নিজস্ব প্রতিনিধিঃ নানা জল্পনা–কল্পনা শেষে রবিবার অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রী–বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে যে চারজন নেতা মনোনীত হলেন তাঁদের তিনজন নবীণ আর একজন প্রবীণ। অথচ বাদ পড়লেন আজই বিলুপ্ত হওয়া আগের কমিটির সভাপতি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
এর কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, ফারুক–আসাদের মধ্যেকার চলমান কোন্দলই দু’জনের কপাল পুড়ালো। ফলে ত্যাক্ত–বিরক্ত দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা দু’জনকেই বাদ দিতে বাধ্য হলেন। যা রাজশাহীর ইতিহাসে এমনটি কখনোই ঘটেনি বলে জানিয়েছেন প্রবীণ নেতারা। এর আগে কখনোই সভাপতি–সম্পাদক দু’জনেই বাদ পড়েছেন এমন কোনো ইতিহাস রাজশাহী আওয়ামী লীগে দেখা যায়নি। যা এবারোই ঘটে গেলো। দলের শীর্ষ দুটি পদের একটিতেও জায়গা হলো আজকেই বিলুপ্ত হওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের।
সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়েও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার কোন্দলে কেন্দ্র বিরক্ত হয়ে পড়েছিলো সেটি স্পষ্ট করেছেন দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম–সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিরক্ত হলে বলেন, এই মঞ্চে বসেও আমাদের শুনতে হয় রাজশাহীর এমপি–মন্ত্রীরা কথা শুনেন না তৃণমূলের নেতাদের। আমাদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। হঠা করে এই রাজশাহীর কেন সম্মেলন হচ্ছে–এটি আমাদের জন্য বেদনার। এই রাজশাহীতে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো ভাইয়ের রাজনীতি চলবে না। এখানে একটাই রাজনীতি চলবে শেখ হাসিনার।
জাহঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও ৭১টি ইউনিয়নের কাউন্সিল হয়নি। কিন্তু জেলার কাউন্সিল হচ্ছে। এটি করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। এখানে আগামীতে যারা নেতৃত্ব দিবেন, তাদের মধ্যে যেন কোনো বিভেদ না থাকে।’
মোহাম্মদ নাসিমও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দলের বিষয়টি নিয়ে ইশারা–ইঙ্গিতে নানা কথা বলেন।
দলীয় সূত্র মতে, এর আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর। এর প্রায় এক বছর পরে নানা কাঠ–খোড় পুড়িয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিল হওয়ার পর পরই জেলা সভাপতি–সম্পাদক নিজেদের বলয়ের লোকজনকে কমিটিতে নিতে তোড়–জোড় শুরু করেন। আর নিয়েই মূলত শুরু হয় দু’জনের মধ্যে রশি–টানাটানি। পরবর্তিতে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া ছাড়াও কেন্দ্রেও সমানে নালিশ করতে থাকেন দু’জনে। ফরুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগের পাহাড় জমা হতে থাকে কেন্দ্রে।তার বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ জমা পড়ে কেন্দ্রে।
এর বাইরে প্রকাশ্যে বা মিডিয়ায় পাল্পাপাল্টি বক্তব্য দেন দু’জনে। এতে ফারুক চৌধুরী আসাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন। আর আসাদ ফারুককে রাজাকারপূত্র বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি বিএনপি–জামায়াতের পৃষ্ঠপোশক বলেও মন্তব্য করেন। দুজনের এমন বক্তব্যও ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়ায়। ঝড় উঠে কেন্দ্রে।
এ অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বভিাগীয় প্রতিনিধি সভাতে রাজশাহী জেলা কমিটি থেকে সভাপতি–সম্পাদকসহ কাউকেই বক্তব্য পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শেষে গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজশাহী জেলা কমিটির সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হয়। এরপরও ফারুক–আসাদের মধ্যে বিরোধের কারণে সম্মেলন নিয়ে শুরু হয় নানা জটিলতা। শেষ পর্যন্ত গতকাল সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। আর এতে বাদ পড়েন দু’জনেই।
প্রসঙ্গত, এই সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি করা হয়েছে সাবেক এমপি ও সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এছাড়াও যুগ্ম–সম্পাদক হয়েছেন রাজশাহী–৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে।