আভা ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার পলাতক চার আসামির মধ্যে একজন মোর্শেদ অমত্য ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি।
শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন আরা জামিন নাকচ করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
দুপুর ১২টার দিকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মোর্শেদ। তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী ইমরুল হাসান চৌধুরী। অরপদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান আসামির জামিনের বিরোধিতা করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মৃত্যুর আগে আবরারকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। তাকে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি আসামিরা পুলিশকে পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি।
আসামি জামিন পাওয়ার যোগ্য নন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পলাতক অপর আসামিরা হলেন- বুয়েট শিক্ষার্থী মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
এদিকে আসামি মোর্শেদের বাবা রবিউল ইসলাম আদালতে সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে (মোর্শেদ) আবরারকে পানি খাওয়াতে ও ডাক্তারের কাছে নিতে চেয়েছিল। তাকে (আবরার) বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টাও করেছিল। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় ছেলেকে আদালতের হাতে তুলে দিয়েছি। আমি নিজেও আবরার হত্যার বিচার চাই। তিনি বলেন, গত ৫ অক্টোবর হলের ক্যান্টিনে আসামিরা আবরারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ওই সময় মোর্শেদ গ্রামের বাড়িতে ছিল। সে কী করে আবরারকে হত্যার পরিকল্পনা করে? আমার ছেলে নির্দোষ।
আদালত সূত্র জানায়, আবরার হত্যা মামলায় পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর আদালত পলাতক চার আসামির সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।
একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন। তবে আসামিদের ব্যক্তিগত কোনো সম্পদ না থাকায় সম্পত্তি ক্রোক করা যায়নি বলে পুলিশ আদালতকে জানায়। এরপর আদালত আসামিদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৩ জানুয়ারি (আজ সোমবার) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর আদালত মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করে ওই চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরও আগে গত ১৩ নভেম্বর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
২৫ জনকে অভিযুক্ত করে এ চার্জশিট দেয়া হয়। এর মধ্যে ১১ আসামি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। বাকি ১৪ জন বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ততার কারণে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে আরবারকে হত্যা করেন। আবরার নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলাটি করেন।
চার্জশিটে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং তদন্তে আগত ৬ জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জনকে এবং তদন্তে আগত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে আটজন আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
যুগান্তর