আভা ডেস্ক :হজযাত্রীদের নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ফায়দা লুটতেই ২০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টে অনড় হজ এজেন্সিগুলো। অনেক হজ এজেন্সি দীর্ঘ সময় আগে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে হজ-নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করে। শেষ পর্যন্ত অনেক নিবন্ধিত হজযাত্রীর হজে যাওয়া না হওয়ার তাদের বিপরীতে নতুন হজযাত্রী যুক্ত করতে ২০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ চাইছেন সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো। রিপ্লেসমেন্টের সুযোগে এজেন্সিগুলো নানা অজুহাতে নতুন হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আবার অনেক সময় এই রিপ্লেসমেন্টের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল হজযাত্রীও। হজ নীতিমালায় ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারও হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, ২০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ না দিলে ৭ থেকে ১০ হাজার হজযাত্রীর কোটা এবার খালি থাকবে। তাদের এই হুমকি ধমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টে অনড়। নতুন করে বাড়ানো মানেই হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার সুযোগ করে দেয়া। এ প্রসঙ্গে ধর্মসচিব আনিছুর রহমান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘হজ নীতিমালা অনুযায়ী এজেন্সিগুলোকে ইতোমধ্যেই মোট হজযাত্রীর ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়েছে। কেউ মারা গেলে বা গুরুতর অসুস্থ হলেই শুধু রিপ্লেসমেন্ট করা হয়। অথচ তারা হাইপ্রেশার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের জন্যও রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছেন। আমরা আমাদের অবস্থানে আছি। পরে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে যখন বলার বলব। এখন পর্যন্ত আমি দেখছি না তেমন কোনো থ্রেট আছে।’ এজেন্সিগুলো কতজনের টিকিট কাটেনি জানতে চাইলে ধর্ম সচিব বলেন, ‘আমি ওনাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়েছি। এখনও যোগ করিনি। প্রত্যেকের আলাদা তথ্য নিয়েছি, কে কতজনের টিকিট নিয়েছেন, নেননি, পাঠিয়েছেন- যোগ করলে সব পাওয়া যাবে। ওনারা যাই দাবি করুক এই সংখ্যা দুই হাজারের বেশি হওয়ার কথা নয়। আর এটাকে আমি সমস্যা মনে করছি না। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ৪-৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।’
গত রোববার পর্যন্ত ৮৮টি হজ এজেন্সি ১০ হাজার ২৪২ জন হজযাত্রীর বিমান টিকিট নিশ্চিতে পে-অর্ডার ইস্যু করেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, এজেন্সি মালিকরা হজবাণিজ্য করতে ও হাজীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে হজে যাবেন না এমন ব্যক্তির পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের বিপরীতে হজ নিবন্ধন করে রাখেন। পরে সম্পদশালী ও জরুরিভিত্তিতে যারা হজে যেতে চান তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত চার্জ আদায় করেন। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত টাকার লোভে প্যাকেজমূল্য পরিশোধকারী সুস্থ ব্যক্তিকে গুরুতর অসুস্থ বানিয়ে তাকে বাদ দিয়ে অন্য ব্যক্তিকে আত্মীয় বানিয়ে হজে পাঠান। এভাবেই তারা প্রতারণা করেন।
জানা গেছে, গত বছর ১০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হলেও এ বছর ৪ শতাংশের বেশি দিতে নারাজ সরকার। ইচ্ছা করেই অনেক এজেন্সি বিমান টিকিট নিশ্চিত করতে পে-অর্ডার ইস্যু করেনি। এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা ১০ হাজারের উপরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে তলব করা হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। সোম ও মঙ্গলবার কয়েক দফায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর এজেন্সিগুলোর পক্ষে নেতৃত্ব দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া ও মহাসচিব এম শাহাদত হোসাইন তসলিমসহ সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে পে-অর্ডার ইস্যু না করার কারণ জানতে চাওয়া হলে এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, রিপ্লেসমেন্ট বাড়াতে হবে, নইলে এই সব কোটা খালি যাবে। হাব সভাপতি আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া ধর্ম সচিবের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের এজেন্সিগুলোর প্রাণের দাবি আপনারা যদি অল্প সময়ের মধ্যে রিপ্লেসমেন্টের বিষয়টি সুরাহা করেন, দেখবেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকিটের যে ব্যাকআপ তা পূর্ণ হয়ে যাবে। জবাবে ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেন, ‘এবার সৌদি আরব অতিরিক্ত স্লট দেবে না। কিন্তু আপনারা এখনও টিকিট কিনছেন না। ১০ হাজার হজযাত্রী টিকিট না নিলে মাথায় রাখতে হবে ১০ হাজার ব্যক্তি হজে যেতে পারছেন না। নীতিমালা অনুযায়ী ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট করে ফেলেছেন। এ বিষয়ে কিছু করতে হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। আমি ও আমার মন্ত্রী এই কাজ করতে পারব না।’
রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে এজেন্সিগুলোর চালাকি রয়েছে উল্লেখ করে আনিছুর বলেন, ‘বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ওনারাও জানেন কী পরিস্থিতিতে কোন নম্বরগুলো দিয়েছেন, সেখানেই কিন্তু রিপ্লেসমেন্ট করতে চাচ্ছেন।
যে পাসপোর্ট নম্বর, জন্মনিবন্ধনের অস্থিত্ব নেই, সেই অস্তিত্ববিহীন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সেই রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে এখন রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছেন। এর দায় কে নেবে? একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, স্লট কিন্তু অতিরিক্ত পাওয়ার সুযোগ নেই। ১৭ আগস্ট সৌদি এয়ারলাইন্সের শেষ ফ্লাইট, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শেষ ফ্লাইট ১৫ আগস্ট। এর বাইরে কেউ যেতে পারবে না। নিয়ম-কানুনে সৌদি সরকার এবার অত্যন্ত কঠোর।’ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ হবে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাবেন। হজ ফ্লাইট গত ১৪ জুলাই শুরু হয়েছে।
যুগান্তর