আভা ডেস্ক :এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। এবার আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ এবার গড় পাসের হার ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে এবং ৫৭ হাজার ৯০ জন কম পাস করেছে।
অবশ্য মাদ্রাসা বোর্ডের পাসের হার সামান্য বেড়েছে। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ কমেছে ৮ হাজার ৭০৭। গত বছরের পাসের হারকে আমরা বলেছিলাম পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবার তাহলে বলতে হয় ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। এ প্রবণতাকে কি আমরা সার্বিক বিচারে ফল বিপর্যয় বলব, নাকি এটাই বাস্তব ও মানসম্মত ফল?
গত কয়েক বছর ধরে যেসব কারণে পাসের হার কমছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, এক বা একাধিক বোর্ডের ফল বিপর্যয়, কয়েকটি বোর্ডের ইংরেজিতে পাসের হার কমে যাওয়া, এমসিকিউ অংশে অনেক শিক্ষার্থীর পাস করতে না পারা ইত্যাদি।
পাসের হারে এবারও এগিয়ে আছে মেয়েরা। ১০ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ হলেও মেয়েরা পাস করেছে ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ আর ছেলেরা ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। দেশে নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো খবর নিঃসন্দেহে। আরও একটি বিষয় স্বস্তিদায়ক। গত কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বড় ধরনের অভিযোগ ওঠেনি।
তবে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষার্থী ও ভালো রেজাল্টধারী তৈরির ওপরই বেশি জোর দেয়া হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ মেধাবী প্রজন্ম তৈরিতে নয়। এর জন্য যেমন সরকারের কৃতিত্ব নেয়ার প্রবণতা দায়ী, তেমনি দায়ী অভিভাবকদের শুধুই ভালো ফলের প্রত্যাশা।
আমরা মনে করি, কেবল ভালো ফল নয়, শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, জীবন সম্পর্কে তাদের বোধ কতটুকু তৈরি হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এটা তো অজানা নয়, ভালো মানের শিক্ষা ও পাঠদানই ভালো ফল বয়ে আনে। আমাদের পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তাতে নজর দেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
ত্রুটিপূর্ণ পাঠদান পদ্ধতি এবং ভালোভাবে না শেখা শুধু যে এসএসসি ও এইচএসসির পাসের হারে বিরূপ প্রভাব ফেলে তাই নয়, ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের করুণ অবস্থা শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থী কতটুকু শিখতে পেরেছে, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটুকু যোগ্য হয়েছে, তা দেখতে হবে সবার আগে। এর অর্থ এই নয় যে, ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা করা যাবে না। পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ভালো ফল প্রাপ্য। পাঠক্রম উন্নত হলে ফলাফলের মানও বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।
যুগান্তর