আভা ডেস্ক : বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় দশ বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সাতটি নতুন এবং বাকি তিনটি পুরনো ব্যাংক। শাস্তি হিসেবে এই ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব থেকে কৃষিঋণের অব্যহৃত তহবিলের ৩ শতাংশ জব্দ করা হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। প্রত্যেক বছর করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য শাস্তি নয়, বরং ব্যাংকগুলোকে মানসিক চাপে রেখে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো যদি কৃষিঋণের আগামী দুই অর্থবছরের নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ গত অর্থবছরে অব্যহৃত ঋণ বিতরণ করতে পারে তাহলে জব্দকৃত তহবিল ফেরত দেয়া হবে। জব্দকৃত তহবিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে কোনো সুদ দেয়া হয় না।
কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এবি ব্যাংক কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রার ৮১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বিতরণ করে। এছাড়া মেঘনা ব্যাংক ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংক ৩০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ২ শতাংশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৫০ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ফারমার্স ব্যাংক বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ পূরণ করেছে। এর বাইরে নতুন-পুরনো মিলে আরও তিনটি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তহবিল জব্দ করবে এবং কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে না। তবে তহবিলের জব্দ হওয়ার পর তা জানিয়ে দেয়া হবে।
গত অর্থবছর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক তাদের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জনগণের জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বাধ্য থাকার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। যদি তারা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত বছরের শেষের দিকে উল্লিখিত দশ ব্যাংকের বেশির ভাগ ব্যাংক তারল্য সংকটে ছিল। সে কারণেই কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, এবার সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
কৃষিঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৭-১৮) ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এটি অর্জন করেছে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সামগ্রিক লক্ষ্য অতিক্রম করলেও উল্লিখিত দশটি ব্যাংক নিজেদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ জন কৃষক ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৭ জন নারী ঋণ পেয়েছেন। গত বছর কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে জনপ্রতিনিধি, কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিকে ঋণ বিতরণে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ সময় প্রকাশ্য ঋণ বিতরণ কর্মসূচির আওতায় ৯৫ হাজার ৪১০ জন কৃষকের মাঝে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। বিদায়ী অর্থবছরে বছরে ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ১৫৩ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার ৯২ কোটি টাকার কৃষিঋণ পেয়েছেন। এছাড়া চর, হাওরসহ অনগ্রসর এলাকার ৮ হাজার ৩৩৯ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এসব পদ্ধতি এবারও চালু থাকবে বলে বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
যুগান্তর