আভা ডেস্কঃ ছেলেটির নাম ইয়াসিন। বয়স মাত্র ০৭ বছর। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল। পিতৃহারা এই ছেলেটি টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আদারকল এলাকায় তার মায়ের সাথে থাকে। গত ১৩ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ তারিখ সকালে সে বাসা থেকে বের হয়ে টঙ্গী রেলস্টেশনে যায়। এরপর সে রেলে চড়ে চলে যায় কমলাপুর রেলস্টেশনে। তারপর কমলাপুর-সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা নাগাদ কামরাঙ্গীরচর থানাধীন মাদবর বাজার এলাকায় পৌঁছায়। একপর্যায়ে পথহারা শিশুটি তার মায়ের কাছে ফিরে যাবার জন্য কাঁদতে শুরু করে।
খবর পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ছেলেটিকে থানায় নিয়ে আস এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে শিশুটিকে তার প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের জন্য কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় আশপাশের বিভিন্ন থানায় বার্তা প্রেরণ করে। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেটির ছবিসহ প্রাপ্তি সংবাদ ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকে।
অন্যদিকে ছেলেটির মা শামসুন্নাহার (৩৫) তাঁর ছেলেকে না পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করে খুঁজতে থাকেন। এমনিতেই তিনি গত বছরের মার্চে স্বামীকে হারিয়েছেন। দুই ছেলেমেয়ে লিমা (১২) ও ইয়াসিন(৭)- কে নিয়ে ছোট সংসার। টঙ্গীর দাদা গার্মেন্টসে চাকুরী করে অনেক কষ্টে সংসার চালান তিনি। বুকের মানিক পুত্রসন্তানকে আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে স্থানীয় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।
কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে দুইদিন যাবৎ অপেক্ষায় থাকলেও কোন প্রকৃত অভিভাবক ছেলেটির সন্ধানে থানায় যোগাগোগ করেনি। এরমধ্যে থানার পুলিশ সদস্যরা শিশুটির সাথে গল্পের ছলে কথা বলতে বলতে জানতে পারে যে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে গেলে সে তার বাসায় যেতে পারবে। একথা জানতে পেরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে কামরাঙ্গীরচর থানার একটি টীম শিশুটিকে নিয়ে ১৬ এপ্রিল, ২০২১ খ্রিঃ সকালে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর তারা ছেলেটির কথামতো টঙ্গী রেলস্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে তারা আজমপুর এলাকায় পৌঁছে ছেলেটির প্রদত্ত ঠিকানা সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে। স্থানীয় লোকজনের নির্দেশনা অনুসরণ করে কামরাঙ্গীরচর থানার টিমটি সন্ধ্যার দিকে টঙ্গীর আটারকল পাগাড়পাড় এলাকায় গিয়ে শিশুটির মাকে খুঁজে পায়। এরপর টঙ্গী পূর্ব থানার সাথে সমন্বয় করে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় ছেলেটির মায়ের কাছে তার বুকের মানিককে বুঝিয়ে দেয়।