রাজশাহী মহানগরীর ভেতর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন রুটের তিন শতাধিক বাস। পথে পথে বাসস্টপেজ ও অস্থায়ী বাসটার্মিনাল গড়ে ওঠায় নগরীতে নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে যানজট। তিন প্রধান সড়কের ২০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বাসস্টপেজ গড়ে উঠেছে। এসব স্টপেজে অভ্যন্তরীণ, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় ১৬ আগস্ট বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী ও মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসটি রেলগেট হয়ে নওদাপাড়া টার্মিনালে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটায়। প্রতিদিনই এমন শত শত যাত্রীবাহী বাস নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক হয়ে টার্মিনালে ফিরছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী বাসগুলো বাইপাস সড়ক দিয়ে সরাসরি টার্মিনালে যাওয়ার কথা। বাসের মালিক ও শ্রমিকরা এ নিয়ম মানছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর অলিগলিতে প্রায় ৫০ হাজারের মতো অটোরিকশা ও ইজিবাইক চষে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া হাজার দেড়েক হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। পথে পথে স্টপেজ ও অস্থায়ী বাসটার্মিনাল গড়ে ওঠায় নগরীতে নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে যানজট। যদিও নগরীর অপ্রতুল সড়ক নেটওয়ার্ককে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নওদাপাড়া এলাকায় ২০১১ সালে গড়ে উঠে বিশাল আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল। যানজট নিরসন ও যাত্রীসেবা বৃদ্ধিতে সাত কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়। ৭ দশমিক ৪১ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই টার্মিনালে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ বাস দাঁড়াতে পারে। অথচ নগরীর মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার উত্তরে গড়ে ওঠা এই টার্মিনাল ব্যবহার না করায় তা পরিত্যক্ত হতে চলেছে। বাইপাস হয়ে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের গাড়ি এবং টার্মিনালের পূর্বদিক দিয়ে রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুরের বাসগুলো চলাচল করার কথা। কিন্তু শ্রমিক ও মালিকদের বাধার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। নিয়ম না মেনে গ্রেটার রোড, কুমারপাড়া, তালাইমারি ও ভদ্রা মোড় হয়ে নগরীতে প্রবেশ করছে বিভিন্ন রুটের বাস। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়ি পদ্মা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে ভদ্রা মোড়ে আসছে। এ কারণে নগরীতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আলুপট্টিতে বিআরটিসি বাসটার্মিনাল থাকায় ব্যস্ততম সাগরপাড়া ও নাটোর রোড হয়ে চলাচল করছে বাসগুলো। এর সঙ্গে আলুপট্টি থেকে ছেড়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা পরিবহনের বাসগুলোও চলছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার বলেন, শুরুতে নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর গাড়িগুলো ছাড়ছিল। কিন্তু যাত্রী পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত এগুলো নগরীর বিভিন্ন স্টপেজ ঘুরে গন্তব্যে পাড়ি দেয়। আর ঢাকার বাসগুলো রাতে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে টার্মিনালে যায় না। যানজটের জন্য নগরের অপ্রতুল সড়ক ও ইজিবাইককেই তিনি দায়ী করেন। রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) অনির্বাণ চাকমা বলেন, উদাসীনতা নয়, আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বাসগুলো চলাচল করছে। তিনি বলেন, যত দিন নগরীর কেন্দ্র থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া না যাবে, তত দিন এই সংকট কাটবে না।
ওভারলোড যানবাহনের চাপে নগরীর সড়ক অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। বছর না ঘুরতেই পদ্মা আবাসিক বাইপাস সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরেই ঢাকা বাসস্ট্যান্ড-তালাইমারি রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। নগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কটির একপাশ বন্ধ রেখে মেরামত চলায় ভোগান্তির শেষ নেই। নগরীর ভেতরের সড়কগুলো ভারি যানবাহনের দখলে থাকায় হালকা যানগুলো প্রায় দুর্ঘটনায় পড়ছে। প্রাণহানিও ঘটছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তার বেশি ক্ষতি হয়। ওভার লোড নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রাস্তার কাক্সিক্ষত স্থায়িত্ব পাওয়া সম্ভব নয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, পরিকল্পিত একটি নগরীতে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা। অথচ রাজশাহী শহরে মাত্র ৯ শতাংশের কম সড়ক রয়েছে।
কলেক্টেড