আভা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে বেশি জরুরি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ইসি নিরপেক্ষ হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। আর আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আ’লীগ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। যদি প্রতিবন্ধকতা নাই সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে সেই অপবাদ আ’লীগের ওপর চাপাবেন কেন? জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের আপত্তি কোনো জটিলতা নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার সিলেট সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মনে হয় না একজন কমিশনারের নোট অব ডিসেন্টে কোনো জটিলতা হবে। পাঁচজন কমিশনারের একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারেন। ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটাই তো গণতন্ত্রেও সৌন্দর্য। তিনি বলেন, বিএনপির ইভিএমে এত ভয় কেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই জিতবে। যে প্রক্রিয়ায়ই ভোট হোক না কেন, সেটা বিষয় নয়, নিরপেক্ষ ভোটই বড় বিষয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই ইভিএম। বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সিলেট মহানগর ও জেলা আ’লীগ আয়োজিত শোকসভা এবং পরে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকায় ফেরার পথে সকালে এই সংবাদ সম্মেলন।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নানা শর্ত প্রসঙ্গে আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারে না তারাই বিভিন্ন শর্ত দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল জনগণের ওপর। তাই আ’লীগ জয় পেয়েছিল। বিএনপি এখন জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে ভোট থেকে দূরে থাকতে চায়। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির অংশ নিতে ভয় কোথায়? ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অন্য গণতান্ত্রিক দেশে কোন দল ভোটে অংশ নিল বা কোন দল নিল না, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার কারণ নেই। আমরা চাই তারা আসুক।
অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে সিলেট সিটি নির্বাচনে আ’লীগের পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে সংকট ছিল। তবে ৪টি সিটি নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও হতাহতের ঘটনা নেই। তাহলে আ’লীগ সরকারের অধীনে খারাপ নির্বাচন কীভাবে বলবেন? বিএনপির রূপকল্প-২০৩০ নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ঘোষণার পর দলটির কারও বক্তব্যে আর এ নিয়ে কথা নেই। এসব বিএনপির স্টান্টবাজি। আওয়ামী লীগের ভিশন-২০৪১ ঘোষণার পর এ নিয়ে দলীয় প্রধানসহ সব নেতারা এ নিয়ে কথা বলছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৮ সালে এসে ২০০১ সালের নির্বাচন চায়। গণতন্ত্রের নিয়ম জলাঞ্জলি দিয়ে বারবার তত্ত্বাবধায়কে কেন যাব। কাদের বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অনেক উন্নত দেশের এখন হিংসা হয়। উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিক বিবেচনায় বাংলাদেশকে ‘ইকোনমিক টাইগার’ বলা হয়। বাংলাদেশ দিন দিন এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে ভুলের মাশুল দিচ্ছে। দেশের অপর রাজনৈতিক দলগুলো তো ভোটে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি প্রয়োজন ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছে। পরিস্থিতিই বলবে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন আছে কিনা।
বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের বিশ্বাসঘাতক নেতাকর্মীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সবাইকে এক হয়ে দলের পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে সাম্প্রতিক সিলেট সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়, নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তবে ওই বৈঠক নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি সেতুমন্ত্রী।
যুগান্তর