নাটোরে সংক্রমণের হার কমলেও, ঝুঁকি মুক্ত নয়

নাটোর প্রতিনিধিঃ নাটোরে করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার জেলায় সংক্রমণের সর্বোচ্চ হার ছিল ৪৭ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ৪০ শতাংশের নিচে নেমে এলেও শঙ্কিত সর্বমহল। সেক্ষেত্রে অনেকেই কঠোর লকডাউনের পক্ষে। জনভোগান্তি না বাড়িয়ে সরকারের ঘোষিত বিধি নিষেধ কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেছেন অনেকেই।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানান যায়, সোমবার গত চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এই ফলাফল আসে। এ হিসেবে সংক্রমণের হার ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। নমুনা প্রদানের হার কম হওয়ায় এমন ফলাফল। সেক্ষেত্রে নাটোর জেলা ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দাবী, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর অবস্থানের কারনে সংক্রমণ কমছে। তবে সংক্রমণের হার কমলেও জেলার সদর হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ ডেডিকেটেড ৩১ আসনের সবকটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছেন। করোনাকালীন সোমবার প্রথমবারের মত সর্ব্বোচ্চ রোগী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এসব রোগীদের সকলেই নাটোরের স্থানীয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী কোন জেলার রোগী নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়নি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ পরিতোষ কুমার রায় বলেন, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা রোগীদের ডেডিকেটেড আসনে ২৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরবর্তীতে নতুন আরো ৮ জন রোগী ভর্তি হলে ৩১ আসন পূর্ণ হয়ে যায়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশ শহর এলাকার। তারা নিজেদের বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কোন সমস্যা হলে তারা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করছেন।

তিনি বলেন, নাটোর সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের কোন ঘটতি নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহে কোন ত্রুটি হলে বিকল্প হিসেবে ১৭০টি সিলিন্ডার মজুদ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, তারা সকলেই করোনা নিয়ন্ত্রণে একত্রে কাজ করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলে নজর রাখছে পুলিশ। যেহেতু নাটোর শহরে সংক্রমণের হার বেশী তাই শহর এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সরকারের বিধিনিষেধ মানতে জনগনকে বাধ্য করা হচ্ছে। গ্রাম এলাকার মানুষদের মাস্ক ছাড়া শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা এবং স্বল্প পরিসরে গণপরিবহন চলাচল ও যাত্রিদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিমও কাজ করছে। ইতোমধ্যে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। এরপর সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে নাটোর এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নইলে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, সংক্রমণ রোধে শহরে একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। তিনি নিজেই প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যাচ্ছেন এবং মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ করে বাড়ির বাহিরে এলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করার জন্য বলছেন। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য হন সেজন্য জরিমানার হারও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু আমের রাজধানী খ্যাত চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা সীমান্তবর্তী জেলা। এই দুই জেলায় সংক্রমণের হার বেশী হওয়ায় পাশের জেলা হিসেবে নাটোর ঝুঁকিমুক্ত নয়। মৌসুমে আম ব্যবসায়ীদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় যেতে হয়। সেক্ষেত্রে নাটোরকে পুরোপুরি করোনা মুক্ত রাখা কঠিন। যদিও স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ না গিয়ে আম সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কঠোর লকডাউনের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। কাল মঙ্গলবার করোনা প্রতিরোধ টাক্সফোর্স কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান বলেন, যথাযথ নিয়মে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কারো রেহাই নেই। তাই সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া নিজের সম্পর্কে জানতে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। মানুষকে নমুনা পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। লকডাউন দিলে মানুষ মানতে চায়না। তবুও লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

Next Post

প্রসূতিদের এক নিরাপদ স্থান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

মঙ্গল জুন ১ , ২০২১
নওগাঁ, মান্দা প্রতিনিধিঃ গৃহবধূ শাবনাজ পারভীন (২০) রাজশাহীর তানোর উপজেলার কিসমত বিল্লি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। বাবার বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার জোনাকি গ্রামে। গর্ভকালীন পরিচর্যার জন্য বাবার বাড়িতে থেকে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়মিত পরামর্শ নিয়েছেন। তাই প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে নেওয়া হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে। সেখানে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links