সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার নিহতের তথ্য দিল যাত্রী কল্যাণ সমিতি

আভা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত হয়েছে। সে সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৩৯ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি রোববার বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।

সড়ক ছাড়াও ২০২১ সালে রেলপথে ৪০২ দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত, নৌ-পথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৫৭৮ জন আহত এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০২১ সালে দেশের সড়ক, রেল, নৌ-পথে ৬ হাজার ২১৩টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫১৬ জন নিহত এবং ৯ হাজার ৭৫১ জন আহত হয়েছে।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্ষিক এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি জানান, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রগুলোতে প্রচারিত-প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

দেখা গেছে এসব দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৩৫০ জন চালক, ১ হাজার ৭১৫ জন পথচারী, ১ হাজার ১৭ জন পরিবহণ শ্রমিক, ৪৩০ জন শিক্ষার্থী, ১১১ জন শিক্ষক, ২৩৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ৭৬ জন নারী, ৬৩৮ জন শিশু, ৪২ জন সাংবাদিক, ১৪ জন আইনজীবী, ১৮ জন প্রকৌশলী এবং ১৬১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রাকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনায় বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতি জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ।

এসব হতাহতের ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ১৫ থেকে ৪৫ বছরের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৫৫৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭১ জন নিহত ও ৯২২ জন আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৫৬ জন নিহত ও ৭৫০ জন আহত হয়েছে। মার্চে ৫০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৪৬ জন নিহত ও ৮৫৬ জন আহত, এপ্রিলে ৪৩২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৮ জন নিহত এ ৫০৭ জন আহত হয়েছে।

মে মাসে ৫৯৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৫ জন নিহত, ১ হাজার ৮ জন আহত, জুনে ৪৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৬ জন নিহত, ৭৬২ জন আহত, জুলাইয়ে ৪১৬টি দুর্ঘটনায় ৪৬৫ জন নিহত, ৬৬৯ জন আহত, আগস্টে ৪০৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩২ জন নিহত ও ৬১৬ জন আহত হয়েছে।

সেপ্টেম্বর এই সংখ্যা ৪০৫টি দুর্ঘটনায় ৪৪১ জন নিহত ও ৭৩৫ জন আহত, অক্টোবরে ৪৭৪টি দুর্ঘটনায় ৫০৬ জন নিহত ও ৭৫৮ জন আহত, নভেম্বরে ৪৩২টি দুর্ঘটনায় ৪৬৩ জন নিহত ও ৭০৫ জন আহত এবং ডিসেম্বরে ৪৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৩ জন নিহত এবং ৭৫১ জন আহত হয়েছে।

সংগঠনের মহাসচিব জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭৩০টি যানবাহনের পরিচয় গণমাধ্যমে পাওয়া গেছে। যার ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, লরি ও কাভার্ডভ্যান; ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল; ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাস; ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা; ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা; ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ কার ডিপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ০৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬ দশমিক ২১ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৫৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৮৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বেপরোয়া গতি; বিপদজনক ওভারটেকিং; রাস্তাঘাটের ত্রুটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো; রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ।

এ ছাড়া রয়েছে ছোট যানবাহন বৃদ্ধি; সড়কে চাঁদাবাজি; রাস্তার পাশে হাট-বাজার; ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো এবং দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহনের দিকে ঝুঁকে পড়া।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ০.৭৯ শতাংশ মোটরসাইকেলে, ০.৭৬ শতাংশ কার-জিপ মাইক্রোবাসে, ০.২১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতে ৮৫ দিন গণপরিবহন থাকায় ২.৩৬ শতাংশ বাস দুর্ঘটনা, ১ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা দুর্ঘটনা, ০.৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইকে দুর্ঘটনা কমেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হয়েছে। ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালে ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কাছে ১২ দফা সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি।

আরেক সংগঠন বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, দেশে ২০২১ সালে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭৮টি, যাতে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২১৪ জনের।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আব্দুল হক, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটনসহ অনেকেই।

Next Post

মেয়র লিটনের সুস্থতা কামনায় কৃষক লীগের দোয়া মাহফিল

রবি জানু. ২৩ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের  মেয়র জননেতা এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন করোনায় (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর সুস্থতা কামনা করে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে আজ রবিবার বাদ আসর কুমারপাড়াস্থ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links