সাবেক ভূমিমন্ত্রী ডিলুর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি: বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি পাবনা-৪ আসনের পরপর পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ভাষাসৈনিক, বীর-মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। রোববার  (২ এপ্রিল) বর্ষীয়ান প্রয়াত  আওয়ামী লীগের এই কাণ্ডারির ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও কবর জিয়ারত করেছেন ঈশ্বরদীর আপামর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।

রোববার (২ এপ্রিল) জোহর থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নে তাঁর নিজ গ্রামের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে কোরআন খতম, কবর জিয়ারত করা হয়।

২০২১ সালের এই দিনে ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

দোয়া মাহফিলে পাবনা সদর,ঈশ্বরদী- আটঘরিয়া উপজেলা ও লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাদ আসর ঈশ্বরদী শহরের আলিবর্দি সড়কের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া মাহফিল শেষে ইফতার বিতরণ করা হয়।

দুপুরে প্রয়াত এই নেতার নিজ গ্রাম লক্ষীকুন্ডার দোয়া মাহফিলে স্মৃতিচারণ বক্তব্য রাখেন, পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ,স,ম, আব্দুর রহিম পাঁকন, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত সাবেক মন্ত্রীর ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান, পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান বীর-মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হবিবুল,

লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ,  সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বকুল সরদার প্রমুখ।

এছাড়া দোয়া মাহফিলে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী,  আটঘরিয়া -ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিল শেষে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রীর কবর জিয়ারত করেন নেতৃবৃন্দ। প্রয়াত মন্ত্রীর সেজো ছেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ ও ছোট ছেলে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল প্রয়াত বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনীতিক, ভাষাসৈনিক ও বীর-মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ১৯৪০ সালের ১০ মার্চ পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর শানিকদিয়াড় গ্রামে মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম জোবেদা খাতুন। তাঁর শৈশব-কৈশোর কাটে ঈশ্বরদীর লক্ষিকুন্ডা গ্রামে। তিনি লক্ষিকুন্ডা ফ্রী প্রাইমারি স্কুল ও পাকুড়িয়া মিডল স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন।  এরপর ১৯৬০ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৬২ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।

ভারত বিভাগের পর নব্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানে মাতৃভাষার দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবী জানায় ও আন্দোলন চালাতে থাকে। শামসুর রহমান শরীফ ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ভাষার দাবীতে মিছিল করায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে ও জেলে বন্দী রাখে। ১৯৫৯ সালে আইয়ূব খানের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গ্রেফতার হন। ১৯৬৭ সালে আবারও তিনি কারাবরণ করেন ছয় দফা আন্দোলনের প্রচার করতে গিয়ে। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাবনার মাধপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা গুলিতে শহীদ হন এবং পাকিস্তানি সেনাদের অনেকেই ঐ যুদ্ধে হতাহত হয়। তিনি ৭ নং সেক্টরের অধীনে কাজীপাড়ায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড লিডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর প্রথম সাফল্য আসে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ক্রমান্নয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও পরে ২০০৬ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে মনোনীত হন। ২০১৪ সালে আবারও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকারের আমলে টানা ৫ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন এবং সামরিক শাষক এরশাদ সরকারের আমলেও তিনি কারাবরণ করেন। সর্বপ্রথম তিনি ১৯৭৯ সালে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন। পরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে পাবনা-৪ আসনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক মাঠে ময়দানে ‘ডিলু ভাই’ বলেই ডাকতেন সবাই।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের ক্ষমতায় গেলে  দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২য় বার বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেন। টানা ৫ বছর তিনি সততার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় ও ব্যাক্তিগতভাবে যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, শ্রীলংকা,মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, ভারত, দুবাই ও অষ্ট্রোলিয়া সফর করেছেন।

প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু পাঁচবার সংসদ সদস্য থাকায় তার নির্বাচনী এলাকায় (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) অসংখ্য স্কুল, কলেজ,মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলায় প্রতি দুই কিঃ মিঃ এর মধ্যে একের অধিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ডিগ্রি কলেজ,ডিগ্রি কলেজকে অনার্স কলেজে রুপান্তর করেছেন। বিগত জোট সরকারের আমলে বন্ধ হওয়া ঈশ্বরদী ইপিজেড চালুকরণ, বর্তমান সরকারের আমলে বৃহৎ প্রকল্প রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্হাপন, পাবনা তথা ঢালারচর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ট্রেন চালুকরণসহ রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ তার আমলেই স্হাপিত হয়েছে। যা কিনা স্বাধিনতার ৫২ বছরে কখনো হয়নি।

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সহধর্মিণী কামরুন্নাহার শরীফ একজন আদর্শ গৃহিণী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই মহীয়সী নারীর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তার ৫ ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। বর্তমানে ৪ ছেলে ৫ মেয়ে। সবাই সুশিক্ষিত। বর্তমানে তারা রাজনীতিতেও সক্রিয়।

Next Post

বগুড়ায় নকল কসমেটিকস বিক্রির দায়ে দুই ব্যবসায়িকে জরিমানা

সোম এপ্রিল ৩ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় অনুমোদনহীন ও নকল কসমেটিকস বিক্রির দায়ে দুই ব্যবসায়িকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার নিউ মার্কেট ও চুড়ি পট্টি এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে বগুড়া সদর উপজেলার নিউমার্কেট ও চুড়ি পট্টিতে বিভিন্ন […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links