শেখ হাসিনা বলেন, “ঘুষ যে গ্রহণ করবে আর ঘুষ যে দেবে উভয়েই অপরাধী।

আভা ডেস্কঃ দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ শতভাগ ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ নয়।

দুদক কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতির জনশ্রুতি যাতে না ছড়ায় সেজন্য তাদের আরও সচেতন হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকা শীর্ষ পর্যায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তার দুদকের এক কর্মকর্তাকে ‘৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার’ দাবি নিয়ে আলোচনার মধ্যে বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ঘুষ যে নেবে, আর যে দেবে দুজনকেই আইনের আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রথমেই সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীকে দুদক নিয়ে প্রশ্ন করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ বেগম রওশন আরা মান্নান।

দুর্নীতি দমন নিয়ে করা তার প্রশ্নের মধ্যে ছিল, “কিন্তু এখানে দেয়া যায় যে, দুর্নীতি দমন কমিশন এককভাবে কাজ করিতেছে। তাহাদের নেই তেমন কোনো আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ লোকবল এবং জনবল সংকট তো রহিয়াছেই। ইহা ছাড়া এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলিয়া জনশ্রুতি আছে।”

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত জবাব আসার পর সম্পূরক প্রশ্নে রওশন আরা প্রশ্ন থেকে ‘ইহা ছাড়া এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলিয়া জনশ্রুতি আছে’ কথাটি বাদ দিতে স্পিকারকে অনুরোধ করেন সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।

দুদককে ‘স্পর্শকাতর’ সংস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।”

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি যে, কথাটা লিখেছেন এটা ঠিকই লেখা আছে। এটা এমন কিছু না। এটা বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।“তার কথার মধ্যে কিন্তু এই জিনিসটা আছে যে জনশ্রুতি আছে। তিনি যে করছেনই এই ধরনের কথাটা কিন্তু নাই। এ কারণে আমার মনে হয়, এ কথাটা বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রয়োজন নাই এ কারণে যে, এ কথা একেবারে কিন্তু মিথ্যা না। আর সবাইতো একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা না। আর এই গ্যারান্টি তো কেউ দিতে পারবে না যে, সবাই একেবারে একশভাগ ধোয়া তুলসি পাতা হবে।”

দুদকের কর্মকর্তা-কর্মীদের আরও সচেতন হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইহা ছাড়া এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলিয়া জনশ্রুতি আছে। তো ঠিক আছে, আমি মনে করি এই সংস্থাকে এখন থেকে সচেতন হতে হবে বা যারা কাজ করবে তাদেরও সচেতন হতে হবে যে তারা যেন এমন কিছু না করেন যাতে এই ধরনের জনশ্রুতি সৃষ্টি হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আর এখানে একটা ব্যাপার আছে, দুর্নীতি দমনই বলেন বা যে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই বলেন বা অনেক অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এমন এমন বড় বড় জায়গা আছে যে যেখানে হাত দিলেই মনে হয় যেন হাতটা পুড়ে যাচ্ছে। মানে যারা এই কাজটা করতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়। আর কিছু পত্র-পত্রিকাতো আছেই, সাথে সাথে এদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করে।

“আমি নিজে মনে করি, আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা যে, সঠিক কাজটা করেছেন কি না সেটা দেখে তারপরে বিচার করা। কোন পত্রিকায় কী লিখল বা কে কী বললো সেটাই কান দেওয়ার দরকার নাই।”

‘অপরাধী সে অপরাধীই’

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় রোজার মধ্যে আড়ং, পারসোনাসহ বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি করারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ধরনের অভিযানের চালানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “এই রোজার সময়, তখনও আমি দেশের বাইরে ছিলাম। বেশ কিছু বড় বড় জায়গায় একজন অফিসার হাত দিল বলে তার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা হঠাৎ করে নেওয়া হল।

“এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। বরং আমি আজকেও বলে দিয়েছি যে, তাকে আবার ওই দায়িত্বেই দিতে হবে। খুব নামি-দামি জায়গা, তাদের যে কোনো খারাপ কিছু হবে না বা থাকবে না যারা ওটার মালিক তারাওতো এই গ্যারান্টি দিতে পারবে না।”

শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, “সেখানে কেন পরীক্ষা করতে পারবে না, কেন সচেতন করতে পারবে না? এই অধিকারটা কেন থাকবে না?

“সাধারণ ছোটখাট সেগুলো ধরতে পারবে। আর বড় অর্থশালী, সম্পদশালী হলেই তাদের হাত দেওয়া যাবে না। তাদের অপরাধ অপরাধ না এটাতো হয় না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “অপরাধী সে অপরাধীই। আমার চোখে অপরাধী সমান।”

দুর্নীতি দমন নিয়ে রওশন আরা মান্নানের করা সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশ যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রযাত্রা শুরু করে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের টাউট, বাটপার বা বিভিন্ন ধরনের লোক সৃষ্টি হয়।

“তাদের দমন করা, এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা দিয়ে সম্ভব না। এটা সামাজিকভাবেও করতে হবে।”

জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি দমনের জন্য একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীকেও কাজে লাগানো হচ্ছে তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে কমিটি করে এ ধরনের অন্যায়কে যেন প্রশ্রয় দেওয়া না হয় সে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যদি কোনও ধরনের অপরাধের সাথে এমনকি আমার দলের কেউ যদি সম্পৃক্ত থাকে আমি কিন্তু তাদেরকে ছাড় দিচ্ছি না, ছাড় দেব না।

“শাসনটা ঘর থেকেই করতে হবে। সেটা করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবং এটা কিন্তু আরও অব্যাহত থাকবে।”

সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চলমান অগ্রযাত্রা এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে সম্মান পাচ্ছে সেটা অব্যাহত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

‘দুর্নীতি আমরা করব না, দুর্নীতি করতে দেব না’- এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “ঘুষ যে গ্রহণ করবে আর ঘুষ যে দেবে উভয়েই অপরাধী। সেটাই ধরে নিতে হবে। শুধুমাত্র ঘুষ নিলে তাকেই ধরা হবে তা নয়, যে দেবে তাকেও ধরা হবে। কারণ দেওয়াটাও অপরাধ। সেইভাবেই কিন্তু বিচার করতে হবে।”

অপরাধ যারা করে আর অপরাধে যারা উসকানি ও মদদ দেয় তাদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলা নিউজ

Next Post

মোহনপুরে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও অপহরণের দায়ে দুই জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

বুধ জুন ১২ , ২০১৯
মোহনপুর প্রতিনিধিঃ মোহনপুরে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও অপহরণের দায়ে দুই জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুন উপজেলার মৌগাছী পশ্চিমপাড়ার মফিজের ছেলে মুস্তাফিজুর (১৯) একই গ্রামের নবম শেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তুলে নিয়ে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links