আভা ডেস্ক: গত ডিসেম্বরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিপক্ষদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। আট মাস পর ভুটানে একই প্রতিযোগিতায় আজ তারা মাঠে নামছে নবাগত পাকিস্তানের বিপক্ষে। মেয়েরা কি পারবে ডিসেম্বর মাসটাকে ফিরিয়ে আনতে?
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পেজা তুলোর মতো সারাক্ষণ মেঘ উড়ছে। সকালের কুয়াশা সরিয়ে বেশ ঝলমলে রোদই উঠেছে থিম্পুর আকাশে। রাজধানী শহরে অফিসের কর্মব্যস্ততা ঠিকই আছে। কিন্তু রাস্তায় কোনো কোলাহল নেই। এমন শান্ত পরিবেশেই আজ সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের মেয়েরা। সকালের নাশতাটা সেরে টিম হোটেলের আশপাশেই হালকা হাঁটাহাঁটি, আর নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মেতে ওঠা। পাহাড়ের শহরে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দিন কাটছে বাংলাদেশ দলের। এমন নির্ভার হয়েই সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে খেলা।
বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গত কয়েক বছর ধরেই শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অর্জনটা একদিনে হয়নি। ২০১৪ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে শুরু। এরপর তাজিকিস্তানে একই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও সেরা। এরপর গত বছর ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টের পর এপ্রিলে হংকংয়ে চার জাতি জকি কাপেও হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ভুটানেও ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এই বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের ফেবারিট বাংলাদেশের সামনে পাকিস্তান কোনো বাধা হওয়ার কথা নয়। সাফের টুর্নামেন্ট উপলক্ষে এই পাকিস্তান দল মাত্র এক মাস অনুশীলন করেছে লাহোরে। ফিফার নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত তিন বছর কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই অংশ নিতে পারেনি পাকিস্তান। মার্চে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন পুরুষ দলের পাশাপাশি নজর দিয়েছে মহিলা দলের দিকেও। অভিজ্ঞ কোচ মোহাম্মদ রশিদের হাতে হঠাৎ করেই তুলে দেওয়া হয়েছে একঝাঁক অনভিজ্ঞ কিশোরী। গত জুলাইয়ে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া ১২ দলের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া ২৩ জন খেলতে এসেছে ভুটানে।
পাকিস্তান দলের দুর্বলতার জায়গাটা ভালোই জানা গোলাম রব্বানী ছোটনের। তারপরও একচুল ছাড় দিতে রাজি নন তিনি, ‘হংকংয়ে মেয়েরা চার জাতি টুর্নামেন্টে যেভাবে ম্যাচপ্রতি ৮-১০ গোল দিয়েছে, এখানেও ঠিক সেভাবেই খেলবে।’ মেয়েদের ফুটবলে পাকিস্তানের সঙ্গে শতভাগ সাফল্য বাংলাদেশের। ঢাকায় ২০১০ এসএ গেমসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল ২-০ গোলে হারায় পাকিস্তানকে। একই বছর মেয়েদের প্রথম সাফে কক্সবাজারেও বাংলাদেশ জেতে ২-০ গোলে। প্রতিপক্ষ দুর্বল পাকিস্তান বলেই কিনা, জয়রথের চাকাটা এবারও সামনের দিকেই এগিয়ে নিতে চায় মারিয়া মান্দারা।
যদিও এসব নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না মেয়েরা। সবার মনের মধ্যে একটা শব্দই ঘুরছে—জয়। আজ সকালে সবার হয়ে যেন সেই কথাটাই বলে দিল মনিকা চাকমা, ‘আজ আমরা জেতার জন্যই মাঠে যাব। পাকিস্তান সম্পর্কে যদিও তেমন কিছু জানি না। তবে কোনো প্রতিপক্ষকেই দুর্বল ভাবি না আমরা। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলব। সেরাটা উজাড় করে জিতে টুর্নামেন্ট শুরু করতে চাই।’
ঢাকায় বয়সভিত্তিক সাফের প্রথম আসরেও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল বাংলাদেশের। গত বছর নেপালকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আজও কি গত আসরের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে মারিয়ারা?
প্রথম আলো