাগ সময় কেটেছে সিরিয়ার উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়া এবং খারিজী সম্প্রদায় এর সাথে যুদ্ধে। মুয়াবিয়া হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত মেনে নেননি, এজন্য সিফফিনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বাধিত হয়, এক পর্যায়ে হয়রত আলী (রাঃ) এর বাহিনী বিজয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যায়। তখন মুয়াবিয়ার চতুর সেনাপতি আমর ইবনে আস এক অদ্ভুত কৌশল অবলম্বন করেন। তার সৈন্যরা কুরআনের পাতা বর্শায় মাথায় লাগিয়ে ঘোষণা করে “কুরআনের আইনই হোক আমাদের মধ্যে মিমাংসার কর্তৃপক্ষ”। তার এ কৌশল কাজে দেয় এবং হযরত আলী (রাঃ) এর শিবিরে বিভক্তি দেখা দেয়। আলী তার দলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেয় এবং মুয়াবিয়া এবং তার সেনাপতির চতুরতা সম্পর্কে তাদের সর্তক করে। কিন্তু চরম বিভক্তি দেখা দিলে বিরোধী শিবিরের জন্য তিনি মিমাংসায় রাজি হন। আর এ অংশটিই পরবর্তীতে খারিজী হিসেবে দল ত্যাগ করে। এর ফলে আমীর উল মুমেনীন হযরত আলী রাঃ এর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। এই খারিজীরাই ছিল প্রথম ধর্মত্যাগী দল। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০০, এরা ইরাকের হারুরা নামক স্থানে জমায়েত হয়ে দল ভারি করতে থাকে। পরবর্তীতে এরাই হযরত আলী (রাঃ)কে মধ্যস্ততা করার জন্য আল্লাহ আইন অমান্য করার জন্য কুফরীর দায় চাপান। তারা এই মর্মে ফতোয়া জারি করে যে, মানবের আইন মানায় হযরত আলী (রাঃ) কাফির হয়ে গেছে। এখনো আমাদের সমাজে এ ধরণের কথা বহুল প্রচলিত। এখানে উল্লেখ্য যে খারিজীদের বাহ্যিক ধর্ম পালন ছিল অত্যাধিক । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস যখন হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষ থেকে তাদের ঘাঁটিতে যান তাদের কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ মৌমাছির গুঞ্জন এর মত শুনতে পান। তারা প্রথমে বাণিজ্যের কাফেলা লুট করত। এক পর্যায়ে তারা প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন খাব্বাবকে আটক করেন এবং জানতে চান তাদের ও আলীর মধ্যে কে সঠিক পথে আছেন, আব্দুল্লাহ বিন খাব্বাব আলীর পক্ষে মত দিলে খারেজিরা তাকে এবং তার দাসীকে বেঁধে ঘাটিতে নিয়ে যেতে থাকে। পথিমথ্যে এক খারেজি এক খ্রিষ্টানের শুকর হত্যা করলে অন্য খারেজিরা তার সমালোচনা করে এবং ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী খ্রিষ্টানকে শুকরের মূল্য পরিশোধ করতে বলে। এতে আব্দুল্লাহ এই বলে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন তার জীবনের মূল্য কি ঐ শুকরের চেয়েও নীচে? খারেজিরা থাকে পশু জবাইয়ের মতো করে হত্যা করে এবং তার দাসীর পেট কেটে বাচ্চা বের করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে হযরত আলী (রাঃ) নাহরাওয়ান নামক বাগদাদের নিকটবর্তী স্থানে যুদ্ধে খারিজিদের পরাজিত করলেও ৫০০ জনের মত পালিয়ে যায় এবং তাদের মতবাদ প্রচার করতে থাকে। এদেরই একজন আবদুল্লাহ ইবনে মুলজাম বিষ মাখা ছুরি দিয়ে হযরত আলী (রাঃ)কে কুফা মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার সময় হত্যা করেন। আর এভাবেই আসতে আসতে খারিজিদের মতবাদ সাধারণের মাঝে প্রবেশ করতে থাকে। আর মুসলমানরা ধীরে ধীরে জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। অথচ রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (মুসলিম:২৬৯৯) তিনি আরো বলেন, “যে জ্ঞান অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।” (তিরমিজি: ২৬৪৭)
তাহলে বোঝা যায় কুফরি বিদ্যা ব্যতিত সকল শিক্ষাই মুসলমানদের জন্য অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য। তবে হ্যা একজন ব্যক্তির পক্ষে জ্ঞানের সবগুলো রাস্তায় যাওয়া সম্ভব নয়, অর্থাৎ একই ব্যক্তির পক্ষে চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, আইনবিদ, কৃষিবিদ বা দার্শনিক সবকিছু হওয়া সম্ভব নয়। তাই তার পক্ষে যেটা গ্রহণ করা সহজ সে বিষয়েই জ্ঞান অর্জন অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
ধর্মীও শিক্ষার বিষয়েও অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।” (বুখারীঃ ৫০২৭) আরেক হাদীসে আছে, “আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভুত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন। (বুখারি:৭১) এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে আমরা যদি দ্বীন এর শিক্ষাগ্রহণ করি তাহলেই জাগতিক শিক্ষা এবং চর্চার পথ খুলে যাবে। অর্থাৎ কুরআন শরীফে যে বিজ্ঞান সম্পর্কিত ইঙ্গিতগুলো দেয়া হয়েছে তা আমাদেরকে গবেষণা করতে হবে। আমাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত হওয়ায় একে অপরকে দোষী সাবাস্ত করি নাস্তিক, মুরতাদ ঘোষণা করি। আর খারিজিদের মত পিছন থেকে হত্যা করি বা হত্যা করার ঘোষণা দেই বা হত্যা করলে খুশি হই। অথচ আমরা কয়টা হাদীস জানি? আবার মুখে বলি হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। সুতরাং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবিকলভাবে সংরক্ষণ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ তৈরি করা অপরিহার্য তবেই বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে সঠিক ইসলামী শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক প্রজন্মের ন্যায়-নিষ্ঠ লোকেরা দ্বীনের এই ইলমকে ধারণ করবে। তারা সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে একে রক্ষা করবে।” সুনানে বায়হাকী ১০/২০৯
আজ অলিতে গলিতে মাদ্রাসা তৈরী হয়। ধনীদের কাছ থেকে টাকা তুলে গরীবের বাচ্চাদেরকে হাফেজ বানানোর জন্য। অনেকেই হয়ত হাফেজ হতে চায় না হতে চায় অন্য কিছু, কিন্তু সে দিকে আমাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। অনেকেই হাফেজ হলেও ভুলে যায়। যারা হয়, তারা হয়ে যায় ধনীদের মুখাপেখী। আমরাও হয়ত তাই চাই! তা না হলে তাদেরকে কেন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করি? তাদেরকে কেন আমরা সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসি না? বেশিরভাগ মাদ্রাসাগুলোতে কেন বিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়না, গবেষণাতো অনেক দূরের কথা, দিলেতো তারা আর আমাদের কাছে হাত পাতবে না, তাদের নিয়ে উপহাস করা বন্ধ হয়ে যাবে! তারা যখন মসজিদ মাদ্রাসার জন্য টাকা তুলতে আসে, আমরা বলি ভিক্ষা করতে এসেছে। অথচ আমরা আমাদের দান সমূহ সেখানে পৌঁছেও দিতে পারি সাহাবায়ে কেরামের মত! কারণ ইসলামে তো ভিক্ষাবৃত্তি হারাম।
মুসলমানদের এই ইসলামের (জ্ঞান অর্জনের) বিপরীত মুখী অবস্থানের কারণে আজ তারা জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে। আমরা অনেকেই দাবী করি কুরআনের উপর গবেষণা করেই উন্নত বিশ্বের মানুষেরা এত কিছু আবিষ্কার করেছে, তাহলে আমার প্রশ্ন আমরা কি তাহলে কুরআন পড়তে জানি না? এগুলোতো তাহলে আমাদেরই আবিষ্কার করার কথা। যদি মেনে নিই তবে স্বীকার করতে হবে আমরা এখনো ইসলামী শিক্ষা থেকে অনেক দূরে আছি! কেউ জ্ঞান চর্চা করতে চাইলে তাকে উৎসাহিত করতে হবে। তাকে বর্তমান বিজ্ঞানের আলোকেই ইসলামকে জানতে দিতে হবে, প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে হবে। নিজের সীমিত জ্ঞান প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় করলে চলবে না। খারিজিদের মত চতুড়তার আশ্রয় নেয়া যাবে না। সবকিছুই বিচার বিশ্লেষণের দাবী রাখে ইসলাম সম্মত উপায়েই।
মহান আল্লাহ সূরা আল ফাতির এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।” পরিশেষ রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস দিয়ে শেষ করি, “ইলম শিক্ষা করা প্রতি মানুষের উপর ফরয।” (ইবনে মাজাহ: ২২৪)

মোঃ সালাউদ্দীন
লেখক, এমএ্যান্ডই অফিসার, লাইট হাউস, বগুড়া ও
দপ্তর সম্পাদক মাদ্রাসা মানজার ই ইসলাম, রাজশাহী।

Next Post

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার বাসুদেবপুর হতে ২০০০ পিচ ফেন্সিডিল উদ্ধার করে র‍্যাব-৫।

মঙ্গল ফেব্রু. ২৬ , ২০১৯
প্রেস বিজ্ঞপ্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার বাসুদেবপুর হতে ২০০০ পিচ ফেন্সিডিল উদ্ধার করে র‍্যাব-৫। ২০০০ বোতল ফেন্সিডিল সহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বাসুদেবপুরের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে আরিফ (২৮) কে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব ৫ এর একটি দল। আটক মাদক ব্যবসায়ীকে শিবগঞ্জ তাতিপুর থেকে আটক করেছে বলে জানান র‍্যাব। Share on FacebookTweetFollow usSave

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links