আভা ডেস্কঃ বিএনপি ধর্মীয় বিভেদে বিশ্বাস করে না জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখানে সবাই বাংলাদেশি, এই পরিচয়টাই মুখ্য।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশকে যদি সমৃদ্ধ করতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে এখানে অবশ্যই একটা ইস্পাতকঠিন ঐক্য দরকার আছে।’
বিএনপি বিভাজনের নয়, সব সময় ঐক্যের রাজনীতি করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই বাংলাদেশি দর্শনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সব মানুষকে একত্রিত করতে সক্ষম হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ সংঘনায়ক ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এসব কথা বলেন ফখরুল।
২০২০ সালের ৩ মার্চ মারা যান শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। করোনা মহামারির কারণে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই অনুষ্ঠান ওই সময়ে হয়নি। দুই বছর পর বুধবার তার তিন দিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলবে ৪ মার্চ পর্যন্ত।
এ উপলক্ষে রাজধানীর বাসাবো ও সবুজবাগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন।
শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ১৯৩৩ সালের ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পাদুয়ায় জন্ম নেন। সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়।
ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব প্রথমে বিহারের মূল ভবনের দোতলায় গ্লাসের ভেতরে রক্ষিত ভদন্ত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর মরহেদে দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি সন্মান জানাতে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে বিএনপি মহাসচিব যান মূল প্যান্ডেলে। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিএনপি মনে করি যে, বাংলাদেশ আমার দেশ, আমরা মনে করি যে, এখানে যারা বাস করেন, তাদের সব মানুষই বাংলাদেশি। এখানে ধর্ম আলাদা, একেক জনের একেকটা ধর্ম হতে পারে, চিন্তাভাবনা আলাদা হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গায় এসে আমরা সবাই বাংলাদেশি। এই তত্ত্ব আমাদেরকে দিয়েছেন তার দর্শনের মাধ্যমে তিনি হচ্ছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।’
বাংলাদেশে ধর্মের হানাহানি সবচেয়ে কম বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘এটা বাস্তবতা। কিছু সংখ্যক কুচক্রি আছেন তারা মাঝে-মধ্যে বিভাজন করার সৃষ্টি করে। কিন্তু হাজার বছর করে এখানে একই সঙ্গে ভাইয়ের মতো বাস করেছে মানুষ।’
বৌদ্ধ ধর্মকে শান্তির, কল্যাণের উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এই ধর্মের একটা প্রভাব শুধু বাংলাদেশে নয়; বিশ্বের সকল জায়গায় বড় রকমের প্রভাব সৃষ্টি করেছিলো। মানুষের কল্যাণের জন্য এই ধর্ম প্রচার করা হয়।’
প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, সুশীল বড়ুয়া, মহানগর বিএনপির হাবিবুর রশীদ হাবিব, ইউনুস মৃধা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মহান শুদ্ধানন্দ মহাথেরো যেন পরলোকে শান্তিতে থাকেন এই প্রার্থনা আমরা করি। আমরা প্রার্থনা করব, সৃষ্টিকর্তা যেন পৃথিবীকে শান্তিময় করে দেন, বাংলাদেশকে তিনি যেন শান্তিময় করে দেন।
‘আমরা যেন, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, একটি পরস্পরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বমূলক-সৌহার্দমূলক রাষ্ট্রের যেন বাস করতে পারি আনন্দের সঙ্গে, প্রেমের সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে- এই হোক আজকে আমাদের প্রার্থনা।’
তিন দিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর জীবন ও কর্মের ওপর শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, মহা সংঘদান, ধর্মালোচনা, স্মৃতিচারণ, বৌদ্ধ যু্ব ও মহিলা সমাবেশ, বৌদ্ধ আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। শেষ দিনে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শেষ হবে সব আনুষ্ঠানিকতার।