আভা ডেস্কঃ পুলিশকে ৩টি বিষয়ে (জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসন) গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৩ জানুয়ারি) সারদায় ৩৭তম বিসিএস-পুলিশ ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনি কুজকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন তিনি। গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনী পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশের মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অব্যাহত আছে।
‘স্বাধীন দেশের পুলিশ’ জাতির পিতা তার ভাষণে বলেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের, তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজদের নও, তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, তাদের দুর্দিনে সাহায্য করা।
“অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটা কথা এবং নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। আজকে নবীন পুলিশ অফিসাররা তোমরা শপথ গ্রহন করেছ, সেই শপথ নিয়েই তোমাদের চলতে হবে। সেই সাথে জাতির পিতার নির্দেশনাগুলোও তোমাদের মেনে চলতে হবে।”
জাতির পিতার চিন্তার বাস্তবায়ন করতে হলে পুলিশ বাহিনীর অনেক দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আশা করি এই দায়িত্বটা পালন তোমরা করবে। তোমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছ, তোমাদের শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সব সময় দেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই তোমাদের কর্তব্য। সেটা মনে রাখতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
“এক্ষেত্রে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আরও একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।
“পুলিশ বাহিনীকে তিনি এই আহ্বানটি করেছিলেন যে, পুলিশকে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। আর মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারলে, আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে মানুষকে সাথে নিয়েই এদেশে যেকোনো অপরাধ দমন করা যাবে। কাজেই সেভাবেই নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে,” বলেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং সম্ভ্রমহারানো মা-বোনের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার পাশপাশি মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেওেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান সরকার প্রধান।
প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী পুলিশ সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পদক দেন।
রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্রান্তে এই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।