বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সান্তাহারের যে প্লাস্টিক কারখানায় পাঁচ শ্রমিক আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন, সেটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছিল।
প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর পরিবেশ অধিদপ্তর এখন বলছে, অনুমতি ছাড়া পণ্য উৎপাদন অনুচিত। জেলা প্রশাসন বলছে, তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিআইআরএস নামের কারখানাটি যাত্রা করে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এখানে ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস তৈরি করা হতো।
ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানাটি এতদিন কীভাবে চলছিল, জানতে চাওয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক সুফিয়া নাজিমের কাছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছিলাম, যাতে সেখানে কারখানা করা যায়। কিন্তু সেখানে কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদনের ছাড়পত্র আমরা দিইনি। তবু কারখানাটি চলছিল, যা উচিত নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) আবেদনের পর উচ্চ আদালত কারখানাটিকে ওয়ান টাইম প্লেট উৎপাদন বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করেনি কর্তৃপক্ষ। আইন অনুযায়ী, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
কারখানাটির মালিকানা চারজনের। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন সান্তাহার পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টো। ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাড়পত্র নেয়ার জন্য টাকা জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা নেয়নি দপ্তরটি। অনেক কারাখানা চলছে নানাভাবে। মাত্র এক বছর থেকে কারাখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছি। অন্যন্য সব কাগজপত্র আছে। ছাড়পত্রের কাজটিও খুব দ্রুত করে ফেলতাম।’
তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, ‘আগুনে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কারাখানার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ অনেক কিছু পুড়ে গেছে। অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আর কী বলব বলেন।’
সান্তাহারের কারখানাটিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগে। দুপুরের দিকে কারখানার ভেতর থেকে পাঁচজনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
তাদের মরদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে।
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এ কে এম মোর্শেদ বলেন, ‘কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা বলা সম্ভব না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল বলেন, ‘আমি কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’