রূপপুরে চুরির শেষ কোথায়?

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পাবনায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে বার বার চুরির ঘটনা ঘটছে। গেল এক বছরে ছয়টি চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে পাঁচটি। একটি ঘটনায় স্থানীয় এক সংসদপুত্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগও এসেছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে স্থানীয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়।

চুরি রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন ঈশ্বরদী নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব। প্রকল্পের ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের না বলে জানিয়েছেন ওসি।

পুলিশের তথ্য, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সবশেষ চুরি হয় শনিবার রাতে। এ ঘটনায় তামার তারসহ একজনকে আটক করে পুলিশে দেয় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ মুকুল মণ্ডল। তার বাড়ি উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের দিয়াড় সাহাপুর গ্রামে।

এজাহারে বলা হয়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে প্রকল্পের ৪ নম্বর গেট দিয়ে চুরির মালামাল পাচারের সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন মুকুল। এ সময় তার কাছ থেকে ১০ দশমিক ৬ মিটার তামার ক্যাবল উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার মাত্র ৮ দিন আগে প্রকল্প এলাকায় আরও একটি চুরি নজরে আসে। পুলিশ বলছে, ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের ভেতর পিকআপ ভ্যানে ময়লার সঙ্গে ৪৪০ কেজি লোহার সামগ্রী চুরির অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়।

তারা হলেন প্রকল্পের আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত এসএস এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির কর্মচারী হাসান আলী ও আওয়াল শেখ।

প্রকল্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাশিয়ান ফেডারেশনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্টোরি এক্সপোর্ট জয়েন্ট স্টক কোম্পানির উপপরিচালক ভি. এন টুরুটিনের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে দুটি লেইভার ক্রেন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি হয়। এরপর থেকেই প্রকল্পের জেটিতে মালামাল ওঠানামা অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

চুরি যাওয়া ২৬৫ মিটার ক্যাবলের দাম প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।

ক্যাবল চুরির ঘটনায় ভি এন টুরুটিন গত ১৯ জানুয়ারি রাতে মামলা করেন। পরে পুলিশ কুষ্টিয়া জেলা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করলেও মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।

এ ছাড়া প্রকল্পের প্রায় ১০ টন লোহা (রড ও পাইপ) চুরির ঘটনায় ২৭ ডিসেম্বর রাতে পাঁচজনকে আটক করে থানায় দেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। এর মধ্যে পাকশী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিরাজ আলীও ছিলেন।

এর আগে প্রকল্পের পাঁচ ট্রাক লোহা চুরির খবর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়ায় এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ উঠে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের ছেলে দোলন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ওই ব্যবসায়ীর নাম সোহেল রানা। তিনি প্রকল্পের সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের (প্রকল্প এলাকায় ক্লিনিং সার্ভিস দেয়) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ পড়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক সৌকত আকবরকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও তিনি কথা বলেননি।

তবে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চুরির ঘটনা মোটেই কাম্য না। এখানে প্রত্যেকটি সাব কন্ট্রাক্টরের নিজস্ব সিকিউরিটি আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা রয়েছে। তারপরও কেন চুরি হচ্ছে?’

তিনি বলেন, ‘গত মাসেও প্রকল্পের পরিচালক সৌকত আকবর রূপপুর এসে সেনাবাহিনীসহ অনেকের সঙ্গে মিটিং করেছেন। এ সময় সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেয়া হয়। আমরাও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন বলেন, ‘প্রকল্পের ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের না। বার বার কেন চুরি হচ্ছে বিষয়টি আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।’

ঈশ্বরদী নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ কিরণ বলেন, ‘চুরির সঙ্গে বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করা বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদের জড়িত থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনলে এখানে চুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে।’

Next Post

জিল্লুর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

মঙ্গল ফেব্রু. ১৫ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ চট্টগ্রামে আলোচিত জিল্লুর রহমান ভান্ডারী হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (অতিরিক্ত পিপি) লোকমান হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। Share on FacebookTweetFollow usSave

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links