প্রেসবিজ্ঞপ্তি : সংবাদ প্রকাশের জের ধরে রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক দৈনিক উপাচার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নূরে ইসলাম মিলন ও উপাচার পত্রিকার প্রতিবেদক জামি রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব। মামলার বাদি সাংবাদিকের নামে মামলা করার পরামর্শ সাংবাদিকদের মধ্য থেকে দেয়া হয়েছে বলে যে অসত্য দাবি করছেন তা সত্যিই দুঃখজনক ও লজ্জ্বাজনক। কেননা রাজশাহীসহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ যখন গণমাধ্যম বিরোধী এই আইনটি বাতিলের জন্য সোচ্চার তখন এমন দাবি ভিত্তিহীন ও নিজের হীন স্বার্থ উদ্ধারের অপতৎপরতা বলে প্রতিয়মান হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী, প্রেস ইনস্টিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মহাপরিচালক ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দৃষ্টতাপূর্ণ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রাখা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত বৃত্তির টাকা তার পত্রিকার ৮ জন সাংবাদিককে দিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে স্থানীয় ১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. শরিফ উদ্দীন শাস্তি দাবি করেছেন।
ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০০৩ সালে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণমাধ্যম সোনালী সংবাদের সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী ‘খুনী মুজিবুর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাই’- এমন বক্তব্য দেন। সেসময় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এমন স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী মহানগরের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিরলর (জামুকা) সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান। প্রতিবাদের ফলে তোপের মুখে পড়ে উপস্থিত সুজন সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এছাড়া লিয়াকত আলী রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত বৃত্তির টাকা তার পত্রিকার ৮ জন সাংবাদিককে দিয়ে উত্তোলন করেছে। সরকার থেকে গরীব ছাত্রদের জন্য দেয়া এ টাকা পত্রিকার সাংবাদিকদের উত্তোলন করা শুধু নিন্দনীয় নয়, গুরুতর অপরাধও বটে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের আমলে এ ঘটনা কীভাবে ঘটলো তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
স্মারকলিপির সূত্র ধরে দৈনিক উপচার পত্রিকার অনলাইন, স্থানীয় দৈনিক রাজশাহীর আলো পত্রিকা, জাতীয় দৈনিক ইংরেজি দা ডেইলি বাংলাদেশ পোষ্ট, অনলাইন বিটিসি নিউজ ,উত্তরবঙ্গ প্রতিদিন, মহানন্দা নিউজসহ একাধিক অনলাইনে প্রকাশিত হয়। এছাড়া সেই দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও রাজশাহী আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমানের গণমাধ্যমকে দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলীর রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর ৭/৮ দিন পর গত ০৩ জুন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালে দৈনিক উপচার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নূরে ইসলাম মিলন ও প্রতিবেদক জামি রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩৫ ধারায় মামলা করেছেন লিয়াকত আলী।
রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা এক যুক্ত বিবৃতিতে একজন গণমাধ্যমের ব্যক্তি হয়ে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধের মামলা দায়েরের ঘটনায় তিব্র ক্ষোভ প্রকার করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, কোন সংবাদকে কেন্দ্র করে নয়, বরং দৈনিক সোনালী সংবাদ সম্পাদক লিয়াকত আলীর একটি বক্তব্যকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ তুলে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির দাবি করেন। বিষয়টির সঠিক তদন্তের দাবি রাখে। কিন্তু তিনি তদন্তের পথে না হেঁটে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছেন এবং মামলা করার পরামর্শ সাংবাদিকরা তাঁকে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তা রীতিমত উদ্বেগজনক। গণমাধ্যম কখনও কোন ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার হতে পারে না। এ ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।