রংপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম ও বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলীরা অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত

আভা ডেস্ক :গণপূর্ত বিভাগের রংপুরে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ‘জুন ক্লোজিং’-এর নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রংপুরে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের নামে ৮টি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে দরপত্রের বিপরীতে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া বিল পরিশোধ দেখিয়ে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম ও বিভিন্ন বিভাগের প্রকৌশলীরা অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম মেনেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করছি। ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তারা নিয়ম মেনে কাজ করেছেন, বিল জমা দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের বিল পরিশোধ করেছেন। তারা কেমন করে তা দিয়েছেন, সেটি তাদের বিষয়। তবে তারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন।

রংপুর গণপূর্ত বিভাগ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সরকারের কোষাগার থেকে রংপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক বরাদ্দ পায়। এসবের মাধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, রিপিয়ারিং, মালামাল সরবরাহ, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন স্থাপনের নামে বরাদ্দকৃত টাকা থেকে ‘জুন ক্লোজিং’-এর নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রংপুরে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তার দফতরের একাধিক কর্মকর্তা। এ কাজের জন্য সরকারের বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে- তিনি রংপুরের বিভিন্ন কাজের নামে দরপত্র আহ্বান করে ভুয়া বিল প্রস্তুত ও যোগসাজশ করে দরপত্রের মাধ্যমে সরকারের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। চলতি বছরের ‘জুন ক্লোজিং’-এর নামে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এর মধ্যে রয়েছে রংপুর কাস্টম এক্সইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় অফিস কাম রেসিডেন্স ভবন নির্মাণ। এর জন্য ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯১ হাজার ৮ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনি পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সাজিন কনস্ট্রাকশন লি.’ ঢাকার নামে কার্যাদেশ দেন ১৭ মে। সেখানে কাজ শুরু না করেই জুন ক্লোজিংয়ের আগেই ভুয়া বিল দেখিয়ে ২ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেন।

একইভাবে তিনি জাইকার অর্থায়নে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস হোস্টেলের ভবন নির্মাণের জন্য ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকার কাজের জন্য ২৬ জুন ‘কেএসবিএল অ্যান্ড এইচই’ (জেভি) রাজশাহীকে কার্যাদেশ দেন। ভবন নির্মাণ শুরু না হতেই কার্যাদেশের তিন দিনের মধ্যে তিনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে নির্মাণকাজের বিল প্রস্তুত করে ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলের জন্য ১ কোটি ৭৪ লাখ চৌষট্টি হাজার ৬৮৫ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয় ৮ মে বগুড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুমা বেগম অ্যান্ড মো. ময়েন উদ্দীন (বাঁশি) জেভিকে। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণকাজ না করেই ওই প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি টাকার বিল প্রদান করা হয়।

একইভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২৫০ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের বৈদ্যুতিক ইকুইপমেন্ট স্থাপনের জন্য ২৮ মে রাজশাহীর মেসার্স ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনকে ১ কেটি ৪৬ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। সেখানে কোনো মালামাল সরবরাহ করার আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়।

ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজের জন্য রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. খায়রুল কবীর রানাকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩০ টাকার কার্যাদেশ ১০ জুন দেয়া হয়। ওই কাজের একতলা ভবনের নামমাত্র কিছু কাজ করে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০ জুনের মধ্যে ৪০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়।

২১ জুন রংপুর টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের জন্য ৫০০ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনে বৈদ্যুতিক ইকুইপমেন্ট স্থাপনের জন্য ৫৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৭ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয় মেসার্স ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন রাজশাহীকে। মালামাল সরবরাহ ও স্থাপন না করেই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপিয়ারিং, সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয় ১৮ এপ্রিল রাজশাহীর ‘টিবিইএল অ্যান্ড এমবিসিজেভি’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। শুরুতেই ৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়।

শুধু তা-ই নয়, গত আর্থিক বছরে রংপুরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার (এপিপি) বিপরীতে ৪ কোটি টাকা, থোক বরাদ্দ থেকে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এসব কাজের নামে দরপত্র আহ্বান করে বেশিরভাগ কাজ করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এই কাজগুলো ওভারলেপিং/ডুপ্লিকেটেড করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল রিপিয়ারিং কাজের পরিমাপ বইতে সংযুক্ত করে ‘টিবিইএএল অ্যান্ড বিএমসিজেভি’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি বিল পরিশোধ করা হয়। এভাবে রংপুর গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এছাড়া এপিপি এ থোক বরাদ্দের কাজের বরাদ্দ থেকে শতকরা ৫ ভাগ নিুদর হওয়ায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছিল। এই টাকা ভুয়া কোটেশন ও বিল ভাউচারের নামে আত্মসাৎ করা হয়।
যুগান্তর

Next Post

আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে বাংলাদেশকে

বৃহস্পতি জুলাই ১২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হবে। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতির দাবি তুলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশকে মামলা করতে হবে। মামলা পরিচালনা ব্যয় দু’ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কমিশন বা দৈনিক ভিত্তিতে পারিশ্রমিক […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links