বিশাল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপ দেয়া যায়। সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ava desk :
উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষা করে দেশকে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার জন্য একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই, যেন আগামী দিনেও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। এ জন্য শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার বহুমুখীকরণ ও কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যাতে বিশাল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপ দেয়া যায়।’ বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবারের নেয়া পরীক্ষা পদ্ধতির প্রশংসা করেন। পাশাপাশি পরীক্ষা গ্রহণের সময় কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) এবং সমমানের আলিম, এইচএসসি কারিগরি, এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) এবং ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ ডিআইবিএস) পরীক্ষা দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ওপর তার আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক অনেক মেধাবী। এ মেধাকে দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ এবং সমুদ্র সীমানা অর্জনের ফলে সার্বিক ভাবে একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা সময়ের প্রয়োজন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন বলেই জাতির পিতা শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরই ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন- যার রিপোর্ট তিনি বাস্তবায়ন করে যাওয়ার সময় পাননি। বঙ্গবন্ধুকে ’৭৫-এ নির্মমভাবে হত্যার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ওই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের ক্ষমতা ভোগ করার দিকে যতটা দৃষ্টি ছিল, দেশ গড়ার দিকে ততটা ছিল না। বাংলাদেশের জনগণ ২১টি বছর ভোগান্তির শিকার হয়। আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সেই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট নতুনভাবে তৈরি করে শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় সেই রিপোর্ট পুনরায় পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে সেই শিক্ষা রিপোর্টের আলোকে যুগান্তকারী শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করতে সক্ষম হই। যার ফলে আজ শিক্ষা মানসম্মত, আধুনিক এবং আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন আমরা চলতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রেখে যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে তা হলো- শিক্ষা ব্যবস্থা ও ফল প্রকাশ পদ্ধতি সংস্কার, কোর্সগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা এবং মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকার তাদের মেয়াদে শিক্ষার হার না বাড়িয়ে আমাদের রেখে যাওয়া (’৯৬ থেকে ২০০০ সাল) ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৫ শতাংশে নিয়ে আসে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে কারিগরি শিক্ষার দিকে অধিক গুরুত্ব দিই। কারণ, কারিগরি শিক্ষা কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি বিজ্ঞান শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রতিটি গ্রামকে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা। কারণ, সরকার হিসেবে জনগণের সেবা করাই আমাদের কর্তব্য।’
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশে নয়, ডিজিটালাইজেশনের কারণে অনেক উন্নত দেশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে।’
এবার আধাঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে কয়েকটি সেটের মধ্য থেকে কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে- তা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষাকে জীবনের অন্যতম সম্পদ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এ সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তাই একটু মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়ে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
পরীক্ষা গ্রহণ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ছোট্ট অনুরোধ আমার থাকবে, সেটা হল পরীক্ষার সময়টা। পরীক্ষার একটা দীর্ঘ সময়… দোসরা এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা। এই অত দীর্ঘ সময়, বোধ হয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না- পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। সেখানে পরীক্ষার সময়টা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়।’
শেখ হাসিনা তার সময়ের পরীক্ষা পদ্ধতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমাদের দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হতো। সকালে এক পেপার, বিকালে এক পেপার। আমাদের তো দম ফেলার সময়ই থাকত না, সাত দিনে পরীক্ষা শেষ। ১০টা সাবজেক্ট, মাঝখানে দু’দিন ছুটি ধরে আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।’
কারিগরি ও মাদ্রাসাসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক উপমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। নেত্রকোনা জেলা এ সময় গণভবনের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল।
এ বছর সারা দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাসের হার শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ- যা গতবারের চেয়ে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৮৪ জন ছাত্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৯৪৫টি।
পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০০টি এবং কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান ৫৫টি। এইচএসসিতে আটটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। juganto

Next Post

মাথায় হিজাব সরছে না। আর পায়ে ফুটবল যেন হার মানাচ্ছে মেসি-রোনাল্ডোকে।

শুক্র জুলাই ২০ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : বোরকা খুলে ক্যামেরার সামনে নেচেছিলেন বলে কিছুদিন আগেই এক ইরানি মেয়েকে গ্রেফতার করেছিল দেশটির পুলিশ। আর তার প্রতিবাদে নাচের ভিডিও পোস্ট করেছে একের পর এক ইরানি নারী। তবে সেসব কিছুকে টেক্কা দিয়ে ইনস্টাগ্রামের ময়দানে হাজির আরও এক নারী। যার মাথায় হিজাব সরছে না। আর পায়ে ফুটবল যেন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links