অনিয়ম দুর্নীতির সাফ করতে ভীষণ ব্যস্ত রাবি’র ভিসি

আভা ডেস্কঃ আগামী মাসের ৫ তারিখে দ্বিতীয় দফা দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহান। মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিদায়ের আগে নিজের সৃষ্ট অনিয়ম দুর্নীতির সাফ করতে ভীষণ ব্যস্ত তিনি। পেনশনও তুলে নিয়েছেন কৌশলে দ্বিতীয় বার ভিসি হওয়ার পরপরই।

ভিসি পদ ছাড়ার পর তিনি তাবলিগের চিল্লায় যাওয়ার একান্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ঘনিষ্ঠমহলে। তবে বিদায়ের আগে এখন তিনি রাবির উন্নয়নে ৩১২ কোটি টাকার তিন মেগা প্রকল্পের টেন্ডার কাজও নিজের হাতে শেষ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

এজন্য তুঙ্গে থাকা করোনা মহামারির ভেতরেও সরকারি আদেশ না মেনে রাবির প্রকৌশল ও হিসাব শাখা চালাচ্ছেন। এসব অভিযোগ রাবির শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

এ প্রসঙ্গে রাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. সোলাইমান চৌধুরী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই তিনটি প্রকল্প সবচেয়ে বড়। মহামারির মধ্যেও তারা কেন প্রকল্পগুলোর টেন্ডার শেষ করতে মরিয়া-তা অবশ্যই বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে সহজেই বোঝা যায় তাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যই আসল।

তিনি প্রশ্ন করেন- এসব কাজ এমন তো নয় যে, এক দুই মাস আগে পরে শুরু বা শেষ হলে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে। এসব টেন্ডার কেন ২২ এপ্রিলের মধ্যেই শেষ করতে হবে বর্তমান ভিসিকে?

বিভিন্ন পক্ষের অভিযোগে জানা গেছে, বিদায়ের আগে প্রায় ৩১২ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নের তিনটি মেগা প্রকল্পের টেন্ডার শেষ করতে মরিয়া ভিসি আব্দুস সোবহান। এই কাজগুলো তিনি ও তার সহযোগীরা পছন্দের ঠিকাদারদের দিতে চান। আর এজন্য তিনি সরকারি নির্দেশনা না মেনে রাবির প্রকৌশল ও হিসাব বাধ্যতামূলকভাবে চালু রেখেছেন। ভিসি নিয়মিত বিল পাশ করছেন।

মহামারির মধ্যেও সিন্ডিকেট সভা করে অ্যাডহক নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি স্থায়ী করছেন। পরের ভিসি এসে বাতিল করতে পারেন এমন আশঙ্কায় বিতর্কিত নিয়োগগুলো সিন্ডিকেটে পাশ করছেন।

জানা গেছে, ১৭১ কোটি ৩২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে রাবিতে ২০তলা কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ভবন নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে সম্প্রতি। এছাড়া ৭১ কোটি ৯৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০তলা বিশিষ্ঠ শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ৭০ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০তলা বিশিষ্ট শহীদ কামারুজ্জামান ছাত্র হল নির্মাণেরও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে ২২ এপ্রিল।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ভিসি এসব মেগা প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেন। আর এ কারণে প্রকৌশল শাখাকে সার্বক্ষণিক চালু রেখেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীদের আপত্তির বিরুদ্ধেও।

রাবির সরকারপন্থি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কো-কনভেনার প্রফেসর ড. সৈয়দ আলী রেজা বলেন, আমরা ভিসিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এসব বিষয় নিয়ে। তড়িঘড়ি করে যেন কোনো কাজ না করা হয়। কারণ তড়িঘড়ি করে এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এসব মেগা প্রকল্পের কাজে যদি কোনো অনিয়ম ঘটে, তার দায় কিন্তু রাবির পরবর্তী প্রশাসনের ওপর পড়বে। কারণ ভিসি আর মাত্র ক’দিন পরেই চলে যাবেন। আর সেই দায় গিয়ে পড়বে রাষ্ট্রের কাঁধেও।

রাবি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে আরও জানিয়েছেন, বিপুল অংকের এসব মেগা প্রকল্পের টেন্ডার দাখিলের শেষদিন ২২ এপ্রিল। লকডাউনের কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকছে। এরপর ২৩ এপ্রিল শুক্রবার ও ২৪ এপ্রিল শনিবার সরকারি ছুটি। ব্যাংকের কাজ অর্ধেক হবে। ফলে এই সময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া কীভাবে চলতে পারে- প্রশ্ন তোলেন তারা। ভিসিকে বার বার বলার পরও তিনি অনঢ়।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই তিনটি মেগা প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগির চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের সিন্ডিকেটকে খুশি করতে ভিসি এসব কাজ তাদের দিয়ে যেতে চান। ভিসিঘনিষ্ঠ রাবির সাবেক এক ছাত্রদল নেতাও টেন্ডারগুলো তার সহযোগীদের পাইয়ে দিতে ও নিজে কাজ পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন। ভিসিবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাবি শিক্ষকদের একটি বড় অংশই এখন চাচ্ছেন এসব মেগা প্রকল্পের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া ড. সোবহান বিদায়ের পরে হোক। তাহলে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রফেসর ড. সোবহান তার আমলে রাবি ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানকেই রাবির কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন। ছাত্রদল নেতা উজ্জ্বলের সঙ্গে ড. সোবহানের ঘনিষ্ঠতা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে বহুল আলোচিত একটি বিষয়।

জানা গেছে, সম্প্রতি রাবিতে ১৬ কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্প, ১২ কোটি টাকার শিক্ষক কোয়ার্টার সম্প্রসারণ ও ৯ কোটি টাকার অডিটোরিয়াম উন্নয়ন ও সংস্কারের তিনটি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। একাধিক ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতা ভাগ বাটোয়ারা ও সমঝোতার মাধ্যমে কাজগুলো ভাগ করে নিয়েছেন বিভিন্ন ঠিকাদারি লাইসেন্সের মাধ্যমে। তারা কাজগুলো ঠিকাদারদের কাছে বেচে দিয়ে লাভবান হয়েছেন।

অভিযোগ আছে, ভিসি সোবহান বিপুল অংকের এসব মেগা প্রকল্পের টেন্ডার পছন্দের লোককে দিতে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. আফসার আলীকে সরিয়ে দিয়ে তিন পদ নিচে থাকা খন্দকার শাহরিয়ার রহমানকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক করেন। তাকেই এসব মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বানিয়েছেন। শাহরিয়ার রহমান ভিসি সোবহানের ‘গোপন’ কর্মকাণ্ডের জন্য অতি বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত।

করোনা মহামহারিতে সরকারি ছুটির মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার রহমান যুগান্তরকে জানান, অনলাইনেও টেন্ডার দাখিলের সুযোগ আছে। তবে এই তিনটি মেগা প্রকল্পের টেন্ডার দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ই-জিপি টেন্ডার হওয়ায় এসব টেন্ডারে পছন্দের কোনো ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া যায় না বলে জানান তিনি। তবে ঠিকাদাররা বাইরে সমঝোতা করে টেন্ডার দিলে তাদের বিশেষ কিছু করার থাকে না।

সামগ্রিক বিষয় ও অভিযোগ নিয়ে রাবি ভিসি প্রফেসর ড. সোবহানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল ফোনে (০১৭৩২-৬২৫৮০৮) একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

সূত্র : যুগান্তর

Next Post

পুঠিয়ায় স্কুল ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যু

বুধ এপ্রিল ১৪ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহীর পুঠিয়ায় আপন ইসলাম (১১) নামে এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ (১৪ এপ্রিল) বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার বড় সেনভাগ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মৃত আপন ইসলাম  উপজেলার সদর ইউনিয়নের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links