আভা ডেস্কঃ ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে নয়াদিল্লিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পর বিখ্যাত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকে নির্বিচারে তাণ্ডব চালিয়েছে ভারতের পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাথরুমের ভেতর লুকিয়ে পড়েন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভেতরে থাকা এক শিক্ষার্থীর ভিডিও ফুটেজে কয়েক ডজন ছাত্রছাত্রীকে আশ্রয়ের জন্য হুড়োহুড়ি করতে, ডেস্কের নিচে মাথা লুকিয়ে রাখতে এবং পালানোর চেষ্টায় ধাতব, ভাঙা গ্লাস ডিভাইডারের ওপর দিয়ে লাফ দিতে দেখা গেছে।
আর আনন্দবাজারপত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের বর্বরতার চিহ্ন হিসেবে সোমবারও ওই গ্রন্থাগারের মেঝেতে ফোটা ফোটা রক্তের দাগ ছিল।
রোববার হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে দক্ষিণপূর্ব দিল্লির এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে যে সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে বাঁচতে ছয় শতের বেশি শিক্ষার্থী ওই লাইব্রেরির ভেতর আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পুলিশের হামলায় সন্ধ্যার পর থেকে ওই ভবনটিতে আতঙ্কের রাত নেমে এসেছিল।
আনন্দবাজারপত্রিকা বলছে, পুলিশের হামলায় গ্রন্থাগারের রিডিং-রুমের প্রায় কোনও কাঁচই আস্ত নেই। মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে চেয়ার-টেবিল। সিসি ক্যামেরা ভাঙা। পেটমোটা বইয়ের পাশে মেঝেতে ইটের টুকরো আর কাঁদানে গ্যাসের শেল।
এমনকি নরেন্দ্র মোদী আর অযোধ্যা সম্পর্কিত বই রাখা যে শো-কেসে, তার কাঁচও রেহাই পায়নি অমিত শাহের পুলিশের হাত থেকে।
তারা জানায়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার চত্বরে পুলিশি তাণ্ডবের ১২ ঘণ্টা পরে ক্যাম্পাসে পা রেখেও মনে হল, যেন যুদ্ধক্ষেত্র!
জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জানান, গাড়িতে আগুন কিংবা পুলিশের ওপর হামলায় তাদের কেউ জড়িত ছিল না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটিয়েছে বলেও দাবি তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক আসাদ মালিক জানান, রোববার প্রায় শতবর্ষ পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তারা ক্যাম্পাস ফটকে দাঁড়িয়ে পরিচয়পত্র দেখে দেখে শিক্ষার্থীদের ভেতরে ঢুকিয়েছিলেন।
অপরদিকে পুলিশের ভাষ্য, কিছু নাশকতাকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে ঢুকে সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা সেসব নাশকতাকারীকে ধরতেই জামিয়ার ভেতরে হানা দেয়।
সোমবার সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন পুলিশের মুখপাত্র এম এস রানধাওয়া বলেন, দুষ্কৃতিকারী ও উচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে ঢুকে পড়েছিল, তাদের ধরতেই ধাওয়া করেছিল পুলিশ।
তার এ মন্তব্যের বিরোধীতা করে মালিক বলেছেন, পুলিশ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছিল, ক্যাম্পাসে তখন কেবল জামিয়ার শিক্ষার্থীরাই ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২ বছর বয়সী স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সালিহা পিপি জানান, রোববার শতাধিক পুলিশ সদস্য যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের তাড়া করেন, কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন এবং লাঠিচার্জ করেন, তখন তিনি ক্যাম্পাসেই ছিলেন।
তিনি বলেন, একের পর এক কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। যখনই কোনো শিক্ষার্থীকে পাচ্ছিল, তখনই বর্বরভাবে তাকে মারছিল।