রাশিয়া থেকে ক্রয় টিকার ২৯ বিষয়ে নিশ্চয়তা চেয়েছে সরকার

আভা ডেস্কঃ রাশিয়া থেকে ‘স্পুতনিক-ভি’ টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পাঠানো সরবরাহ চুক্তিতে ২৯টি বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে মতামত পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

গত ৬ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয় খসড়া চুক্তির বিষয়ে তাদের এই মতামত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠানো হয়।

আইন মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়া থেকে ‘স্পুতনিক-ভি’ টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পাঠানো সরবরাহ চুক্তির এই খসড়ায় বেশ কিছু অস্পষ্টতা ও অসঙ্গতি পাওয়ায় চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে এসব অস্পষ্টতা ও অসঙ্গতি দূর করার পরামর্শ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।  এতে মোট ২৯টি বিষয় নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। সরবরাহ চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে মতামত পাঠিয়েছি। আশা করছি সেগুলো বিবেচনা করে টিকা কিনবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো মতামতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সরবরাহ চুক্তিটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যে কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা স্বাক্ষর করবে, সুনির্দিষ্টভাবে তা উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া টিকার গুণগত মান নিশ্চিতের বিষয়ে চুক্তিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। এটি নিশ্চিত করতে চুক্তিতে একটি বিধান যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চুক্তিতে ‘মার্কেটিং অথরাইজেশন হোল্ডার’ বলে একটি বিষয় রয়েছে। এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝানো হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলেছে আইন মন্ত্রণালয়।

চুক্তির খসড়ায় বলা হয়েছে, টিকার মজুত এবং বহনের ব্যয়ভার ক্রেতাকে (বাংলাদেশ) বহন করতে হবে। কিন্তু টিকা রাশিয়া থেকে দেশে আনা পর্যন্ত বোঝানো হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। টিকা পরিবহন এবং মজুত পর্যন্ত ব্যয়ভার বহনের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে বলেছে আইন মন্ত্রণালয়। তা না হলে টিকা পরিবহনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করে মন্ত্রণালয়।

টিকার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে বা টিকাস্বল্পতার কারণে সরবরাহে বিলম্ব হলে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা যাবে না, এটি খসড়ায় রয়েছে। এ ক্ষেত্র আইন মন্ত্রণালয় টিকার দুই ডোজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বিধান যুক্ত করতে বলেছে।।

এছাড়া খসড়ায় একটি প্রস্তাব রয়েছে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে সরকার নির্ধারিত পরিমাণ টিকা সরবরাহে আদেশ দিতে ব্যর্থ হলেও কোম্পানিকে শতভাগ প্রাপ্য অর্থ দিতে হবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় যেখানে টিকার গুণগত মান ঠিক না থাকার পরও সরকারকে টিকা নিতে বাধ্য করা হয় বা টাকা পরিশোধে বাধ্য করা হয়, তাহলে অসম পরিস্থিতির তৈরি হবে। চুক্তির এই বিধানের যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

খসড়া চুক্তিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ক্রেতাকে প্রতিটি পণ্যের মূল্যের বিপরীতে দশমিক ১ শতাংশ রয়্যালটি দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কোম্পানির কাছ থেকে টিকা কিনবে এবং নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করবে। এ অবস্থায় কোম্পানিকে রয়্যালটি দেওয়ার বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলেছে আইন মন্ত্রণালয়।

চুক্তিতে বলা আছে, টিকা ব্যবহারের কারণে কোনো ‘অ্যাডভার্স ইভেন্ট’ (বিরূপ কিছু হলে) সংঘটিত হলে ক্রেতা (বাংলাদেশ) দায়ী হবে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, যেহেতু টিকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান কোম্পানি এবং বাংলাদেশ কেবল ওই টিকার প্রয়োগের ফলে কোনো ‘অ্যাডভার্স ইভেন্ট’ সংঘটিত হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেবল ক্রেতাকে দায়ী করা জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার কনভেনশন, প্রটোকল ইত্যাদির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। ফলে অ্যাডভার্স ইভেন্ট সংঘটিত হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকেও দায়ী করার বিধান চুক্তির খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

খসড়া চুক্তির আরেকটি ধারায় বলা হয়েছে, টিকা ব্যবহার বা প্রয়োগের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোম্পানিকে দায়ী করা হবে না। এক্ষেত্রে রাশিয়ার কোম্পানিকে ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে, সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে স্বাস্থ্য বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তির ক্ষেত্রে ‘অ্যাপলিক্যাবল ল’ হবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়ালেসের আইন এবং পক্ষগণের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (সিআক) রুলস প্রযোজ্য হবে এবং সালিসের স্থান হবে সিঙ্গাপুর।  এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে, যেহেতু সরকার রাশিয়ার ‘হিউম্যান ভ্যাক্সিন’ কোম্পানির কাছে টিকা ক্রয় করবে, সে কারণে প্রস্তাবিত বিধানটি রাখা যেতে পারে।

চুক্তিতে প্রস্তাব করা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার যদি বিক্রেতার অনুমতি ছাড়া চুক্তির কোনো তথ্য প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে বিক্রেতা যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ অথবা এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইন মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবিত চুক্তির অধীন যদি কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নির্ধারিত পরিমাণ টিকা সরবরাহ করতে না পারে অথবা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম সরবরাহ করে অথবা কোম্পানি অবসায়ন বা অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয় অথবা রাশিয়ার কোনো আইন পরিবর্তনের কারণে কোম্পানির আইনগত অবস্থার পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সরকার যেন চুক্তির বিষয়ে একটি ‘সভরেন গ্যারান্টি’ (সার্বভৌম নিশ্চয়তা) প্রদান করে, এ–সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

এছাড়া প্রস্তাবিত চুক্তির অধীনে যদি কোনো কারণে ওই কোম্পানি চুক্তি মোতাবেক টিকা সরবরাহ করতে না পারে এবং বাংলাদেশ সরকার যদি টিকা সরবরাহ করার আগেই টাকা পরিশোধ করে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যেন টাকা ফেরত পেতে পারে, সে–সংক্রান্ত একটি বিধান চুক্তিতে রাখতে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে।

গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি–এর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বের ৬১টি দেশে এ টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে।  এর দাম প্রতি ডোজ ১০ থেকে ২০ ডলার। এই টিকা কেনার বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং রাশিয়ার ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়া ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) মধ্যে গোপনীয়তার চুক্তি সই হয়।  টিকা পেতে এখন রাশিয়ার সঙ্গে সরবরাহ চুক্তি করতে হবে। এই চুক্তি সই হলে আরডিআইএফ কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় টিকার ডোজ উৎপাদনের নির্দেশনা দেবে।

Next Post

পবিত্র শবে কদর আজ

রবি মে ৯ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ সমগ্র মানবজাতির জন্য আজ রোববার দিবাগত রাত ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ অত্যন্ত বরকত ও পূণ্যময়। পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়। তাই মুসলিম উম্মাহ’র কাছে এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যধিক। প্রতিবছর মাহে রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links