আভা ডেস্কঃ উজানের আকস্মিক ঢলে মাস দেড়েক আগে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। এরপর পানি কমলেও নিয়মিত ভাঙনে সেখানের অনেক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাদাম, ভুট্টা ও বিভিন্ন সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই গত শুক্রবার ফের পানি বেড়েছে তিস্তায়। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার চার ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গঙ্গাচড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী লক্ষিটারী, কোলকোন্দ, নোহালী ও আলমবিদিতর- এই চার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন। নদীর তীরবর্তী এলাকায় আমন ধানসহ অনেক ফসল পানিতে ঢুবে গেছে। কাচা রাস্তাও ভেঙে গেছে। কাঁদাপানিতে চলাচল করছে মানুষ। এর মধ্যে গৃহপালিত পশুসহ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। এছাড়া উঁচু সড়কে বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণী বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি দুর্ভোগে পড়া এসব মানুষজন।
লক্ষিটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি চরের বেগম বানু বলেন, ‘সবাই আইসে ছবি তুলি নেয়, ফেসবুকোত দেয়, টিভিত দেখায়। হামার স্বামী বানের পানিত ভাসি গেইছে, লাশও পাই নাই। ওই বার খালি ১০ কেজি চাল পাইছি, আর কিছু পাই নাই। এবারও পানি ঘরোত উঠিল, বাড়িঘরের মাল নিয়ে রাস্তায় আসছি। কাইও (কেউই) কিছু দেয় নাই। ছেলেমেয়েগুলে বাপের মুখটাও দেখপের পায় নাই।’
পশ্চিম ইচলির মাহফুজার রহমান বলেন, ‘হামার অন্য কোনো চিন্তে নাই। খালি চিন্তে বাড়ি কখন ভাঙ্গা লাগবে আর খাওয়া নিয়ে। শুনোছি মেলা মেলা হেলেপ (হেল্প/সহায়তা) নাকি করোছে অনেকে। হামরা খালি শুনি, কিছু পাই নাই।’
শঙ্করদাহ গ্রামের গৃহবধূ ফাতেমা বলেন, ‘দুই-চারদিন পরপর পানি বাড়ে, পানি কমে। ভালো মানুষ ঘুমাই, সকালে উঠি দেখি বাড়িত ভেতরোত পানি। একবার পানি উঠলে তিন মাস কষ্ট করা লাগে। এবার ঘনঘন পানি আসোছে। কষ্টও বাড়াছে। একই গ্রামের আতিকুল ইসলাম বলেন, শোকরবার (শুক্রবার) থাকি মানসের বাড়িত। হামরা না হয় থাকনো (থাকলাম), গরু-ছাগলগুলে কোটে থুই (কোথায় রাখি)।’
গঙ্গাচড়ার বিনবিনা চরের সুলতানা বেওয়া বলেন, ‘ঘরোত-বাইরোত সোগটাই (সবখানে) পানি। আন্দি বাড়ি খামো, এই জাগা নাই। ভাদোর (ভাদ্র) মাসে এমন বন্যা হয় নাই কখখনো। এই নিয়ে চারবার পানি আসিল বাড়িত। এই বছর খুব কষ্ট হইলো হামার।’ একই এলাকার আনোয়ারা বলেন, ‘পানিত ডুবি থাকলে সরকারি লোকজন আসি ২-৩ কেজি চাল দিয়া যায়। হামরা কি সরকারের কাছে চাল চাই? হামরা কামাই করি খাবার পাই। হামারগুলার একটায় দাবি, শংকরদহ থাকি বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত একটা বেড়িবাঁধ। তাহলে হামরাগুলা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া শান্তিতে থাকনো হয়।’
একই দাবি আসিমুদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘কষ্ট করি ফসল আবাদ করি, নদী ভাসে নিয়া যায়। হামাকগুলাক দয়া করি নদীটা বান্দি দেও। হামাকগুলাক নদী ফকির বানাইছে। নদী বান্দি দিলে হামারগুলার কষ্ট থাকে না।’
কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে বারবার বলেছি, তিস্তা নদীর ডান তীরে একটি শক্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য। তারা আমাদের কোনো কথা রাখেন নি। বন্যা এলে শুধু আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। বিষয়টি অসংখ্য বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। লক্ষিটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লা হেল হাদী বলেন, এ বছর চারবার বন্যা হলো। কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি। আগে শুকনা খাবার দেওয়া হলেও এবার এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এরপরও বন্যাকবলিত মানুষজনকে শুকনা খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দীন বলেন, ‘পানি এসেছিল, আবার নেমেও গেছে। মূলত তিস্তার নিম্মাঞ্চলের মানুষজনের বাড়িঘরে পানি উঠেছিল। আমরা শুকনো খাবার, চাল-ডাল চেয়ে জেলা প্রশাসক স্যারকে লিখেছি। চিঠিতে আমরা এক হাজার পরিবারের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি। এখনো বরাদ্দ আসেনি। আসলে তালিকা করে দিয়ে দিবো।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘গত শুক্রবার দিনব্যাপী বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়েছিল। সে কারণে তিস্তার নিম্নাঞ্চলে অনেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শনিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তিস্তা নদীর উজানের অংশ ভারতের সিকিম ও গ্যাংটকে পুনরায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।’
শনি সেপ্টে. ৩ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোর উপজেলার বহরইল গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলামকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার মামলার প্রধান আসামিকে ছয়বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মণ্ডলপাড়া গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের একটি দল এ অভিযান চালায়। গ্রেপ্তার আসামির নাম ময়েজ উদ্দিন […]
এই রকম আরও খবর
-
৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:৩৯ অপরাহ্ন
-
৮ জুলাই, ২০২১, ৮:৩৬ অপরাহ্ন
-
১ জুন, ২০২২, ৩:৩৬ অপরাহ্ন
-
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ অপরাহ্ন
-
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:৪২ অপরাহ্ন
-
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:২৬ অপরাহ্ন