আভা ডেস্ক : স্বরূপকাঠিতে কর্মসৃজন প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির ৩০ দিনের কাজ শেষ হয়েছে ১৬ জুন। কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গেলেও দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক এখন পর্যন্ত তাদের বেতনের টাকা হাতে পাননি। ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৩টির (বলদিয়া, দৈহারী ও জলাবাড়ি) শ্রমিকরা ৩০ দিন কাজ শেষে মাত্র ২৪ দিনের মজুরির টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারছেন। আটঘর কুড়িয়ানা ইউপি সদস্য বাবুল মণ্ডলসহ বেশ ক’জন প্রকল্প চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন মজুরির টাকা তুলতে শ্রমিকদের হাজিরার তালিকা ও জবকার্ড পিআইও অফিসে জমা দিয়েছেন তারা। কিন্তু উপসহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও ক্লিয়ারেন্সের অভাবে যথাসময় শ্রমিকরা তাদের বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। তবে উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম হোসেন ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৭টি ইউপির তালিকা তারা হাতে পেয়েছেন। তাও পেয়েছেন গত ১৬ জুনের পরে এবং যাচাই-বাছাই সেরে সেগুলো ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিন ইউপির প্রকল্প চেয়ারম্যানরা এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের হাজিরার তালিকা অফিসে জমা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি সদস্য ও সিপিসি অভিযোগ করেন কাজে অনুপস্থিত থাকা শ্রমিকদের বেতনের টাকা তুলে ভাগবাটোয়ারা করা নিয়ে (কাজ না করলেও অনুপস্থিত শ্রমিককে কাজে উপস্থিত দেখানো এবং তার বেতন তোলার ব্যবস্থা করা নিয়ে) মতানৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় সহকারী প্রকৌশলী জবকার্ডে স্বাক্ষর দিতে দেরি করেন। প্রতিটি প্রকল্পে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক অনুপস্থিত থাকে এবং তাদের হাজিরা দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতে প্রকল্প চেয়ারম্যান ও অফিস সংশ্লিষ্টরা নানা ধরনের দেনদরবার করতে সময় পার করেন। সারেংকাঠি ইউপির এক ইউপি সদস্য জানান, ৪০ দিনের এ প্রকল্পে এবার কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ দিন। বাকি দশ দিনের টাকা ভাগাভাগি করার কৌশল নিয়ে দেন-দরবার করতে জুলাই মাসও পার হয়ে যাচ্ছে। এদিকে শ্রমিকদের কাজের ওপর সরকারি নন ওয়েজ কস্ট হিসেবে প্রকল্পের অনুকূলে ১০ ভাগ অর্থ বরাদ্দ আসে। ওই দশভাগ টাকা নির্ধারিত কাজে ব্যবহার না করে সিপিসি এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও অফিস সংশ্লিষ্টরা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩৮টি প্রকল্পে ২১৯৫ জন শ্রমিক দিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের ৪০ দিনের কাজ শুরু হয় ২৮ এপ্রিল। পিআইও দফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তিনি এবং পিআইও মিলে দু’জনের পক্ষে প্রায় অর্ধশত প্রকল্পের কাজ নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হয় না। সে কারণে ন্যাশনাল সার্ভিসের নিয়োগ দেয়া কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি প্রকল্পের শ্রমিকদের হাজিরা মিলিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিলে স্বাক্ষর দিতে কিছু দেরি হচ্ছে। সিপিসিরা ভুয়া শ্রমিক দেখাতে পারে না বলে নানা ধরনের প্যাচ লাগিয়ে অপপ্রচার চালায় বলে তিনি দাবি করেন। গত অর্থবছরের দুই কিস্তিতে অনুপস্থিত থাকা শ্রমিকদের বেতনের কত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত গেছে, জানতে চাইলে ওই প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. ইস্রাফিল হোসেন কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি।
যুগান্তর