আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে বাংলাদেশকে

আভা ডেস্ক : রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হবে। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতির দাবি তুলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশকে মামলা করতে হবে।

মামলা পরিচালনা ব্যয় দু’ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কমিশন বা দৈনিক ভিত্তিতে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হবে। সব দিক পর্যালোচনা করেই মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে যেভাবেই হোক এ মামলার ব্যয় অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে। আর এ ধরনের মামলার ব্যয় অনেক বেশি। আদালতের বাইরে আলোচনার মাধ্যমে চুরি হওয়া রিজার্ভের একটি অংশ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চলছে। এটি আনা সম্ভব হলে মামলা পরিচালনা ব্যয় কিছুটা কমে আসবে। সে প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আদালতে সিভিল ও ক্রিমিনাল দুটি মামলা হয়েছে। এর পরিচালনা ব্যয় ও সব ধরনের আইনি সহায়তা করছে ওই দেশের সরকার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়নি।

যদিও ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ বাংলাদেশকে একজন আইনজীবী নিয়োগের অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অনুরোধে তাদের নিজস্ব আইনজীবীর মাধ্যমে তা পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সর্বশেষ ক্রিমিনাল মামলায় বাংলাদেশের সিআইডি’র ঊর্ধ্বতন দু’কর্মকর্তা ফিলিপাইনের আদালতে সাক্ষী দিয়ে আসছেন। এটিই প্রথম রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশের বাইরে বাংলাদেশের একটি আইন সংস্থার সদস্যের সাক্ষ্য দেয়া হল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্রিমিনাল মামলা শুনানিতে ফিলিপাইনের আদালতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশও অনুসন্ধান করছে। কিন্তু হ্যাংকিংয়ের পেছনে কে আছে তা শনাক্ত করতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আছে এ ধরনের দেশগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে জবাব পাওয়ার পর প্রকৃত অপরাধী কে, সে দেশি বা বিদেশি ওই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

সূত্র আরও জানায়, ফিলিপাইনের আদালতে রিজার্ভ চুরির ক্রিমিনাল মামলার বিচারক বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছেন, ফিলিপাইনে এতগুলো ব্যাংক থাকতে আরসিবি’র মাধ্যমে কেন এ অর্থ আসছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইন ছাড়াও আরও একটি মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে মামলা করেছে বাংলাদেশ সরকারও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মামলার প্রস্তুতি হিসেবে পরিচালনার ব্যয় নির্ধারণ ও এফআইআর দায়েরের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আদালত ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া হ্যাংকিংয়ের ঘটনার সপক্ষে তথ্য-প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ হচ্ছে মিচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাক্ট ২০১২-এর আওতায়। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো তথ্য থাকলে তা সরবরাহ করতে বিশ্বের সব দেশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোনো দেশ এ ধরনের মামলা অতীতে করেছিল কিনা এর খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা মামলা পরিচালনার ব্যয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত পাওয়া এবং না পাওয়া আলাদা বিষয়।

কিন্তু সরকারকে মামলা করতেই হবে। কারণ সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে লড়াই করতে হবেই। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করলে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মামলাটি দায়ের করতে হবে। তবে ক্রিমিনাল মামলা ১০ বছরের মধ্যে করা যায়। সেটি পরে করলেও সমস্যা নেই।

আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা পরিচালনার ব্যয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এসেসমেন্ট কঠিন হলে ব্যয় বেশি হবে, সহজ হলে ব্যয় কম হবে। ব্যয় দু’ধরনের হতে পারে। মামলা নিষ্পত্তি হতে কেমন সময় ব্যয় হবে, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে কিনা এসবের ওপর নির্ভর করেই ব্যয়ে কমবেশি হবে। এরপর আদালত মামলা গ্রহণ করার পর তা পরিচালনা করতে দু’ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।

প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষে কমিশন ভিত্তিতে ল’ ফার্ম কাজ করতে পারে। অর্থাৎ অর্থ আদায় করতে পারলে মোট টাকার একটি অংশ ৫, ১০ বা ২০ শতাংশ কেটে নেবে। অপরটি হচ্ছে নির্ধারিত ফি দিয়ে আদালতে শুনানি চালানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার রিজার্ভ চুরি প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২৪৪ কোটি টাকা) গেছে সোলারি ক্যাসিনিওতে। এ অর্থ ফিলিপাইনের উচ্চ আদালতের নির্দেশে জব্দ আছে। পরবর্তীকালে আদালত ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয় । এরপর এই টাকার ওপর পুনরায় ফিলিপাইনের সুপ্রিমকোর্টের আদেশে ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। আর ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার এবং আরসিবিসি ব্যাংকে জমা ৭০ হাজার ডলারও ফেরত পাওয়া গেছে।

এখনও পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি ১ কোটি ৪২ লাখ ডলারের। বাকি অর্থের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার আছে ফিলিপাইনের রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমোর হিসাবে। ৬০ লাখ ডলার এখনও রয়েছে কিম অং-এর কাছে। এছাড়া ১২ লাখ ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে কিম ওয়াংয়ের দু’জন কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দাখিল করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। এ রিপোর্টটি এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। পাশাপাশি সিআইডি এ বিষয়ে তদন্ত করছে।
যুগান্তর

Next Post

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইটের বদলে পাটকেল নিক্ষেপের মতো পরস্পরবিরোধী শুল্কারোপ আভাস দিচ্ছে

বৃহস্পতি জুলাই ১২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইটের বদলে পাটকেল নিক্ষেপের মতো পরস্পরবিরোধী শুল্কারোপ আভাস দিচ্ছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশ বাণিজ্য যুদ্ধে নেমে পড়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত যদি তারা নিজেদের বাজার, বিশেষত চীনের বাজার উন্মুক্ত করার […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links