নওগাঁ, মান্দা প্রতিনিধিঃ গৃহবধূ শাবনাজ পারভীন (২০) রাজশাহীর তানোর উপজেলার কিসমত বিল্লি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। বাবার বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার জোনাকি গ্রামে।
গর্ভকালীন পরিচর্যার জন্য বাবার বাড়িতে থেকে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়মিত পরামর্শ নিয়েছেন। তাই প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে নেওয়া হয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে। সেখানে গত রোববার সকাল ৯ টা ১৭ মিনিটে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
শুধু শাবনাজ পারভীনই নন, একইদিন মুক্তা খাতুন ও মেরিনা বিবি নামে আরও দুই নারী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নিরাপদ প্রসবের পর প্রসূতি ও তাদের নবজাতকরা সুস্থ রয়েছে। প্রসূতি মুক্তা খাতুন মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের সবুজ হোসেনের ও মেরিনা বিবি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের বেলনা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।
এসময় প্রসবের অপেক্ষায় ছিলেন নাসিমা বিবি নামে আরেক নারী। এ চিত্রটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের।
প্রসূতির স্বজনরা জানান, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটিতে প্রতিদিন দুই-চারজন নারীর নরমাল ডেলিভারী করানো হয়। এজন্য কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। তবে খুশি হয়ে কেউ কেউ মিষ্টি খাওয়ার জন্য কিছু তুলে দেন তাদের হাতে। এখানে চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি পরিচর্যা দেন সংশ্লিষ্টরা।
সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজন আতাউর রহমান, আয়েশা বিবিসহ আরও অনেকে জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সেবার মান অত্যন্ত ভালো। কিন্তু প্রসূতিদের জন্য পর্যাপ্ত কক্ষ ও শয্যা নেই। একটি রুমে চারটি বেড রয়েছে। এখানেই গাদাগাদি করে চলাফেরা করতে হয়। এরপর রোগীর সংখ্যা বাড়লে বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। যা গর্ভবতী নারী ও তার স্বজনদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।
অবিলম্বে এখানে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোরও দাবি করেন তারা। জানা গেছে, নিরাপদ প্রসব, গর্ভবতী পরিচর্যা, মা ও শিশু পরিচর্যাসহ কয়েকটি বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। ধারাবাহিক এ সাফল্যের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গত ১৫ বছর ধরে দেশ ও বিভাগ সেরা পুরস্কার পেয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৭৫ জন নারীকে নিরাপদ প্রসব করানো হয়েছে। ৬ হাজার ৫৪৫ জন নারীকে দেওয়া হয়েছে গর্ভবতী পরিচর্যা।
এছাড়া ২ হাজার ২০৩ নারীকে গর্ভোত্তর পরিচর্যা, ৭ হাজার ২৬৯ জনকে শিশু পরিচর্যা, ২ হাজার ১৮৮ জন নারীকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ও ২ হাজার ৩০১ জন কিশোর-কিশোরীকে দেওয়া হয়েছে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রথম দেশ সেরার পুরস্কার লাভ করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে এ সাফল্য অর্জন করে আসছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে জেলা, ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৯ সালে বিভাগ সেরার পুরস্কার লাভ করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। অবশিষ্ট বছরগুলোতে বিভাগ সেরা হয়ে জাতীয় পর্যায়ে দেশ সেরার পুরস্কার লাভ করে।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে মোজাম্মেল হক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে শফিকুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা পদে নাহিদ সুলতানা, ফার্মাসিস্ট পদে নাজমা খাতুন, এমএলএসএস পদে আব্দুর রহিম ও আয়া পদে আনোয়ারা বেগম কর্মরত আছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আফম আছফানুল আরেফিন জানান, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। কিন্তু সেখানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হলে চিকিৎসাসেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে ধাত্রী প্রশিক্ষণের উদ্বোধন উপলক্ষে রোববার বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নরমাল ডেলিভারী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর ধারাবাহিক সাফল্য মান্দাবাসীর অর্জন। আগামীতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে গতিশীল করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।