১৩ই আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় লেফট হ্যান্ডার্স ডে বা বাঁহাতি দিবস।

আভা ডেস্ক : কোন মানুষকে বাম হাতে লিখতে বা কাজ করতে দেখলে আমাদের অনেকের মধ্যেই বিস্ময় কাজ করে। বিশ্বে বাঁহাতি মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ার কারণেই হয়তো।

এসব মানুষকে উৎসর্গ করে প্রতিবছর ১৩ই আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় লেফট হ্যান্ডার্স ডে বা বাঁহাতি দিবস।

এ দিনের প্রতিপাদ্য, বাঁহাতিরা যেন তাদের এই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। এছাড়া প্রতিদিনের চলার পথে এই বাঁহাতিরা যেমন সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

এ বছর ছিল দিবসটির ২৯তম আসর। যদিও বাংলাদেশে তেমন কাউকেই এই দিবস পালন করতে দেখা যায় না।

বাম হাতের ব্যবহার নিয়ে সমাজে নানা নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত থাকায় এখানকার বেশিরভাগ বাঁহাতি মানুষকে ছোটবেলায় পরিবারের কারো না কারো চাপে ডান হাতে কাজ করা শিখতে হয়েছে।

তাদেরই একজন কলেজ শিক্ষার্থী নাফিসা নাওয়ার। ছোটবেলা থেকেই বাম হাতে সব কাজ করার অভ্যাস তার। পরিবারের সবাই ভেবেছিলেন নাফিসার যমজ বোনের যেহেতু এমন অভ্যাস নেই তাহলে হয়তো সে বড় হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

তবে নাফিসা লেখালেখিও বাম হাতে শুরু করায় চিন্তায় পড়ে যান তার বাবা মা। মেয়েকে ডান হাতে কাজ শেখানোর ব্যাপারে বাধ্য হয়ে আলাদা শিক্ষক নিয়োগ করেন তারা।

মিস নাফিসা বলেন, “ছোটবেলায় যখন বাসার সবাই দেখলো যে আমি বাম হাতে লেখালেখি করি, তখন আমার জন্য আলাদা টিচার রাখা হয়েছিল যেন আমি ডান হাতে লেখা শিখতে পারি। সবাই ডান হাতে লেখে আমি বাম হাতে লিখি। এটা একটু অন্যরকম দেখায়। তবে আমার টিচার রেখে কোন লাভ হয়নি। আমি বাম হাতেই লিখি। যেহেতু এটা আমার হ্যাবিট।”

গৃহিনী আফরোজা সুলতানা লুসিও এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। পারিবারিক ও সামাজিক প্রথার কারণে তাকে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

“আমার মা আমাকে লেখাটা ডান হাতে শিখিয়েছেন। কিন্তু আর বাকি সব কাজ আমি বাম হাতেই করি। এ নিয়ে আশেপাশের মানুষ, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী অনেক কিছু বলতো যে, মেয়ে বাম হাত দিয়ে কেন কাজ করে, ডান হাতে কাজ করা কেন শিখে না। বড় হলে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন কী বলবে? আসলে আগেকার মানুষতো, পারিবারিকভাবে যে বাধা আসে আর কি।” বলেন আফরোজা লুসি।

সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধ্যান ধারণা, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে পরিবারগুলোতে এ ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয় বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।

তিনি বলছিলেন, সামাজিকভাবে সালাম দেয়া, খাবার খাওয়া বা লেখালেখির মতো কাজগুলোয় ডান হাত ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, নোংরা কিছু ধরতে বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করা হয় বাম হাত দিয়ে।

“ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে একটা ধারণা দেয়া হয় যে, পবিত্র কাজগুলো করতে হবে ডান হাত দিয়ে আর নোংরা আবর্জনার সংস্পর্শে এলে সেটা করতে হবে বাম হাত দিয়ে। প্রচলিত এসব ধ্যান ধারণার কারণে বাম হাতের কাজগুলো ডান দিয়ে করাকে অনেকে অসম্মান বা অভক্তি মনে করতে পারে। এজন্য অনেকে বাঁহাতি হিসেবে জন্মালেও পরবর্তীতে তাদের জোর করে ডান হাতে কাজ কিছু করতে বাধ্য করা হয়। এতে সে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।”-বলেন রুমানা হক।

গত বছরের এক হিসেবে দেখা গেছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি।

সম্প্রতি প্লজ জেনেটিকস জার্নালে প্রকাশিত ম্যাশবলের একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানুষ বাঁহাতি হবে কিনা সেটা নির্ভর করে জীনের ওপর।

এ কারণে বাবা-মা দুজনই যদি বাঁহাতি হন তাহলে তাদের সন্তানদের বাঁহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে মনরোগবিদ ড. মেখলা সরকার বলেন, বাম হাতিরা মস্তিষ্কের ডান প্রকোষ্ঠের ব্যবহার বেশি করেন, যেখানে যুক্তি, কারণ ও সৃজনশীলতার বিষয়গুলো প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।

অধ্যাপক রুমানা হকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন ড. মেখলা সরকার। তিনি বলছিলেন, জন্মগত অভ্যস্ততা পরিবর্তনে জোর দিলে শিশুদের ওপর কিছুটা মানসিক প্রভাব পড়তে পারে।

এক্ষেত্রে এ ধরণের অভ্যাস তৈরি করার তেমন কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।

“জেনেটিক্যালি বা জন্মগতভাবে একজন যখন বাম হাতি তখন আর এই অভ্যাসটাকে পরিবর্তন করার জন্য চাপ দেয়াটা অনুচিত। এতে খুব বড় কোন ক্ষতি হবে তা নয়, তবে একটা শিশু যখন বাম হাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, তখন যদি তাকে প্রতিনিয়ত বাধা দেয়া হয় তাহলে তার ওপর মানসিক প্রভাব পড়তে পারে। যে প্রকৃতিগতভাবে বাম হাতে অভ্যস্ত তাকে সেভাবে থাকতে দেয়াটাই ভালো। পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।”

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ মোজার্ট, চিত্রকর লিওনার্দো দি ভিঞ্চি, বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, দার্শনিক অ্যারিস্টটল, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অপ্রা উইনফ্রে কিংবা খেলার মাঠের জাদুকর লিওনেল মেসি।

সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের হলেও প্রতিষ্ঠিত এই তারকা ব্যক্তিত্বদের একদিকে দারুণ মিল রয়েছে। আর সেটা হলো তারা সবাই বাঁহাতি।
বিবিসি বাংলা

Next Post

পদ্মা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়।

সোম আগস্ট ১৩ , ২০১৮
বাঘা প্রতিনিধি: ভাঙনে পদ্মা নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়। ফলে ঠিকানাহীন হয়ে পড়েছে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী। ১০ দিনেও বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। এছাড়া বিদ্যালয় ছুটিও ঘোষণা করা হয়নি। ফলে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে এসে এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করে বাড়ি চলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষক কর্মচারীরাও প্রধান শিক্ষকের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links