সাপাহারে গ্রামাঞ্চলে হারিয়ে গেছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি

নয়ন বাবু, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এক কালের কৃষাণ-কৃষানীর ধান ভাঙ্গার প্রধান অস্ত্র ঢেঁকি। অতীতে বাংলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে ভাতের চাউল তৈরীর জন্য কিংবা চালের আটা ভাঙ্গার জন্য ঢেঁকি পাতানো ছিল। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে আগেকার দিনের সেই ঢেঁকি।
৯০ দশকের দিকে সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর মানুষ তাদের সারা বছরের ভাতের চাউল বাড়িতে পাতানো ঢেঁকিতে ছেটে প্রস্তুত করত এবং ভাদ্র মাসে ও প্রতিটি পরবে তালের বড়া, পিঠা খাওয়ার জন্য বাড়িতে বাড়িতে আটা কোটার ধুম পড়ে যেত। আমন ধান কাটা শেষে পৌষ, মাঘে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দে অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হত। চাউল কোটার জন্য মহিলার পাশাপাশি পুরুষরাও ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে থাকত। দুইজন মহিলা ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ঢেঁকির আগায় বসে শুকনো ধানগুলিকে ভাঙ্গার গর্তে এগিয়ে দিত। এভাবেই সারা রাত ধরে গ্রামের গৃহবধুরা তাদের সারা বছরের চাউল ঢেঁকিতে ছেটে মাটির কুঠি কিংবা বাশেঁর তৈরী ডোলে ভরে সংরক্ষন করে রাখত। সে সময় ঢেঁকি ছাটা চাউলের ভাত খেয়ে অধিকাংশ মানুষই সুস্থ্য জীবনযাপন করত। বর্তমানে আধুনিক যুগে চাকচিক্কের আধিক্যে হারিয়ে গেছে সেই ঢেঁকি ছাটা চাউল।
এখন পাড়ায় পাড়ায় ধান ভাঙ্গা হাসকিং মিল এমনকি ভ্রাম্যমান মিল প্রতিটি বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধান ভেঙ্গে দেয়ায় ঝকঝকে চাউল ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় কোথাও আর চোখে পড়েনা এই ঢেঁকি। চাউলের আটা তৈরীর জন্য কিছুদিন পূর্বে কয়েকটি পাড়া মিলে দু’একটি ঢেঁকি চোখে পড়লেও এখন শুকনো ভেজা উভয় প্রকার চাউলের আটা মেশিনে তৈরী হওয়ায় আদিকালের সেই ঢেঁকি উপজেলার কোন গ্রামেই খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে আদিমকালের ঢেঁকি খুজতে বের হয়ে সারা উপজেলা খুজে অবশেষে উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বকুল হোসেন এর উঠানে একটি ঢেঁকি পাতানো দেখতে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ঢেঁকির মালিক বকুল জানান, মেশিনের তৈরী আটা দিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু খাবার জিনিষ তৈরী করা যায়না, তৈরী করতে গেলে নষ্ট হয়ে যায় তাই সে তাদের উঠানে ঢেঁকিটি পেতে রেখেছেন বছরে দু-এক বার নিজেরা ও পাড়ার অনেকেই এই ঢেঁকিতে এসে আটা তৈরী করে থাকে। তবে আগেকার দিনের মত ঢেঁকির আর আদর কদর নেই কোন দিন হয়ত সেও ঢেঁকিটি তুলে ফেলবেন তার কোন ঠিক নেই।
বর্তমান যুগে কালের আবর্তনে গ্রাম বাংলার হতে হারিয়ে গেছে সেই পুরনো দিনের গুরুত্বপুর্ন কাঠের তৈরী ঢেঁকি। আর কিছু দিন পরে নতুন প্রজম্ম হয়ত ঢেঁকির কথা শুনলে বলবে সেটি কি জিনিষ তা বুঝানো মুশকিল হয়ে পড়বে তাই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিকে স্মরণ করাতে হলে জাতীয় যাদু ঘরে ঢেঁকি সংরক্ষন করে রাখা উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

Next Post

গাইবান্ধায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ফাংশনালাইজেশন বিষয়ে কার্যক্রম অনুষ্ঠিত

রবি সেপ্টে. ২ , ২০১৮
মশিউর রহমান : গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রঘুনাথপুর এম.এস. উচ্চ বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ফাংশনালাইজেশন বিষয়ে কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো.নজরুল ইসলামের এর সভাপতিত্বে( ১ সেপ্টেম্বর ) শনিবার সকাল ১১ টায় অত্র বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবরেটরিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ফাংশনালাইজেশন কার্যক্রমে প্রশিক্ষক […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links