নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ১৩ বছরের কিশোরী আত্মহত্যা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। নগরীর বসুয়া এলাকায় সুমাইয়া নামের ১৩ বছরের এক কিশোরীর আত্নহত্যার খবর পাওয়া গেছে। তবে এলাকাবাসির অভিযোগ এটি আত্নহত্যা নয় পরিকল্পিত হত্যা।
৮ আগষ্ট (রবিবার) মহনগরীর হড়গ্রাম ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ড বসুয়া পশ্চিমপাড়া মুদি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম খান এর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সুমাইয়া, নজরুল খানের বাড়িতে দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করতো। সে গোপালগঞ্জে মকসুদপুর উপজেলার লাখন্দ গ্রামের কালা সিকদারের মেয়ে।
মেয়ের মা বলেন, আমি ঘটনার কিছুই জানি না, তবে আমাকে বাড়িওয়ালা ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। যাতে করে মামলা না করা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, রবিবার বিকাল আনুমানিক ৫.৩০ মিনিটে মুদি ব্যবসায়ী নজরুলের বাড়ি সংলগ্ন গরুর খামারে সুমাইয়ার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় খামারে দুধ সংগ্রহকারী ঘোষ। পরে জানাজানি হলে থানা পুলিশকে খবর দিলে, রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
পুলিশ সুরুতহাল রিপোর্ট সম্পুর্ন করে মরদেহটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর থেকে এই পরিকল্পিত হত্যাকে ধামাচাপা দিতে মরিয়া বাড়ি মালিক নজরুল ইসলাম ও তার কাছের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এমন একটি ঘটনায় তখনো জানেনা কোন মিডিয়া কর্মী। পরের দিন মিডিয়াকর্মীরা জানতে পারলে ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহে যায়। এ সময় নজরুলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এড়িয়ে যান এবং আমি কিছু জানিনা বলেন। পরে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে পড়েন বাড়ির মালিক ও স্থানীয় একজন জন প্রতিনিধি। তোপের মুখে নজরুল বলেন, এই সুমাইয়া তার শালিকা হয়। কিন্তু কেন আত্নহত্যা করেছেন তিনি জানেন না।
বিষয়টি নিয়ে হড়গ্রাম ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মুস্তাফিজুর রহমান জিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমি খবর পাওয়ার পর পুলিশকে অবগত করি এবং পুলিশ আসলে তাদের সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। গিয়ে দেখি ওড়না প্যাচিয়ে হাটুগাঁড়া অবস্থায় মেয়েটির মরদেহ ঝুলছে। মরদেহটি দেখে মনে হচ্ছে না যে, এটি আত্নহত্যা। মনে হচ্ছে পুরো পরিকল্পিত হত্যা। কারন যেটার সাথে ঝুলন্ত ছিল সেটি হালকা কাঠের বাতা মাত্র। আর যে জায়গায় ঝুলন্ত ছিল, সেখানকার উচ্চতা প্রায় ৭ ফিট। কিন্তু মেয়েটি যে ওড়না দিয়ে ঝুলেছে সেটি তিন ফিট এবং দেহ পাঁচ ফিট ছিল। তাই মেয়েটি যে ওখানে আত্নহত্যা করেছে এটা বিশ্বাস যোগ্য না । তারপরও পুলিশ আছে তদন্ত করে আসল ঘটনা খুঁজে বের করবে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসির দাবী, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। এই হত্যার সাথে বাড়িওয়ালা জড়িত রয়েছে। বাড়িওয়ালাকে গ্রেফতার করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এদিকে প্রকাশ্যে স্থানীয়রা বলেন, মেয়েটি খুব ভাল ছিল। সে ছোট মেয়ে হিসাবে বাড়ির সকল কাজ করতো। বাড়িওয়ালার ছেলে ও দোকানের কয়েকজন কর্মচারী মেয়েটিকে উত্যক্ত করতো। বাড়িওয়ালার চরিত্র নিয়েও স্থানীয়রা সন্দিহান।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, খবর পাওয়ার পর আমি সহ আমার পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরুতহাল সম্পুর্ন করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরে বাড়ি মালিক একটি ইউডি মামলা করে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। তবুও মৃত্যু এই ঘটনায় আমাদের সন্দেহ রয়েছে তাই পোষ্টমর্টেমে লাশ পাঠানো হয়েছে। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে মৃত্যুর আসল কারন।