সরকারী বই বিক্রিতে শিক্ষকরাই জড়িত।

আভা ডেস্ক: প্রতি বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করে সরকার। কিন্তু বিনামূল্যে সরবরাহ করা এসব বই নিয়েও চলছে বাণিজ্য। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এসব বই বিক্রি করে দিচ্ছেন একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক। সরকারি বই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির এসব ঘটনায় গত চার মাসে ১০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে তিনজনই প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত বই তুলছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগও জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। পরে ওইসব স্কুলের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। এরই মধ্যে তারা একটি স্কুলের অনিয়মের অনুসন্ধান শেষে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক ভবেন্দ্র নাথ বাড়ৈ এবং অডিট কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমানের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনটি গত এপ্রিলে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। চাহিদাপত্র, সরকারি বই গ্রহণের চালান, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের রেজিস্টার পর্যালোচনা করে খিলগাঁও গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারি বই বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪২৫। কিন্তু ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন মিলন তার স্কুলে ৩ হাজার ৫৬৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা অফিসে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য একটি চাহিদাপত্র পাঠান। সেই চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে ৩ হাজার ৫৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই সংগ্রহ করেন তিনি। পরে ৪২৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে সরকারি বই সরবরাহ শেষে বাকি ৩ হাজার ১৩৫ সেট বই রাজধানীর ১৩টি বেসরকারি স্কুলের কাছে বিক্রি করে দেন ওই প্রধান শিক্ষক। বেসরকারি এ স্কুলগুলো হচ্ছে— সানলিট পাবলিক আইডিয়াল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা মডার্ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাইস্কুল, আলরাজি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল বিদ্যানিকেতন, মেধাবিকাশ কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাই স্কুল, প্রাইম স্কুল, ইস্ট ওয়েস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেরিট মডেল-ই-স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইডেন স্কুল, জাগরণী বিদ্যানিকেতন ও সেন্ট্রাল মডেল স্কুল।

পরে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আটক করে র্যাব। এ সময় তার হেফাজত থেকে কয়েক হাজার সেট সরকারি বই উদ্ধার করা হয়। পরে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই প্রধান শিক্ষককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।

এ বিষয়ে র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, সরকারি স্কুলের কতিপয় শিক্ষক বিভিন্ন সময় বিনামূল্যে সরবরাহ করা বই বেসরকারি স্কুলের কাছে বিক্রি করে থাকেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই খিলগাঁওয়ের গোড়ান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমাণ বই জব্দ করা হয়েছে। এ রকম বেশ কয়েকটি স্কুলের এমন অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এসব স্কুলে পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোয়ও সরকারি বই বিতরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণীর সরকারি বই কালোবাজারে বিক্রির ঘটনায় নড়াইলের লোহাগড়ার শালনগর মডার্ন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মহিউদ্দিনসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মহিউদ্দীন ঘটনার দিন দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ৩২০ কেজি বই ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। বইগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণীর ২০১৮ ও ২০১৭ সালের।

পার্শ্ববর্তী লাহুড়িয়া বাজারের ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী ও বইয়ের ক্রেতা ইকরামুল বিশ্বাস ও লাল চাঁদ ওইদিনই রাত ৯টার দিকে বিদ্যালয় থেকে ওই বই নিয়ে যায়। এ সময় এলাকাবাসী মণ্ডলবাগ বাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে বইগুলো জব্দ করে শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান তসলুর রহমানের জিম্মায় রাখে।

স্কুলের মতো মাদ্রাসাগুলো থেকেও সরকারি পাঠ্যবই বাইরে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। ১৬ এপ্রিল পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় মাদ্রাসায় দেয়া সরকারি বই বিক্রির অভিযোগে এক মাদ্রাসা সুপারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার রফিকুল ইসলাম উপজেলার ব্যাসকাঠি-পাটিকেলবাড়ী নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার। এ ঘটনায় নেছারাবাদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো. আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে মামলা করেন।

মাধ্যমিকের মতো প্রাথমিকের বই বিতরণেও ঘটছে ব্যাপক অনিয়ম। ঝালকাঠির রাজাপুরের ৮৫ নং উত্তর কাঠিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস্কেন্দার আলী ফরাজির বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রায় ৩০০ সেট বই বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে বইগুলো বিক্রির পর তা নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী বইগুলো জব্দ করে এবং স্থানীয় ইউএনওকে অবহিত করে।

অনলাইন

Next Post

ডিজিটাল প্রশ্ন পত্র করার সুপারিশ জেলা প্রশাসকের।

বৃহস্পতি জুন ২১ , ২০১৮
আভা ডেস্ক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ডিজিটাল প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপা, সংরক্ষণ ও পরীক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও জনবল বাড়ানোসহ আরও নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে যশোরের জেলা প্রশাসন। গত […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links