আভা ডেস্ক :বরিশালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলেও মনে করেন তিনি।
যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তাপস বলেন, ‘প্রশাসনের আচরণ নিরপেক্ষ নয়। তারা বিশেষ এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা রয়েছে আমাদের। তবে ভোট যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে বিপুল ভোটে জয়ী হবে জাতীয় পার্টি।’
বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা তাপস। অনেকটা হঠাৎ করেই তাকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টি। অবশ্য এই মনোনয়ন দেয়ার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই প্রচারণার মাঠে নামেন তাপস।
শুরুতে মনোনয়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে খানিকটা সংশয় থাকলেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সে সংশয় দূর করে দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দারুণ এক উদ্দীপনা আনেন তিনি।
প্রায় ঝিমিয়ে থাকা দলকে এক ঝটকায় আনেন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাতারে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পরপরই আলোচনায় আছেন তিনি।
দলের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাপস বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নির্বাচনই একটি দলের শক্তি-সামর্থ্য আর জনসমর্থন যাচাইয়ের প্রধান মাপকাঠি। সেই নির্বাচন থেকেই বলতে গেলে দূরে ছিল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকাকালে প্রায় কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই অংশ নিতে পারিনি আমরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে চুপ থাকতে হয়েছে। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। রংপুরে আমাদের বিজয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্যরকম উৎসাহ দিয়েছে। তাছাড়া আমরা এখন আর মহাজোটে নেই। সবকিছু মিলিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে আমাদের কর্মীরা। বরিশালে নির্বাচনে নেমে আমরা কেন্দ্র কমিটি করেছি। দলের নেতাকর্মীরা দিন-রাত লাঙ্গলের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। পূর্ণ উদ্যম আর শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সবাই। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক এই রূপ এর আগে আর কখনও দেখেনি বরিশালের মানুষ।’
নির্বাচনী পারিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট না। এখানে প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। আমি পুলিশের গাড়িতে এক বিশেষ প্রার্থীর প্রচারপত্র লাগানো দেখেছি। ওই প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও আমলে নেয় না পুলিশ। প্রচারণা চালানোর সময় আমার গাড়িতে হামলা হয়েছে। আমার কর্মীদের বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে।’
এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন অভিযোগ করব? এসব দেখার জন্য তো প্রশাসনের লোকজন আছে। তারা মনিটরিং করে না? তারা এসব ব্যাপারে কেন ব্যবস্থা নেয় না?’
নির্বাচনে জয়-পরাজয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এখানে ইনশাআল্লাহ জাতীয় পার্টি জয়ী হবে। তবে সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কিনা তাই নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। এখানে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনও বিরাজ করছে না। আমরা আতঙ্কে আছি যে বিশেষ কোনো প্রার্থীর পক্ষে হয়তো ভোটের দিন কারচুপি করা হবে।’
তেমন হলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে ৩০ জুলাইর পর স্থানীয় পর্যায়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে জাতীয় পার্টি।’
নির্বাচিত হলে বরিশাল নগরীর উন্নয়ন প্রশ্নে আপনার বিশেষ কোনো ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘আমি সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। নগর ভবনকে আমি সেবক ভবনে পরিণত করব। এই নগরীর সন্তান হিসেবে আমি জানি কোথায় কী সমস্যা। বর্ধিত এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি আমি এই নগরীর সব সমস্যার সমাধানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজ করব।’
নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল মেনে নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে অবশ্যই মেনে নেব। আর যদি কারচুপি করে কেউ বিজয়ী হয় তাহলে তো মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং সেই ফলাফলের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামবে জাতীয় পার্টি।’
যুগান্তর